স্বাস্থ্য

বাজারের ফল খাচ্ছি তো বিষও খাচ্ছি

‎Tuesday, ‎02 ‎June, ‎2015  03:55:55 AM

হাসান সাইদুল, চাঁদপুর টাইমস:
প্রচণ্ড তাবদাহে অতিষ্ঠ মানুষকে মৌসুমি ফলের স্বাদে-গন্ধে তুষ্ট করার সময় জ্যৈষ্ঠ মাস। এ সময় বাজারে সর্বত্র চোখে পড়ে আম, জাম, কাঁঠাল, আনারস, লিচু, বেল, জামরুল, তরমুজ ও কলাসহ আরও অনেক ফল। কিন্তু বাজারের এসব ফল খাওয়া কতটা নিরাপদ এ প্রশ্ন সবারই।

জনস্বাস্থ্য নিয়ে কাজ করে এমন সরকারি কিংবা বেসরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের বিগত এক দশকের তথ্য-উপাত্তে দেখা যায়, মৌসুমি ফল আমসহ বেশিরভাগ ফলই পাকানো হয় রাসায়নিক উপাদান দিয়ে। কার্বাইডে পাকানো ফলগুলো স্বাদের দিক দিয়ে নিুানের। কিন্তু দেখে বোঝার উপায় নেই। ফলে স্বাভাবিক সময়ে কাঁচা ফল পাওয়ার কথা থাকলেও অধিক মুনাফার লোভে ব্যবসায়ীরা এ কাঁচা ফলকেই ক্ষতিকারক রাসায়নিকের মাধ্যমে পাকিয়ে বাজারে নিয়ে আসেন।

অসাধু ব্যবসায়ীরা ফলসহ খাদ্যদ্রব্যে বিষ মিশিয়ে লাভবান হলেও প্রত্যক্ষ ক্ষতির শিকার হচ্ছেন ক্রেতা বা ভোক্তারা। তাদের মতে এসব ক্ষতিকর রাসায়নিক মেশানো ফল খেয়ে মানুষ দীর্ঘমেয়াদি নানা রোগে আক্রান্ত হচ্ছে। বিশেষ করে বদহজম, পেটেরপীড়া, পাতলা পায়খানা, জণ্ডিস, গ্যাস্টিক, শ্বাসকষ্ট, অ্যাজমা, লিভার ও কিডনি নষ্ট হওয়ার মতো জটিল রোগের শিকার হচ্ছে তারা। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এসব রাসায়নিক পদার্থের কারণে মহিলারা যেমন বিকলাঙ্গ শিশু জন্ম দিতে পারেন। শিশুরাও সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। এ ছাড়া রাসায়নিক মেশানোর কারণে ফলের পুষ্টি ও স্বাদ উভয়ই নষ্ট হয়ে যায়। অথচ মৌসুমি এসব ফল মানুষের পুষ্টির চাহিদা অনেকাংশেই পূরণ করার কথা।

রঙিন শরবত হতে সাবধান
এ গরমে এক গ্লাস জুস বা শরবত মানুষের ক্লান্তি দূর করতে পারে নিমিষেই। অথচ বাইরের খোলা জুস বা শরবত মানুষের একেবারেই নিরাপদ নয়। সরেজমিন বেশকিছু জুসের টঙ দোকান ঘুরে দেখা যায়, লেবুর শরবতে মেশানো হচ্ছে ক্ষতিকর স্যাকারিন। যদিও বিক্রেতারা সেটাকে স্যাকারিন মানতে নারাজ। তাদের দাবি বিট লবণ এবং লেবুর সঙ্গে যেটা মেশানো হচ্ছে সেটা আসলে চিনির সিরা।

