বাবার ছোট মেয়ে সাদিয়া। পাঁচ বোন। দুই বোন স্বামীর বাড়িতে। দুই বোন পড়াশোনা করছে। আর সাদিয়া সবেমাত্র একটি মাদ্রাসায় ভর্তি হলো। তার বাবা না ফেরার দেশে চলে গেল। মৃত্যু একটি বিশ্বাস যোগ্য শব্দ। সেটা বুঝার বয়স হয়নি সাদিয়ার। কিন্তু বাবার জানাজা শেষে দাফন হয়। তারপর দোয়া হয়। ওই মূহুর্ত পর্যন্ত সাদিয়া নিরবে জানাজার মাঠের এককোণে দাঁড়িয়ে।
সাদিয়ার বাবা আবু তাহের মিসবাহ। পেশায় একজন শিক্ষক। শখের বশে তিনি লেখালেখিতে জড়িয়ে পড়েন। হাজীগঞ্জ উপজেলা শহরের জনপ্রিয় সাপ্তাহিক মানবসমাজ পত্রিকায় সাংবাদিকতার হাতেখড়ি। হাজীগঞ্জ আল কাউসার মাদ্রাসার একজন শিক্ষক।
দীর্ঘ দিন তিনি নানান রোগে আক্রান্ত হয়ে চিকিৎসাধীন ছিলেন। সদায় হাস্যজ্বল মানুষটি পাঁচ কন্যা ও স্ত্রীসহ অসংখ্য শুভানুধ্যায়ীদের রেখে যান।
মানুষ আর জীবন। পরস্পর একটি শব্দ। সেই জীবন বেঁচে থাকা পর্যন্ত ছয়টি মৌলিক চাহিদার প্রধান খাদ্য। সাদিয়া ও তার পরিবারের মুখে খাদ্য দেয়ার একমাত্র যোগানদাতা ছিলেন আবু তাহের মিসবাহ। পরিবারের সূর্য-চাঁদ বলতে সবই ছিলেন তিনি। পরিবারের সেই আলোকবর্তিকা নিভে গেলে নিশ্চিত অন্ধকার।
সাদিয়ার ভবিষ্যত সেই অন্ধকারে। সাথে সাদিয়ার মা ও চার বোন। সাদিয়া হয়তো বাবাকে চিরতরে হারিয়েছে – সেটা উপলব্দি করতে পারেনি। দিনের আলো শেষে সন্ধ্যা ঘনিয়ে আসলে বাবা কেন আসেনা?- সেই প্রশ্ন ছুঁড়ে দিয়ে মা-বোনের চোখে টলমল জল ঝরাবে।
সোমবার দিবাগত রাতে আবু তাহের মিসবাহর ব্যবহৃত মুঠোফোন থেকে কল এসেছিল। সাইলেন্ট থাকায় ধরতে পারিনি। ভোরে ফজরের নামাজ পড়তে উঠে মোবাইল দেখে বুঝে গেলাম কোন বিপদ সংকেত।
নামাজ পড়েই মিসবাহকে শেষ বিদায় জানাতে বাড়ীতে হাজির। সাদিয়ার বোনদের ‘বাবা আর নাই গো’ বিলাপে কান্নাকাটিতে সমবেদনা জানানোর বাসা খুঁজে পাইনি।
শুধু সাদিয়াকে কোলে নিয়ে কিছুক্ষণ বসে ছিলাম তাহের মিসবাহর মৃতদেহের পাশে। দাফন শেষ পর্যন্ত ছিলাম। শেষের দৃশ্যটি ছিল সাদিয়ার। তড়িঘড়ি করে ক্যামেরা বন্দী করলাম সাদিয়ার ছবিটি।
সাদিয়ার অপূরণীয় শূন্যতা পূর্ণ হোক সমাজের স্নেহমাখা আদরে।
মনিরুজ্জামান বাবলু
লেখক : সাংবাদিক ও সাংস্কৃতিক কর্মী