Home / জাতীয় / বাঙালির গৌরবদীপ্ত স্বাধীনতার দিন আজ
বাঙালির

বাঙালির গৌরবদীপ্ত স্বাধীনতার দিন আজ

আজ ২৬ মার্চ। বাঙালির সেই গৌরবদীপ্ত দিন। মহান স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস। হাজার বছরের পরাধীনতার শৃঙ্খল ভেঙে ১৯৭১ সালের এ দিনে বিশ্বের বুকে স্বাধীন অস্তিত্ব ঘোষণা করেছিল বীর বাঙালি। সবুজ জমিনে রক্তিম সূর্যখচিত মানচিত্রের বাংলাদেশ নামে দেশটি স্বগৌরবে স্থান পায়। বাঙালি জাতির জীবনে ২৬ মার্চ দিনটি একইসঙ্গে গৌরব ও শোকের। একাত্তরের ২৫ মার্চ দিবাগত রাতে পাকিস্তানি সামরিক জান্তা বাঙালির ওপর চালায় ইতিহারের নৃশংসতম হত্যাযজ্ঞ। ২৬ মার্চ প্রথম প্রহরে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ঢাকায় বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা দেন। যে ঘোষণা বাংলাদেশসহ বিশ্ব গণমাধ্যমে অত্যন্ত গুরুত্বের সঙ্গে প্রচারিত হয়।

স্বাধীনতার ৫১তম বার্ষিকীতে জাতি মুক্তিযুদ্ধে আত্মদানকারী শহীদদের স্মৃতির প্রতি গভীর শ্রদ্ধা নিবেদন করবে। দিবসটি উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও সংসদের বিরোধী দলীয় নেতা গোলাম মোহাম্মদ কাদের পৃথক বাণী দিয়েছেন। দেশবাসীকে জানিয়েছেন শুভেচ্ছা। দিবসটি উদযাপনে রাষ্ট্রীয়ভাবে নেওয়া হয়েছে নানা কর্মসূচি। এছাড়াও বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক দল এবং সংগঠনের পক্ষ থেকে নানা কর্মসূচির মাধ্যমে ঐতিহাসিক এ দিনটি উদযাপন করা হবে। আজ সাধারণ ছুটির দিন।

১৯৭১ সালের ২৬ মার্চ, একটি স্বাধীন জাতি হিসেবে আমাদের আনুষ্ঠানিক আত্মপ্রকাশ হলেও ১৯৪৭ সালে দ্বিজাতি তত্ত্বের ভিত্তিতে পাকিস্তান নামের পৃথক রাষ্ট্রের জন্মের পরই তরুণ ছাত্রনেতা শেখ মুজিব এ ভূখণ্ডে একটি সার্বভৌম রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার স্বপ্ন দেখেছিলেন। দিনে দিনে পাকিস্তানিদের সামাজিক, অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক বৈষম্যমূলক মনোভাব স্পষ্ট হয়ে উঠেছিল। শেখ মুজিব যে কোনো ত্যাগের বিনিময়ে বাঙালিদের অধিকার ও আত্মমর্যাদা রক্ষার প্রশ্নে অটল ছিলেন। তার অত্যন্ত সুদূরপ্রসারী চিন্তার ফসল ছাত্রলীগ এবং আওয়ামী লীগ। যে সংগঠন দুটির সঙ্গে জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত তিনি ওতপ্রোতভাবে জড়িত ছিলেন।

’৫২-এর ভাষা আন্দোলন থেকে শুরু করে ’৫৪-এর যুক্তফ্রন্ট নির্বাচনে জয়লাভ, ’৬২-এর আইয়ুব বিরোধী আন্দোলন, ’৬৬-এর ছয় দফা, ’৬৯-এর গণঅভ্যুত্থানসহ সব আন্দোলন-সংগ্রামে এ সংগঠন দুটির ভূমিকা ছিল অপরিসীম। গণরোষের মুখে আইয়ুব খান আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা সংক্রান্ত অধ্যাদেশ বাতিল করতে বাধ্য হয়েছিল।