তবে তৃপ্তিদায়ক লেবুর শরবতের প্রধান উপাদান বরফের উৎসটা কোথায় সেটা বলতে পারেননি তারা। অনুসন্ধানে জানা যায়, এসব বরফ সাধারণত নিউমার্কেট এবং কারওয়ানবাজারের মাছের বাজার থেকে সংগ্রহ করা। গুটিকয়েক শরবত বিক্রেতা কিছুটা ভালো মানের বরফ ব্যবহার করলেও সেই বরফ তৈরি হয় পুকুর ডোবার পানি থেকে। কাজেই এসব শরবত স্বাস্থের জন্য অবশ্যই ক্ষতিকর। এছাড়াও তরমুজ এবং বাঙ্গির জুসে প্রতারণার শিকার হচ্ছেন ক্রেতারা। জুসের দোকানে রঙ দেয়া তরমুজ খুলে রাখা হয়। কিন্তু জুস তৈরি করা হয় কাঁচা-পাকা তরমুজ দিয়ে। এরপর বেশি পরিমাণে চিনি এবং বিভিন্ন ব্র্যান্ডের সিরাপ মিশিয়ে প্রতারণা করা হয় ক্রেতাদের।

তরমুজে বিপজ্জনক রঙ
গ্রীষ্মের রসালো ফল তরমুজ। সুস্বাদু এ ফলটি গরমে মানুষের যেমন তৃষ্ণা মেটায় তেমনি আনে স্বস্তি। শহরবাসী অথবা গ্রামের মানুষ সবাই কমবেশি তরমুজ খেতে পছন্দ করেন। এতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে পানি। তরমুজে শতকরা ৬ ভাগ চিনি এবং ৯২ ভাগ পানিসহ অন্যান্য ভিটামিন জাতীয় উপকরণ রয়েছে। ফলটির পুষ্টিগুণ যেমন তেমনি দেশী ফলের ভেতরে দামও তুলনামূলক কম থাকায় গরমে স্বস্তি পেতে তরমুজের জুড়ি নেই। তরমুজের মতো সহজলভ্য ফলেও এখন দেদারসে মেশানো হচ্ছে জনস্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকারক উপাদান। তরমুজকে পাকা এবং লাল দেখানোর জন্য মেশানো হচ্ছে বিপজ্জনক লাল রঙ ও মিষ্টি স্যাকারিন। ইনজেকশনের সিরিঞ্জের মাধ্যমে তরমুজের বোঁটা দিয়ে এসব দ্রব্য পুশ করে তরমুজ পাকা ও লাল টকটকে বলে বিক্রি হচ্ছে। ক্ষতিকারক দ্রব্য মেশানো এ ধরনের তরমুজ খেয়ে সারা দেশে শিশুসহ বিভিন্ন বয়সের মানুষ অসুস্থ হওয়ার বেশ কিছু ঘটনা সম্প্রতি খবরে আসছে।

জানা যায়, শহরের ফলের আড়তগুলোতে ভোরবেলায় ব্যবহৃত পুরনো ইনজেকশনের সিরিঞ্জের মাধ্যমে বিষাক্ত লাল রঙ ও মিষ্টি স্যাকারিন পানি পুশ করা হচ্ছে। আর এ তরমুজগুলোই দোকানে ছুরি দিয়ে কেটে পাকা দেখিয়ে বেশি দাম আদায় করা হচ্ছে। সেই সঙ্গে তরমুজ যেন তাড়াতাড়ি নষ্ট না হয় সে জন্য মেশানো হচ্ছে কেমিক্যাল। এসব বিষাক্ত কেমিক্যাল মেশানো তরমুজ খেয়ে মানুষ হামেশাই অসুস্থ হচ্ছেন। সবচেয়ে ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছে শিশুরা।

শুধু তরমুজই নয়, অন্যান্য ফলও পাকা দেখাতে ব্যবহার করা হচ্ছে রাসায়নিক উপাদান। রাসায়নিক দ্রব্যবিষয়ক বিশেষজ্ঞদের মতে, ফলে কার্বাইড ব্যবহারে সেগুলো রঙিন তথা উজ্জ্বল হলুদ হয়। বাতাসের সংস্পর্শে এলে কার্বাইড থেকে অ্যাসিটিলিন নামে এক ধরনের গ্যাস উৎপাদন হয়। যার উত্তাপেই ফল পাকে। এ গ্যাসই লোহার কারখানায় লোহা কাটার কাজে ব্যবহৃত হয়। ৫০ কেজি ফল পাকাতে মাত্র ৫ গ্রাম কার্বাইড লাগে। রাসায়নিক দ্রব্যের সহজলভ্যতা এবং রাসায়নিক ব্যবহারের মাত্রাজ্ঞান না থাকায় ব্যবসায়ীরা প্রয়োজনের তুলনায় কয়েকগুণ বেশি কার্বাইড ব্যবহার করে থাকে। এ কার্বাইড ফলের বিভিন্ন উপাদানের বিক্রিয়ায় আর্সেনিক উৎপন্ন করে। আর্সেনিক ফসফরাস এবং কার্বাইড মিলে অ্যাসিটিলিন গ্যাস তৈরি করে এবং ক্যালসিয়াম কার্বাইড তৈরি করে, যা মানবদেহের সংস্পর্শে এলে ভয়াবহ রোগ তৈরি করে। এছাড়া আম, লিচুসহ কিছু ফল দ্রুত পাকাতে ইথাইলিন (এক ধরনের হরমোন) স্প্রে করা হয়। অতিরিক্ত ইথাইলিন ফল এবং সবজিকে বিষাক্ততার পর্যায়ে নিয়ে যায়।
মাছি টানতে কেমিক্যাল

