দেশি ইলিশের চেয়ে রাজধানীর মাছের বাজারগুলোতে দেদারছে বিকি-কিনি চলছে মায়ানমার থেকে আমদানি করা বার্মিজ ইলিশ।
ক্রেতারা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলছেন, মাছের বাজারগুলোতে দেশি ইলিশের পর্যাপ্ত সরবরাহ না থাকায় বাধ্য হয়েই অপেক্ষাকৃত বেশি দামে বার্মিজ ইলিশ কিনতে হচ্ছে তাদের। ফলে বিক্রেতাদের কাছে জিম্মি হয়ে পড়েছেন তারা।
শনিবার ও রোববার (২৮ ও ২৯ জানুয়ারি) রাজধানীর কারওয়ানবাজার সোনালী মৎস্য মার্কেটে গিয়ে দেখা গেছে, দেশি ইলিশের চেয়ে বার্মিজ ইলিশে সয়লাব পুরো মৎস্য বাজারটি।
কারওয়ানবাজারে আকারভেদে দেশি ইলিশের চেয়ে বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে বার্মিজ ইলিশ। এখানে আড়াই কেজি ওজনের বার্মিজ ইলিশ ৩ হাজার টাকা, ২ কেজি ওজনের ইলিশ ২ হাজার ২০০ টাকা, দেড় কেজি ওজনের ইলিশ ১ হাজার ৫০০ টাকা ও ১ কেজি ৩০০ গ্রাম ওজনের বার্মিজ ইলিশ বিক্রি হচ্ছে ১ হাজার ৩০০ টাকায়।
অন্যদিকে ৫০০ গ্রাম ওজনের দেশি ইলিশ ৬৫০ টাকা ও ৪০০ গ্রাম ওজনের দেশি ইলিশ ৫০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
শেরপুর থেকে কারওয়ানবাজারে পাইকারি ইলিশ কিনতে আসা হাসেম আলী জানান, তিনি ১৭ বছর ধরে মাছের ব্যবসা করেন। শেরপুরে তার একটি বড় মাছের দোকান রয়েছে। মাঝে মাঝে তিনি রাজধানীতে ইলিশ কিনতে আসেন। কিন্তু দেশি ইলিশের চেয়ে বর্তমানে বার্মিজ ইলিশই বেশি চলছে।
কারণ হিসেবে হাসেম বলেন, বর্তমানে পদ্মার ইলিশ বেশি একটা বড় হয় না। এজন্য যারা বড় ইলিশ চান, তারা বার্মিজ ইলিশই কিনে নিয়ে যান। কিন্তু দেশি ইলিশের চেয়ে বার্মিজ ইলিশের স্বাদ কম এবং দামও বেশি।
বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা আবুল কালাম বলেন, পদ্মার ইলিশের স্বাদ অতুলনীয়। কিন্তু বাজারে দিন দিন বড় দেশি ইলিশের সংখ্যা কমে যাচ্ছে। ৫০০-৬০০ গ্রামের বেশি ওজনের দেশি ইলিশ পাওয়াই মুশকিল। তাই বাসা-বাড়িতে কোনো অনুষ্ঠান হলে বার্মিজ ইলিশই তাদের একমাত্র ভরসা।
তবে তিনি এটাও বলছেন, এই বার্মিজ ইলিশ দেশি ইলিশের চেয়ে স্বাস্থ্যসম্মত নয়।
পাইকারি মাছ বিক্রেতা ওসমান বলেন, ‘বাংলাদেশে প্রতিদিন গড়ে ৩ থেকে ৫ হাজার কেজি বার্মিজ ইলিশ আমদানি করা হচ্ছে। কারণ, আমাদের দেশে বর্তমানে ৮০০ গ্রামের বড় ইলিশ নেই। বড় ইলিশের চাহিদা মেটাতে তাই আমাদেরকে মায়ানমার থেকে মাছ আমদানি করতে হয়’।
তবে সঠিক প্রক্রিয়ায় দেশে মাছগুলো আমদানি করা হচ্ছে কি-না, সে বিষয়ে কোনো মন্তব্য করতে চাননি তিনি।
বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইন্সটিটিউটের ইলিশ বিষয়ক গবেষক ড. আনিসুর রহমান বলেন, দেশে বড় ইলিশ না থাকায় বার্মিজ ইলিশ আমদানি হচ্ছে বেশি। তবে দেশি ইলিশের চেয়ে বার্মিজ মাছে পুষ্টি কম রয়েছে এবং স্বাদও কম।
ইলিশে রয়েছে অ্যাসেনসিয়াল ফ্যাটি এসিড। এটি মস্তিষ্কের বুদ্ধি বিকাশে খুবই উপকারী। হার্টের কর্মদক্ষতা বাড়িয়ে হৃদরোগের ঝুঁকি কমায়, চোখের দৃষ্টিশক্তি বাড়ায়, প্রজননতন্ত্র গঠন ও বিকাশে সাহায্য করে। এটি ত্বকের সৌন্দর্য বাড়ানোর পাশাপাশি ফ্যাটি লিভার প্রতিরোধ করে মৃত্যুর ঝুঁকিও কমায়।
ড. আনিসুর রহমান আরো বলেন, মায়ানমার থেকে যে মাছগুলো আমদানি করা হচ্ছে, সেগুলো মান নিয়ন্ত্রণ অধিদফতর ও কাস্টমসের সঠিক পরীক্ষা-নিরীক্ষার মাধ্যমে এলে কোনো ক্ষতি নেই। কিন্তু সঠিক পরীক্ষা ছাড়া যদি ফরমালিনযুক্ত মাছ আমদানি করা হয়, তাহলে তা স্বাস্থ্যের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ। তাই বার্মিজ ইলিশ আমদানির ক্ষেত্রে সঠিক তদারকির প্রয়োজন রয়েছে।
এ বিষয়ে মৎস্য মন্ত্রণালয়কে আরো বেশি কঠোর হওয়ার পরামর্শ দেন তিনি।
ঢাকা কাস্টমস্ হাউসের কমিশনার মো. লুৎফর রহমান বলেন, সবচেয়ে বেশি বার্মিজ ইলিশ আসে চট্টগ্রাম ও টেকনাফ দিয়ে। তাদের কাস্টমস্ দিয়ে যে মাছগুলো আমদানি করা হচ্ছে, সেগুলো যথাযথ পরীক্ষার পর ছাড়পত্র পায়। কিন্তু অবৈধ পথে যে মাছগুলো দেশে আসছে, সেগুলো কোনো পরীক্ষা ছাড়াই রাজধানীর বাজারে হরহামেশাই প্রবেশ করছে। ফলে এখানে একটা ঝুঁকি থেকেই যায়।
তবে তাদের কাস্টমস্ দিয়ে পরীক্ষা ছাড়া আমদানি করা কোনো মাছ ছাড়পত্র পায় না বলেও জানান তিনি।
মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী নারায়ণ চন্দ্র চন্দ বলেন, বাংলাদেশে বড় ইলিশের চাহিদা থাকায় বাইরে থেকে মাছ আমদানি করা হয়। মাছগুলো সঠিক প্রক্রিয়ায় দেশে প্রবেশ করছে কি-না, সেটাই কিন্তু দেখার বিষয়! আর এ বিষয় দেখ-ভালের দায়িত্ব স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের। এছাড়া বার্মিজ ইলিশের কোয়ালিটি দেশি ইলিশের চেয়ে খারাপ। তবে এটি সত্য যে, সঠিক পথের চেয়ে চোরাই পথেই বেশি বার্মিজ মাছ বাংলাদেশে প্রবেশ করছে। বিষয়টির প্রতি তার মন্ত্রণালয় তৎপর রয়েছে।
তবে প্রতিমন্ত্রী এটাও বলছেন, খুব শিগগিরই চোরাই পথে বার্মিজ ইলিশ আসা বন্ধ হবে। (বাংলানিউজ)
নিউজ ডেস্ক
: আপডেট, বাংলাদেশ সময় ৯: ৩০ এএম, ৩০ জানুয়ারি ২০১৭, সোমবার
ডিএইচ