শেখ মুজিব হয়ে উঠেছিলেন বাঙালির আশা-আকাঙ্ক্ষার বাতিঘর, বঙ্গবন্ধু। ১৯৬৯ সালের ৫ ডিসেম্বর হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দীর মৃত্যুবার্ষিকীতে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব ঘোষণা করেছিলেন, ‘আজ হতে পাকিস্তানের পূর্বাঞ্চলীয় এদেশটির নাম হবে পূর্ব-পাকিস্তানের পরিবর্তে শুধুমাত্র বাংলাদেশ। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ ’৭০-এর নির্বাচনে জাতীয় পরিষদে একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করে। কিন্তু, পাক-সামরিক জান্তা ক্ষমতা হস্তান্তর না করে টালবাহানা শুরু করে। শেখ মুজিব অসহযোগ আন্দোলনের ডাক দেন এবং ৭ মার্চের ঐতিহাসিক ভাষণে দীর্ঘ ২৩ বছরের শাসন-শোষণ থেকে মুক্তির লক্ষ্যে সুনির্দিষ্ট রূপরেখা দেন। ২৩ মার্চ সারাদেশে বাংলাদেশের মানচিত্র খচিত পতাকা উত্তোলন করা হয়।

একাত্তরের ২৫ মার্চ মধ্যরাতে পাকিস্তানি সৈন্যরা ‘অপারেশন সার্চ লাইট’ এর নামে ঘুমন্ত নিরস্ত্র বাঙালির ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ে। চালায় নির্মম হত্যাযজ্ঞ। ২৬ মার্চ প্রথম প্রহরে শেখ মুজিবকে গ্রেফতার করা হয়। গ্রেফতার হওয়ার পূর্বেই তিনি স্বাধীনতার আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দেন। বাঙালির জননেতাকে পাকিস্তানের মিয়াওয়ালী কারাগারে বন্দি করে অমানুষিক নির্যাতন চালানো হয়। জাতির পিতার ডাকে বাংলার মুক্তিপাগল জনতা ‘জয় বাংলা’ স্লোগানে উজ্জীবিত হয়ে যার যা কিছু আছে তাই নিয়ে দেশমাতৃকার মুক্তির জন্য যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়ে।

যুদ্ধকালীন ১৭ এপ্রিল বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে রাষ্ট্রপতি, সৈয়দ নজরুল ইসলামকে উপ-রাষ্ট্রপতি, তাজউদ্দীন আহমদকে প্রধানমন্ত্রী, ক্যাপ্টেন এম মনসুর আলী এবং এএইচএম কামারুজ্জামানকে মন্ত্রী করে মুজিবনগর সরকার শপথ গ্রহণ করে। পরবর্তীকালে মুক্তিযুদ্ধকে সঠিকভাবে পরিচালনার জন্য সারাদেশকে ১১টি সেক্টরে ভাগ করা হয় এবং একজন প্রধান সেনাপতি নিয়োগ করা হয়।

দীর্ঘ ৯ মাস সশস্ত্র যুদ্ধ শেষে ১৬ ডিসেম্বর বিজয় অর্জনের মাধ্যমে স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশ শত্রুমুক্ত হয়। ‘পৃথিবীর এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্ত পর্যন্ত/ঘোষণার ধ্বনি-প্রতিধ্বনি তুলে/নতুন নিশান উড়িয়ে/দামামা বাজিয়ে দিগ্বিদিক/এই বাংলায় তোমাকে আসতেই হবে হে স্বাধীনতা।’ সত্যিই বাংলায় এসেছে সেই মহার্ঘ্য স্বাধীনতা।

এক সাগর রক্তের বিনিময়ে বাঙালি হায়েনার ছোবল থেকে সত্যিই স্বাধীনতা ছিনিয়ে এনেছিল। লক্ষ প্রাণের বলিদানে আর লাখো মা-বোনের সম্ভ্রমহানিতে অর্জিত এ স্বাধীনতা জাতির জীবনে চির অম্লান হয়ে থাকবে।