ফলের মধ্যে ফরমালিন মেশানো হলে তার ওপর মাছি বা এ ধরনের পোকা বসে না। এতে ফল কেনার ক্ষেত্রে অনেক ক্রেতাই সতর্ক হয়ে যান। তাই সচেতন ক্রেতাদের ফাঁকি দিতে ব্যবসায়ীরা নিয়েছেন নতুন কৌশল। মাছি আকর্ষণ করতে তারা এখন মেশাচ্ছেন নতুন আরেক ধরনের বিষাক্ত কেমিক্যাল। এর ফলে একদিকে যেমন প্রতারিত হচ্ছেন ক্রেতারা, অন্যদিকে মারাত্মক স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে পড়ছেন সাধারণ মানুষ। পুুরান ঢাকার স্থানীয় এক বাসিন্দা বলেন, ফলের ওপর আগে মাছি ভনভন করত। এখন আর সেগুলোর আশপাশে কোনো মাছি বসতে দেখি না। শুনেছি কেমিক্যালের গন্ধে ফলের ওপর মাছি বসে না। তাই যেসব ফলের ওপর মাছি বসছে, সেগুলো বেছে বেছে কিনছি। তবে শুনছি নতুন আরেক ধরনের কেমিক্যাল মেশানো হচ্ছে যাতে ফলের ওপর পোকা বসে। এ যেন মড়ার উপর খাঁড়ার ঘা।

‘শিক মারা’ পদ্ধতিতে পাকছে কাঁঠাল
আবহাওয়াগত কারণে এবারের কাঁঠাল একটু দেরিতে নামতে শুরু করেছে। তবে চলতি মৌসুমে বিভিন্ন এলাকায় শুরু হয়েছে কাঁঠালে রাসায়নিক উপাদান প্রয়োগের প্রতিযোগিতা। টাঙ্গাইলের স্থানীয় ভাষায় কাঁঠালে রাসায়নিক প্রয়োগের পদ্ধতিকে ‘শিক মারা’ বলে। প্রায় দেড় ফুট লম্বা লোহার শিক কাঁঠালের বোঁটা বরাবর ঢুকিয়ে দিয়ে ছিদ্রপথে সিরিঞ্জ দিয়ে বিষাক্ত কার্বাইড, ইথাইল ও রাইপেন জাতীয় পদার্থ প্রয়োগ করা হয়। পরে স্তূপাকারে কাঁঠালগুলো সাজিয়ে পলিথিন দিয়ে মুড়িয়ে চাপা দিয়ে রাখলেই ২৪ ঘণ্টায় একটি কচি কাঁঠালও পেকে যায়। মেশিনে ¯েপ্র করেও রাসায়নিক উপাদান প্রয়োগ করে থাকে কেউ কেউ।
ফরমালিনমুক্ত ফলের পসরা

