চাঁদপুর সদর উপজেলার বাগাদী ইউনিয়নে মসজিদের ইমামসহ ৫ জন কুরআনের হাফেজকে পিটিয়ে রক্তাক্ত আহত করা হয়েছে। হামলা করে ভাংচুর করা হয়েছে তাদের বাসতবাড়ি। হামলাকারীদের হাত থেকে রক্ষা পায়নি পরিবারের নারী সদস্যরাও।
এমন অমানবিক ঘটনাটি ঘটে গত ২৭ এপ্রিল বৃহস্পতিবার রাতে ইউনিয়নের ৯নং ওয়ার্ডস্থ ব্রাহ্মণ শাখুয়া গ্রামের ভুইয়া বাড়িতে। আহতরা হলেন, ওই এলাকার আবদুর ছাত্তার ভুইয়ার পুত্র হাফেজ মাসুদুর রহমান (৩৭), হাফেজ নাসির হোসেন (৩২), হাফেজ শরীফুল ইসলাম (২৭), হাফেজ মাহবুবুর রহমান (২০), নাতি হাফেজ মাওলানা মোস্তাকিম বিল্লাহ (২০), স্ত্রী রাবেয়া বেগম (৬০) ও পুত্রবধূ নুরজাহান বেগম।
আহতরা ৯৯৯ ফোন করলে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনেন। এ আহতদের পরিবারের পক্ষ থেকে চাঁদপুর মডেল থানায় লিখিত অভিযোগ করা হয়েছে। বর্তমানে এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে ওই এলাকাজুড়ে এখনো থমথমে পরিস্থিতি বিরাজ করছে।
আহত হাফেজ শরীফুল ইসলাম জানান, আমাদের বাড়িতে এক দাগে সর্বমোট ৪৩ শতক জমি রয়েছে। এর মধ্যে আমাদের পৈত্রিক সম্পত্তি সাড়ে ২১শতক। যা প্রায় ৬০/৭০ বছর ধরে দলিলমূলে আমার পিতা এবং আমরা ভোগদখল করে আসছি। আমাদের পাশ্ববর্তী শফিক ঢালীর সাথে গত কয়েক বছর ধরে জমি নিয়ে দ্বন্দ্ব ছিল। অবশেষে গত ২৭ এপ্রিল চাঁদপুর মডেল থানা পুলিশের উদ্যোগে এলাকার গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ এবং সালিশীদের মাধ্যমে ২দিন ধরে সম্পত্তি মাপযোগ করে আমাদের ৩ পরিবারকে সীমানা নির্ধারণ করে দেয়া হয়। এতে উভয় পরিবারের মাঝে দীর্ঘ দিনের দ্বন্দ্বের সমাধান হয়।
এদিকে ওই রাতে তৃতীয় পক্ষের কেউ আমাদের মধ্যে ঝগড়া বাঁধিয়ে দিতে পশ্চিম পাশের দু’টি সীমানা প্রাচীর উঠিয়ে অন্য জায়গায় পুতে দেয়। এ নিয়ে পাশ্ববর্তী মজিদ গাজীর পরিবার আমাদের সাথে জগড়া শুরু করে। এক পর্যায়ে মজিদ গাজীর পুত্র রশীদ গাজী, মাসুদ গাজী, শহীদ গাজী, আল আমিন গাজী, আমির গাজীর পুত্র মজিদ গাজী এবং স্থানীয় ইউছুফ গাজী বহিরাগত সন্ত্রাসীদের নিয়ে আমাদের উপর আতর্কিত হামলা করে। তারা আমার ভাই, ভাতিজা এবং মা-ভাবিকে পিটিয়ে রক্তাক্ত করে।
তিনি আরো জানান, আমাদের এলাকায় কিছু দুষ্ট প্রকৃতির লোক রয়েছেন। তারা একজনের সাথে আরেক জনের ঝগড়া বাঁধিয়ে ফয়দা লুটে। এলাকার মানুষ ভয়ে তাদের নামও প্রকাশ করতে পারে না। তাদেরই একজন স্থানীয় মৃত জব্বর ভূঁইয়ার ছেলে ইউছুফ ভূঁইয়া। এই ইউছুফ ভূঁইয়ারাই আমাদের মধ্যে ঝগড়া লাগিয়েছে।
আহত মসজিদের ইমাম মাসুদুর রহমান বলেন, আমার ৬ ভাইয়ের মধ্যে ৫ ভাই কুরআনের হাফেজ। আমরা মসজিদের ইমামতিসহ বিভিন্ন ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানের সাথে সম্পৃক্ত থেকে শান্তিপূর্ণভাবে জীবিকা নির্বাহ করে থাকি। আমরা কখনোই ঝগড়াবিবাদ চাই না। অভিযুক্তরা পরিকল্পিতভাবে রাতের আঁধারে আমাদের ওপর হামলা করেছে। আমাকে বাঁচাতে আমার স্ত্রী বোরকা পরে এগিয়ে এসেছিলো। তারা আমার স্ত্রীর চুল ধরে মেরেছে। আমার মাকেও মেরেছে। আমরা অভিযুক্তদের কঠোর শাস্তির দাবী করছি।
এ বিষয়ে অভিযুক্ত রশীদ গাজীর চাচা মোক্তার গাজী এবং স্ত্রী তাসলিমা বেগম বলেন, তারা নিজেরাই সীমানা খুটি উঠিয়ে আমাদের জমির উপর পুতেছে। এ নিয়ে বাঁধা দেয়াকে কেন্দ্র করে তারা সব ভাইরা মিলে আমাদের উপর হামলা করে। আমরাও এ ঘটনার সুষ্ঠ তদন্ত এবং বিচার দাবী করছি।
মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা চাঁদপুর মডেল থানার এসআই কবির হোসেন বলেন, বাগাদী ইউনিয়নে হাফেজ পরিবারের উপর হামলার ঘটনায় থানায় একটি মামলা দায়ের করা হয়েছে। আমরা ঘটনাস্থলে তদন্তের জন্য গিয়েছি। এ বিষয়ে যথাযথ আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
প্রতিবেদক: আশিক বিন রহিম, ৩০ এপ্রিল ২০২৩