সুস্মিতা সেন, তনুশ্রী দত্তের পর ভারতসুন্দরীর খেতাব জিতলেন এক বাঙালি তরুণী। তার নাম প্রিয়দর্শিনী চট্টোপাধ্যায়।
১৯৯৪ সালে ১৮ বছরের সুস্মিতা সেন ভারতসুন্দরী হওয়ার দু’বছর পর গোহাটিতে জন্ম হয়েছিল প্রিয়দর্শিনীর। দেশের শ্রেষ্ঠ সুন্দরীর মুকুট এ বার জিতলেন তিনিই।
গোহাটির মারিয়া পাবলিক স্কুলে উচ্চমাধ্যমিকের পাঠ শেষ করে দিল্লির হিন্দু কলেজে সমাজবিদ্যা নিয়ে ভর্তি হয় মেয়েটি। একটাই স্বপ্ন ছিল- সুস্মিতা সেনের মতোই এক দিন ভারতের সেরা সুন্দরীর মুকুট জিতে নেওয়া। শনিবার রাতে সেই স্বপ্নপূরণ হল প্রিয়দর্শিনীর। ভারতসুন্দরীর মুকুট তো জিতলেনই, সঙ্গে উপরি পাওনা শাহরুখের আলিঙ্গন আর বলিউড বাদশার অমোঘ আমন্ত্রণ- ‘ওয়েলকাম টু বলিউড!’
ফেব্রুয়ারিতে ‘মিস দিল্লি’ খেতাব জেতার পরে মুম্বাইয়ের প্রতিযোগিতার জন্য প্রস্তুতি শুরু। গত রাতে যশরাজ স্টুডিওতে ভারতের ১০ জন সেরা সুন্দরীর সঙ্গে টক্কর দেওয়ার পর, অধুনা দিল্লি-নিবাসিনী প্রিয়দর্শিনী হলেন ভারতের সেরা সুন্দরী। এ বার বিশ্বসুন্দরী প্রতিযোগিতার মঞ্চে ভারতের প্রতিনিধিত্ব করবেন ওই বাঙালি নারী।
মুম্বাইয়ের হোটেলে ফিরেও ঘোর কাটছে না মেয়ে, মা, বাবার। মা পাপিয়া চট্টোপাধ্যায় বলেছিলেন, ‘‘জানতাম মেয়ের আত্মবিশ্বাস আর অভিজ্ঞতা বিফল হবে না। ও যোগ্যতম দাবিদার ছিল। অন্য প্রতিযোগীদের পরিবারও লিপিকে আশীর্বাদ করে গিয়েছে।’’ প্রিয়দর্শিনীকে শুভেচ্ছা জানান আসামের মুখ্যমন্ত্রী তরুণ গগৈ।
মুম্বাই থেকে ফোনে উচ্ছ্বসিত প্রিয়দর্শিনী বলেন, ‘‘আমার পরিবার, বন্ধু, শুভানুধ্যায়ীদের আশীর্বাদ ও ভালবাসা ছাড়া এই জয় সম্ভব ছিল না। একটা স্বপ্নপূরণ হয়েছে। এ বার বিশ্বের দরবারে ভারতের সম্মান রাখতে চাই। বিশ্বের সব দেশ ঘুরে দেখার যে ইচ্ছেটা মনে পুষছিলাম, তার কিছুটা আশা করি মিটবে।’
আদতে ধুবুরির বাসিন্দা প্রবীর চট্টোপাধ্যায় কর্মসূত্রে থাকতেন গোয়াহাটিতে। সেখানেই দুই মেয়ে- প্রিয়ঙ্কা ও প্রিয়দর্শিনীর জন্ম। দিদি প্রিয়ঙ্কা কর্মসূত্রে সিঙ্গাপুরে। বাবা অবসর নেওয়ার পর ধুবুরির বাড়িতেই থাকেন। লোডশেডিংয়ের ধাক্কায় ধুবুরির বাড়িতে নাতনির ভারত-বিজয় টেলিভিশনে দেখতে পারেননি ঠাকুমা মায়ারানি চট্টোপাধ্যায়, দুই খুড়তুতো বোন সুদীপ্তা, সুচিত্রা। কিন্তু গভীর রাতে সেরা সুন্দরীর নাম ঘোষণার পরই প্রবীরবাবু বাড়িতে খবর দেন। সেই থেকে মহাত্মা গান্ধী রোডের চট্টোপাধ্যায় পরিবারে উৎসবের মেজাজ। পোষা জার্মান স্পিৎজ পমপমেরও যেন আনন্দ ধরছে না।
স্কুলে পড়ার সময় থেকেই প্রিয়দর্শিনীর ঝোঁক ছিল অভিনয় আর নাচে। গোয়াহাটির বিভিন্ন জায়গায় নাচে পুরস্কার জিতেছেন তিনি। করেছেন নাটকও। এক সময়ের ফুটবল খেলোয়াড় বাবা প্রবীরবাবু বলেন, ‘‘আমার জ্যাঠা ছিলেন অভিনেতা অনিল চট্টোপাধ্যায়। তাই অভিনয় ওর রক্তে। সেই সঙ্গে ট্রাকিং, খেলাধুলাতেও ঝোঁক। কিন্তু আমি বার বার বলেছি, যাই কর লেখাপড়ায় ফাঁকি দেওয়া চলবে না। ও সেদিকটা বজায় রেখেই চালিয়ে গিয়েছে মডেলিং।’’
নাচ ও অভিনয়ের পাশাপাশি বেড়ানো, বন্ধুত্ব আর খাওয়া অষ্টাদশী লিপির পছন্দ। তার মধ্যে শেষের পছন্দটি আপাতত কড়া অনুশাসনে বাদ রাখতে হচ্ছে।
প্রতিযোগিতা, পড়াশোনা আর ক্যারিয়ারের চাপে অন্য চিন্তা মাথায় আনতে না চাইলেও, ভারতসুন্দরীর কাছে ভালবাসা মানেই সব চেয়ে সুন্দর, শুদ্ধ ও প্রয়োজনীয় এক আবেগ যা জীবনকে এগিয়ে নিয়ে যায়। তাঁর পছন্দের অভিনেতা রায়ান গসলিং, রাচেল ম্যাকঅ্যাডম্স এবং দীপিকা পাডুকোন। পছন্দের সিনেমা ‘অ্যাবাউট টাইম’, ‘গন গার্ল’ আর ‘জিন্দেগি না মিলেগি দোবারা’।
‘গ্র্যান্ড ফিনালে’তে শাহরুখ খানের সঙ্গে তাঁর নতুন ছবির গানের তালে নাচও ধুবুরির লিপির আরও একটা স্বপ্নপূরণ। মা পাপিয়াদেবী বেসরকারি সংস্থায় কর্মরত। তিনি বলেন, ‘‘মেয়েকে কোনওদিনই আমরা কোনও কিছু চাপিয়ে দিইনি। যা মন থেকে চেয়েছে, করেছে। এ বার যদি পুরোপুরি অভিনয়ে যেতে চায়। তাই যাবে।’’
||আপডেট: ০৮:০৩ অপরাহ্ন, ১২ এপ্রিল ২০১৬, মঙ্গলবার
চাঁদপুর টাইমস /এমআরআর