ভোক্তাদের ফরমালিন ভীতির সুযোগ নিয়ে রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় বিশেষ করে ফল উৎপাদন হয় এমন এলাকাগুলোতে এক শ্রেণীর মতলবি ব্যবসায়ী ‘ফরমালিনমুক্ত ফলের দোকান’ এরকম ব্যানার টানিয়ে ফলের পসরা সাজিয়ে বসেছেন। কিন্তু কেউ বলতে পারেন না, দোকানের ফলগুলো যে ফরমালিনমুক্ত তার গ্যারান্টি কী? কেননা সত্যিকার অর্থে, ফরমালিন সনাক্ত করার কথা মুখে বলা হলেও প্রকৃতপক্ষে সে রকম কোন উদ্যোগ বা চিত্র কোথাও চোখে পড়ে না।
এর আগে বিএসটিআইয়ের যতগুলো অভিযান হয়েছে প্রত্যেক অভিযানে মৌসুমি ফলসহ বলা যায় প্রতিটি ভোগ্যপণ্যেই ফরমালিনের উপস্থিতি পাওয়া গেছে। প্রায় অর্ধযুগের বেশি সময় ধরেই খাদ্যে ভেজাল ও ফরমালিন রোধে বিচ্ছিন্নভাবে পরিচালিত হয়ে আসছে ভ্রাম্যমাণ আদালত। বিশেষজ্ঞদের মতে এসব ভেজাল খাদ্যদ্রব্যের বিরুদ্ধে জোরদার কোনো অভিযান না থাকায় ব্যবসায়ীরা ফলমালিন মিশিয়ে সহজেই পার পেয়ে যাচ্ছেন। বিএসটিআই, সিটি কর্পোরেশন ও র‌্যাবের পক্ষ থেকে আলাদা আলাদা এসব অভিযান চলেছে মাঝে মধ্যে। কিন্তু তাদের মধ্যে কোনো সমন্বয় নেই। ফলে খাদ্যের ভেজালের বিরুদ্ধে কার্যকর কোনো ব্যবস্থা গড়ে তোলা যাচ্ছে না।

অর্ধেকেরও বেশি খাদ্যে ভেজাল
কিছুটা অবাক করার মতো তথ্য হলেও অর্ধেকেরও বেশি খাদ্যে মেশানো হচ্ছে ভেজাল। চরম হুমকির মুখে জনস্বাস্থ্য। চিকিৎসকরা বলছেন, ভেজাল খাবারের ফলে শুধু এই প্রজন্মই নয়, ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে ভবিষ্যৎ প্রজন্মও। ক্রমাগত ভেজাল খাবার গ্রহণের ফলে পুরুষত্বহীন, পঙ্গুত্ব ও বিকলাঙ্গ হওয়ার ঝুঁকি বাড়ছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ও কৃষি সংস্থার তথ্যানুযায়ী, খাদ্যে বিষক্রিয়ার ফলে প্রতি বছর ৪৫ লাখেরও অধিক মানুষ বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন।

জনস্বাস্থ্য ইন্সটিটিউট সূত্রে জানা গেছে, গত তিন বছরে বিভিন্ন খাদ্যের নমুনা পরীক্ষা করে অর্ধেকেরও বেশি খাদ্যে ভেজাল পাওয়া গেছে। এর মধ্যে ২০১১ সালে ৫ হাজার ৮১২টি খাদ্যপণ্যের মধ্যে ৫৪ শতাংশ, ২০১২ সালের ৫০টি খাদ্যপণ্যের ৫ হাজার ৩২২টি নমুনা পরীক্ষা করে ২ হাজার ৫৮৮টির মধ্যে ভেজাল পাওয়া গেছে, যা মোট খাদ্যপণ্যের ৪৮ দশমিক ৬৩ শতাংশ। ২০১৩ সালে ৪২টি খাদ্যপণ্যের ৪ হাজার ৯৬৭টি নমুনা পরীক্ষা করে ২ হাজার ১৩৭টির মধ্যে ভেজাল পাওয়া গেছে, যা মোট খাদ্যপণ্যের ৪৩ দশমিক শূন্য দুই শতাংশ। ২০১৪ সালের নমুনা পরীক্ষার কাজ চলছে জানা গেছে। জনস্বাস্থ্য ইন্সটিটিউটে প্রাপ্ত তথ্যানুযায়ী, মনোসোডিয়াম, ইথোফেন, ক্যালসিয়াম, কার্বাইড, ফরমালিন, চক পাউডার, ইউরিয়া, মার্জারিন, পশুর চর্বি, খনিজ তেল, রেডরি গুঁড়া, ন্যাপথলিন, সুডান কালার, ইটের গুঁড়া, কাঠের গুঁড়া, ডিডিটি, রোডামিন সাইক্লোমেটের মতো বিভিন্ন বিষাক্ত রাসায়নিক মেশানো হচ্ছে। সরিষার তেলে মেশানো হচ্ছে রেডরি তেল, মরিচের গুঁড়া ও খনিজ তেল। সয়াবিন তেলে মেশানো হচ্ছে পাম অয়েল ও ন্যাপথলিন। শুকনা মরিচের গুঁড়ায় বিষাক্ত সুডান কালার, চকলেটে স্যাকারিন ও মনোসোডিয়াম, জুসে কৃত্রিম রঙ, শুঁটকি মাছে ডিডিটি, সবুজ শাকসবজিতে কৃত্রিম রঙ দেয়া হচ্ছে। ফলের মধ্যে কলা, আম, পেঁপে, টমেটো, আনারস পাকাতে ও দীর্ঘসময় তাজা রাখতে অসাধু ব্যবসায়ীরা ব্যবহার করছেন ক্যালসিয়াম কার্বাইড ও ইথোফেন। এছাড়াও চিনিতে চক পাউডার ও ইউরিয়া, দুধে ফরমালিন, ঘি ও মাখনে মার্জারিন ও পশুর চর্বি মেশানো হচ্ছে। কোমল পানীয়র সঙ্গে রোডামিন, মাছে ফরমালিন। এসবের পাশাপাশি খাবার সুস্বাদু করতে ব্যবহার করা হচ্ছে সাইক্লোমেট।

