‘বাবুই পাখিরে ডাকি, বলিছে চড়াই, কুঁড়ে ঘরে থাকি কর শিল্পের বড়াই, আমি থাকি মহাসুখে অট্টালিকা পড়ে, তুমি কত কষ্ট পাও রোদ, বৃষ্টি, ঝড়ে। বাবুই হাসিয়া কহে, সন্দেহ কি তায়? কষ্ট পাই, তবু থাকি নিজের বাসায়। পাকা হোক, তবু ভাই, পরেরও বাসা, নিজ হাতে গড়া মোর কাঁচা ঘর খাসা।’
কবি রজনী কান্ত সেনের কাল জয়ী ‘স্বাধীনতার সুখ’ ছড়াটি এখন শুধু বইয়ের পাতায় রয়েছে। বাবুই পাখির প্রধান আস্তানা গ্রাম বাংলার ঐতিহ্য তালগাছ যেমন দেখা যায় না, তেমিন দেখা মেলেনা বাবুই পাখির বাসা।
প্রচলিত আছে, তালগাছে বাসা অর্ধেক তৈরি হলে কাঙ্খিত স্ত্রী বাবুইকে পুরুষ বাবুই বাসা দেখায়। বাসা পছন্দ হলেই কেবল সম্পর্ক গড়ে। স্ত্রী বাবুই পাখির বাসা পছন্দ হলে বাকি কাজ শেষ করতে পুরুষ বাবুইয়ের সময় লাগে চার থেকে ছয় দিন।
স্ত্রী বাবুই পাখির প্রেরণা পেয়ে পুরুষ বাবুই পাখি মনের আনন্দে বিরামহীন কাজ করে বাসা বোনে। এরা তাল গাছেই বাসা বাধে বেশি। মাঝে মাঝে খেজুর গাছেও দেখা যেতো।
গ্রামের মাঠের ধারে, পুকুর কিংবা নদী পাড়ে- এক পায়ে দাঁড়িয়ে থাকা তাল গাছ হারিয়ে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে হারিয়ে গেছে আপন ঘর নির্মাণে ব্যস্ত শিল্পমনা বাবুই পাখির কিচির মিচির শব্দ।
গ্রাম বাংলায় এখন আর আগের মত বাবুই পাখির দৃষ্টি নন্দন বাসা চোখে পড়ে না। আগে জেলার বিভিন্ন এলাকায় বেশ দেখা যেত বাবুই পাখির বাসা।
কিন্তু পরিবেশ বিপর্যয়ের কারণে আজ এ পাখিটি আমরা হারাতে বসেছি। তাল গাছের কচি পাতা দিয়ে উঁচুতে চমৎকার বাসা বোনে বাবুই পাখি সেই বাসা দেখতে যেমন আকর্ষণীয় তেমনি মজবুত। প্রবল ঝড়েও তাদের বাসা ভেঙ্গে পড়েনা। বাবুই পাখির শক্ত বুননের এ বাসা টেনে ছেঁড়া যায় না।
এক সময় চাঁদপুর জেলার প্রায় সব খানেই দেখা যেতো শত শত বাবুই পাখির বাসা। এ সব গাছে বাসা বেঁধে বাবুই পাখি বসবাস করতো। ফুটিয়ে তুলতো শৈল্পীক নির্দশন।
এলাকা থেকে বড় আকৃতির তাল গাছ হারিয়ে যাওয়ার সাথে সাথে হারিযে যাচ্ছে বাবুই পাখি।