ব্রাহ্মণবাড়ীয়ার বাঞ্ছারামপুর সাত বছরের এক শিশুকে অপহরণের পর মুক্তিপনের দাবিতে হত্যার ঘটনা ঘটেছে। সোমবার সকালে বাঞ্ছারামপুর থানায় সংক্রান্ত একটি সাধারণ ডায়েরীর ১০ ঘন্টার মধ্যে দুই অপহরণকারীকে আটক এবং অপহৃত শিশুটির মরদেহ উদ্ধার করেছে পুলিশ। চাঞ্চল্যকর এই ঘটনাটি ঘটেছে বাঞ্ছারামপুর থানাধীন দড়িয়াদৌলত ইউপিস্থ সুটকিকান্দি গ্রামে।
বাঞ্ছারামপুর মডেল থানার ওসি মোঃ নুরে আলম জানান, ফাতেহা আক্তার নামে সাত বছর বয়সী একটি কন্যা শিশু নিখোঁজ রয়েছে মর্মে সোমবার সকালে থানায় একটি সাধারণ ডায়েরী করেন দড়িয়াদৌলত ইউপিস্থ সুটকিকান্দি গ্রামের প্রবাস ফেরৎ বাছেদ মিয়া। ডায়েরীতে উল্লেখ করা হয় গত ৩০ সেপ্টেম্বর বাছেদ মিয়ার মেয়ে ফাতেহা আক্তার (০৭) তার দাদুর ঘর থেকে একা বের হয়ে গিয়ে আর ঘরে ফিরে আসেনি। পরে ২ অক্টোবর সোমবার সকালে কবিরাজ পরিচয় দিয়ে অপহৃত শিশু ফাতেহার মা রুমী আক্তারের ব্যক্তিগত মোবাইল নাম্বারের ইমুতে ফোন করে মেয়ের মুক্তিপন দাবি করে। রাত ১০টার মধ্যে মুক্তিপন বাবদ চার লাক্ষ টাকা না দিলে এবং পুলিশকে জানালে শিশু ফাতেহাকে মেরে ফেলার হুমকিও দেয়।
বাঞ্ছারামপুর মডেল থানার ওসি মোঃ নুরে আলম শিশু নিখোঁজ সংক্রান্ত সাধারণ ডায়েরীর বিষয়টি নবীনগর সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোঃ সিরাজুল ইসলামকে অবহিত করেন।
অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোঃ সিরাজুল ইসলাম জানান, তিনি ঘটনাস্থলে গিয়ে তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহার করে দ্রুততম সময়ের মধ্যে লাজিম ও আলাউদ্দিন নামে দুই অপহরণকারীকে আটক করতে সক্ষম হন এবং তাদের দেয়া স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দী অনুযায়ী অপহৃত শিশুটির মরদেহ উদ্ধার করতে সক্ষম হন।
এব্যাপারে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোঃ সিরাজুল ইসলাম আরো বলেন, শিশু নিখোঁজের বিষয়টির প্রতি গুরুত্ব দিয়ে ঘটনাস্থল বাঞ্ছারামপুর থানাধীন দড়িয়াদৌলত ইউপিস্থ সুটকিকান্দি গ্রামে ছুটে যাই। বিকেল সাড়ে ৪ টার দিকে ভিক্টিমের বাড়ীর পাশে বসে মোবাইল ফোন চালাচ্ছিলো লাজিম নামে এক যুবক, এসময় তাকে সন্দেহ হলে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয় এবং তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে তার মোবাইল ফোন থেকে আলাউদ্দিন নামে একজনের সাথে সন্দেহজনক কললিস্ট ও মুক্তিপন সংক্রান্ত ক্ষুদেবার্তা বিনিময়ের তথ্য পাওয়া যায়। পরে তাকে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ করলে সবকিছু স্বীকার করে। লাজিম এবং আলাউদ্দিন মুক্তিপণ আদায়ের লক্ষ্যে শিশু ফাতেহাকে অপহরণ করে। শিশু ফাতেহা তাদের দুজনকে চিনে বিধায় তাকে গলা টিপে হত্যা করে বাড়ীর অদূরে শুটকিকান্দি নদীতে কচুরিপানার নিচে লাশ গোপন করে রাখে। পরে তারা নিজেকে কবিরাজ পরিচয় দিয়ে চার লক্ষ টাকা মুক্তিপণ দাবি করে। রাত দশটার মধ্যে না দিলে কিংবা পুলিশকে জানালে শিশুটিকে মেরে ফেলার হুমকিও দেয়। লাজিমকে সাথে নিয়ে অপর অভিযুক্ত আলাউদ্দিনকে গ্রেপ্তার করা হয়। আসামীদ্বয়ের দেখানোমতে সোমবার রাত সাড়ে আটটার দিকে ভিকটিম ফাতেহা আক্তার এর মৃতদেহ বাঞ্ছারামপুর থানাধীন দড়িয়াদৌলত ইউপিস্থ শুটকিকান্দি নদীতে কচুরিপানার নিচ থেকে উদ্ধার করা হয়।
চাঞ্চল্যকর এ ঘটনার সাথে জড়িত লাজিম (১৮), দড়িয়াদৌলত গ্রামের রাজ্জাক মিয়ার ছেলে এবং আলাউদ্দিন (২১) শুটকিকান্দি গ্রামের মোমিন মিয়ার ছেলে। এদের বিরুদ্ধে থানায় মামলা রজু করা হয়েছে।
প্রতিবেদক: জাহাঙ্গীর আলম ইমরুল, ০৩ অক্টোবর ২০২৩
Chandpur Times | চাঁদপুর টাইমস Top Newspaper in Chandpur