হাইকোর্টের নির্দেশনা
ফলে রাসায়নিক দ্রব্য মেশানো ঠেকাতে নির্দেশনা দিয়ে গত বছর ১৫ জুলাই হাইকোর্টের পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশ করা হয়। মানবাধিকার ও পরিবেশবাদী সংগঠন হিউম্যান রাইটস অ্যান্ড পিস ফর বাংলাদেশের (এইচআরপিবি) দায়ের করা এক রিট আবেদনের শুনানি শেষে ২০১০ সালের ১০ মে এক সংক্ষিপ্ত রায় দেন বিচারপতি এইচএম শামসুদ্দিন চৌধুরী ও বিচারপতি জাহাঙ্গীর হোসেন সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্টের একটি দ্বৈত বেঞ্চ।

প্রকাশিত রায়ে বলা হয়, ৬ মাসের মধ্যে ফল পাকাতে রাসায়নিক দ্রব্য ব্যবহার বন্ধে গাইডলাইন করতে হবে। এই গাইডলাইন প্রশাসনের মাঠ পর্যায়ে ছড়িয়ে দিতে হবে। ৬ মাসের মধ্যে দেশের সব স্থল ও সমুদ্র বন্দরে কেমিক্যাল টেস্ট ইউনিট স্থাপন করতে হবে। যাতে আমদানিকৃত সব ফল রাসায়নিক পরীক্ষা ব্যতীত ছাড়া না হয়। আমের মৌসুমে ফলে রাসায়নিক দ্রব্য ব্যবহার বন্ধে রাজশাহীসহ দেশের অন্যান্য উৎপাদনকারী এলাকায় আইন-শৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনী মোতায়েন করতে হবে। এছাড়াও রায়ে বলা হয়, কমিটি করে বছরব্যাপী ফলের বাজার ও সংরক্ষণাগার পর্যবেক্ষণ করতে হবে, যাতে কেউ রাসায়নিক দ্রব্য মিশ্রিত ফল বিক্রি করতে না পারে। ফলে ভেজাল ও রাসায়নিক দ্রব্য মেশানোর সঙ্গে জড়িতদের বিরুদ্ধে আইনগত পদক্ষেপ নিতে আইন-শৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনীর প্রতি সার্কুলার জারি করতে হবে, যাতে জড়িতদের আইনের আওতায় আনা যায়।
আইনের তোয়াক্কা না করে এক ধরনের অসাধু ব্যবসায়ী ফলে ফরমালিনসহ অন্যান্য রাসায়নিক দ্রব্য মে

