বাজারে পেঁয়াজ ও আদার কোনো সংকট নেই। সরকারের পক্ষ থেকেও বলা হচ্ছে সরবরাহ স্বাভাবিক। রাজধানীর খুচরা বাজারেও ক্রেতারা চাহিদা মতোই পেঁয়াজ ও আদা কিনতে পারছেন। কিন্তু গুনতে হচ্ছে বাড়তি দাম।
মাসের ব্যবধানে দ্বিগুণ দাম বেড়ে প্রতি কেজি পেঁয়াজ সর্বোচ্চ ৯০ ও আদা ৪০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এতে বাড়তি দামের অন্য পণ্যের সঙ্গে এই দুই পণ্য কিনতে ক্রেতার নাভিশ্বাস বাড়ছে।
শনিবার সরকারি সংস্থা ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) পণ্য মূল্য তালিকা পর্যালোচনা করে দেখা গেছে-মাসের ব্যবধানে প্রতি কেজি দেশি পেঁয়াজের দাম ৪০ টাকা বেড়ে ৮০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। কেজিপ্রতি আমদানি করা পেঁয়াজের দাম বেড়েছে ৩৫ টাকা, এখন বিক্রি হচ্ছে ৮০ টাকায়।
পাশাপাশি প্রতি কেজি দেশি আদার দাম ১২০ টাকা বেড়ে ৩৪০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। আর আমদানি করা আদা মাসের ব্যবধানে ১৫০ টাকা বেড়ে ৪০০ টাকা কেজি বিক্রি হচ্ছে।
জানতে চাইলে কনজুমারস অ্যাসোসিয়েশ অব বাংলাদেশের (ক্যাব) সভাপতি গোলাম রহমান বলেন, গুটি কয়েক ব্যবসায়ীর কাছে দেশের ভোক্তারা জিম্মি। তারা যেকোনো অজুহাতে পণ্যের দাম বাড়িয়ে বাজারে অস্থিরতা সৃষ্টি করছে। তাই তাদের দমনে কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে। পাশাপাশি ভোক্তার স্বার্থে এখন পেঁয়াজ আমদানি শুরু করতে হবে।
রাজধানীর কাওরান বাজার, নয়াবাজার ও শান্তিনগর কাঁচাবাজারের খুচরা বিক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, প্রতি কেজি দেশি পেঁয়াজ ৮৫-৯০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। যা এক মাস আগে ৩৫-৪০ টাকা ছিল। আমদানি করা পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৮৫ টাকা। যা আগে ৪৫ টাকা ছিল। দেশি আদা প্রতি কেজি বিক্রি হচ্ছে ৩৪০ টাকা, যা এক মাস আগে ২২০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। আমদানি করা আদা বিক্রি হচ্ছে ৪০০ টাকা, যা আগে ২৫০ টাকা ছিল।
নয়াবাজারের বিক্রেতা মো. আল আমিন বলেন, এবার পাইকারি বাজারে রোজার ঈদের পর থেকেই পেঁয়াজ ও আদাসহ অন্যান্য মসলার দাম বাড়ানো হচ্ছে। ভারত থেকে আমদানি বন্ধ এমন হুজুগে পেঁয়াজের দাম বাড়ানো হয়েছে। কিন্তু এর কোনো সংকট নেই।
এছাড়া ডলারের মূল্য বাড়ায় আমদানি করা আদার দাম বেড়েছে-এমন অজুহাত দেওয়া হচ্ছে। কিন্তু এক মাস আগেও ডলারের মূল্য বাড়তি ছিল। তখন কিন্তু দাম বাড়ানো হয়নি। এখন বাড়ানো হচ্ছে কোরবানির ঈদ ঘিরে। প্রতি বছরের মতো এবারও কারসাজি করেই দাম বাড়ানো হচ্ছে।
বিক্রেতারা জানান, বাজার তদারকি সংস্থার নজরদারি না থাকায় এমন অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। তবে ঈদের আগে লোক দেখানো তদারকি করা হবে। তখন আবার আমাদের মতো খুচরা বিক্রেতাদের জরিমানা করবে। কিন্তু যারা মূল্য বাড়িয়ে বাজারে অস্থিরতা সৃষ্টি করেছে, তাদের কিছুই হবে না।
হিলি স্থলবন্দর আমদানি-রপ্তানিকারক গ্রুপের সাধারণ সম্পাদক মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, বৈশ্বিক পরিস্থিতিতে ডলারের মূল্যবৃদ্ধি পাওয়ায় চাহিদা মতো কোনো পণ্য আমদানি করা সম্ভব হচ্ছে না। আবার প্রতিনিয়ত রপ্তানি মূল্যও বেড়ে যাচ্ছে। এলসি করতেও জটিলতা হচ্ছে। বর্তমানে হিলি স্থলবন্দর দিয়ে আদাও খুব কম আমদানি হচ্ছে।
সরকার দুই মাস ধরে পেঁয়াজের আমদানি বন্ধ রেখেছে। তাই কোরবানির ঈদের আগে থেকে বাজারে প্রতিটি পণ্যের সরবরাহ ও দাম নিয়ন্ত্রণে রাখতে হলে সরকারকে আমদানিকারকদের সহযোগিতা করা দরকার। না হলে বাজার নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাবে।
জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর সূত্র জানায়, আদা ও পেঁয়াজসহ অন্যান্য পণ্যের দাম কেনো বাড়ছে তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। অনিয়ম সামনে এলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। কাউকেই ছাড় দেওয়া হবে না। আসন্ন ঈদ ঘিরে কঠোরভাবে বাজারে তদারকি করা হবে।
টাইমস ডেস্ক/ ২১ মে ২০২৩