শাচ্ছেন। আগামী প্রজন্মকে সুস্থ সবল ও মেধামননে গড়ে তুলতে হলে নিরাপদ বিষমুক্ত খাদ্যের কোনো বিকল্প নেই। নিরাপদ খাদ্য মানুষের সুস্থভাবে বেঁচে থাকার সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িত। তাই সবার জন্য নিরাপদ খাদ্য নিশ্চিত করতে ভেজালের বিরুদ্ধে একযোগে সামাজিক প্রতিরোধ গড়ে তোলা এখনই জরুরি হয়ে পড়েছে।
যা বললেন কর্তৃপক্ষ

ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের নবনির্বাচিত মেয়র আনিসুল হক চাঁদপুর টাইমসকে বলেন, ফলে রাসায়নিক উপাদান মিশিয়ে সর্বসাধারণের সঙ্গে প্রতারণা করার বিষয়টি সম্পর্কে অবহিত আছি। সিটি কর্পোরেশন নগরবাসীকে ফরমালিনমুক্ত ফলমূল খাওয়াতে বদ্ধপরিকর। আমি নতুন দায়িত্ব পেয়েছি। রাজধানীর বাজারগুলোতে অভিযান চালানোর জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছে। আমি সবাইকে এলার্ট হতে বলেছি, যেন অসাধু ব্যবসায়ীরা কোনোভাবেই ফলে ফরমালিন মেশাতে না পারে। খুব শিগগির ব্যাপক অভিযানে নামবে সিটি কর্পোরেশন। আমাদের জনবল এবং যন্ত্রাংশের কিছুটা ঘাটতি রয়েছে সে ব্যাপারে নজর রেখেই আমরা চেষ্টা করে যাব।

জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতরের পরিচালক মনজুর মোর্শেদ চৌধুরী চাঁদপুর টাইমসকে বলেন, শুধু মৌসুমি ফল নয়, সব ধরনের ফলে বিষাক্ত রাসায়নিক মেশানো হচ্ছে। এ রকম তথ্য আমরা প্রতিনিয়তই পাচ্ছি। কেমিক্যাল মেশানোর বিষয়ে এছাড়াও মাঠ পর্যায় থেকে উদ্বেগজনক তথ্য আসছে। তবে আমাদের অভিযান অব্যাহত আছে। আইন অনুযায়ী আমরা ব্যবস্থা নিচ্ছি।

বিএসটিআই-এর পরিচালক (সিএম) কমল প্রসাদ দাস চাঁদপুর টাইমসকে বলেন, বাহ্যিকভাবে ফলে ফরমালিন মেশানো হয় কিনা সেটা পরীক্ষা করি। ভেজালবিরোধী কার্যক্রম বিগত বছরগুলোতে যেমন ছিল এখনও সেগুলো অব্যাহত রয়েছে। প্রতি মাসেই আমাদের কার্যক্রম চলছে। মামলা দায়েরের বিষয়টা যেহেতু আমাদের হাতে নেই তাই আমরা আমাদের টেস্টের ফলাফলগুলো সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে অবহিত করি। তিনি বলেন, গত রমজানের পর থেকে এখন পর্যন্ত বাজার থেকে সংগ্রহ করা ফলে আমাদের ল্যাব টেস্টে কোনো ফলে ফরমালিন পাওয়া যায়নি। তবে রমজান এবং ফলের মৌসুমে আবারও ব্যাপক অভিযানে নামবে বিএসটিআই। এছাড়াও সরকারের নির্দেশনা অনুযায়ী আমরা ব্যবস্থা নেব।

র‌্যাবের সহকারী পরিচালক (মিডিয়া) মেজর মাকসুদুল আলম চাঁদপুর টাইমসকে বলেন, রাসায়নিক উপাদান মিশিয়ে যারা ফল সংরক্ষণ বা বিক্রি করছেন তারা একটি গর্হিত কাজ করছেন। যেহেতু ফলের মৌসুম চলছে এবং সামনেই রমজান মাস খুব দ্রুত অসাধু ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালিত হবে। ঢাকার প্রবেশমুখ এবং ফলের বাজারগুলোতে প্রয়োজনীয় সংখ্যক মোবাইল কোর্টের ব্যবস্থা থাকবে। দোষীদের বিরুদ্ধে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়া হবে।

আমাদের দেশে আজ-কাল জাতীয় মানের প্রথাবিরুধী ধরনের জাতীয় বেয়াদব বিশেষ করে ফেইচবুকে গা ভাসা দিয়েছে। কেউ কেউ জাতীয় মানের বেয়াদবদের মত আকার ইঙ্গিতের মাঝে নিজেদের কুরুচিকর কিছু মত প্রকাশ করে নিজেদের জ্ঞানের অপরিপক্কতা জানান দিচ্ছে। এক বেয়াদব বলেছিল, চোখের সামনে আমার সুন্দরী মেয়ে বড় হচ্ছে অথচ সমাজের চোখে আমার দু হাত বাধা। কিছু অকৃতজ্ঞ মানুষ রূপের জানোয়ারদের মগজ এমন ভাবে বিকৃত হয়েছে যে এদের কৃতীকলাপ বিশেষ করে পড়তে পেলে মনে হয় এগুলো মানুষ রূপের হিংস্র জানোয়ার যাদের বেয়াদব বলতে বিবেকে বাধে। কেননা এদেরকে বেয়াদব বললে বেয়াদবদের অসম্মান করা হবে।

বর্তমান বাংলাদেশের অবস্থা যতই নাজুক হোক। রাজনৈতিক ভাবে যতই পিছিয়ে থাকুক না কেন। বাংলাদেশ একটি স্বাধীন সার্বভৌমত্ত্বপূর্ণ অসম্প্রদায়ীক দেশ। এক সম্ভবত মস্তিস্ক বিকৃত ফেইসবুক গ্রাহক ফেইসবুকে স্ট্যাটাসের মাধ্যমে দেশে পতিতালয় বানানোর দাবি জানিয়েছে সরকারের কাছে। এতে বুঝা যায় সে বেয়াদব না মস্তিস্ক বিকৃত একটি পাগলা হিংস্র প্রাণীর মত। এক মেধাবী মানুষরূপের বলদ দাবি করছে কোন ধর্মই ভাল না। এও দাবি করছে সে আলাহ মানে(নাস্তিক না) কিন্তু কুরআন হাদিস তথা আলাহর বিধান যেগুলো মুসলিমরা মানে সেগুলো মানে না। এ সমস্ত মানুষরূপী হিংস্র জানোয়াররা তো ফেরাউন নমরুদ সাদ্দানের কায়দায় কথা বলছে। যদিও ইসলামে বিচার বর্হিভূতহত্যা পাপ তবুও এদেরকে বাসফেমি আইনের আওতায় এনে উপযুক্ত শাস্তি দেয়া উচিত।

কেননা এদেরকে আস্কারা দিলে দেশ এক সময় মস্কো-মধ্যপাশ্চ্যের দেশগুলোর মত নোংরা সংস্কৃতিতে দেবে যাবে। এরা মূলত আর্সেনিকের মত কাজ করছে। মুসলিম সমাজ অথবা যেকোন সমাজই সতর্ক না থাকলেই ধস নামবে। সরকার এবং বিশ্ববিদ্যালয় কতৃপক্ষ সতর্ক থাকলে পয়লা বৈশাখে এমন নির্মম ধর্ষণযজ্ঞ দেখতে হতো কারো। এই ঘটনার পর্যাক্রমে ঘটেছে আরো ধারাবাহিক কিছু অপ্রীতিকর ঘটনা যা দেখে মধ্যপাচ্যসহ ইউরোপ-আমেরিকানরা আমাদের নিন্দা জানাবে না বরং বিকল্প কোন সুযোগ নেয়ার পায়তারা করবে এবং করছে কোন কোন অংশে।

এ সময় জাতি সতর্ক না হলে আমাদের প্রাণের বাংলাদেশ ও সংস্কৃতি বিলুপ্তির দিকে দাবিত হবে। সতর্কতার সাথে পথ চললে আমাদের সংস্কৃতি আরো চাঙ্গা হবে। দেশের নব জোয়ানরা নব ও বাংলাদেশীয় সংস্কৃতি চাঙ্গা হয়ে সংস্কৃতি ও সমাজকে অসম্প্রদায়ীক ভাবে পরিচালিত করবে বলে আশা করি। পথ বহু দূর সকলে সত্য ও সঠিক পথ বেঁছে চলুক এটাই কামনা।

চাঁদপুর টাইমস : প্রতিনিধি/‍এএস/ডিএইচ/২০১৫

চাঁদপুর টাইমস প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না

Share