গ্যাসের দাম বাড়ানোর প্রস্তাব দিয়েছে দেশের বৃহত্তর নোয়াখালী, কুমিল্লা ও চাঁদপুর জেলায় বিতরণের দায়িত্বে থাকা গ্যাস বিতরণ কোম্পানি বাখরাবাদ গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেড।
সোমবার (১৭ জানুয়ারি) বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনের (বিইআরসি) কাছে এই প্রস্তাব জমা দেয় তারা। কমিশনের এক সদস্য বিষয়টি নিশ্চিত করেন।
জানা যায়, বাখরাবাদ কোম্পানি একচুলা ৯২৫ টাকা থেকে বাড়িয়ে ২০০০ টাকা, দুই চুলা ৯৭৫ টাকা থেকে বাড়িয়ে ২১০০ টাকা করার প্রস্তাব দিয়েছে। অন্যান্য কোম্পানিগুলোকে দ্রুত প্রস্তাব জমা দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছে পেট্রোবাংলা। চলতি সপ্তাহের মধ্যে সব কোম্পানি প্রস্তাব জমা দিতে পারে বলে সূত্র জানায়।
বাখরাবাদ তার প্রস্তাবে আবাসিকে প্রিপেইড মিটার ব্যবহারকারী গ্রাহকদের প্রতি ঘনমিটারের বিদ্যমান মূল্য ১২.৬০ টাকা থেকে বাড়িয়ে ২৭.৩৭ টাকা, সিএনজি প্রতি ঘনমিটার ৩৫ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৭৬.০৪ টাকা, হোটেল-রেস্টুরেন্টে ২৩ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৪৯.৯৭ টাকা, ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্পে ১৭.০৪ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৩৭.০২ টাকা, ক্যাপটিভ পাওয়ারে ১৩.৮৫ টাকা থেকে ৩০.০৯ টাকা এবং চা শিল্পে ১০.৭০ টাকা বাড়িয়ে ২৩.২৪ টাকা করার প্রস্তাব করেছে।
অন্যদিকে বিদ্যুৎ ও সার কারখানায় থাকা বিদ্যমান দর ৪.৪৫ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৯.৬৬ টাকা করার প্রস্তাব করা হয়েছে। বাড়তি বিদ্যমান গড় ৯.৩৬ টাকা থেকে বাড়িয়ে ২০.৩৫ টাকা করার প্রস্তাব করা হয়েছে।
এ বিষয়ে কমিশনের এক সদস্য বলেন, চারটি কোম্পানি গত সপ্তাহেই প্রস্তাব দিয়েছিল। কিন্তু তাদের প্রস্তাব কমিশনের নিয়ম অনুযায়ী হয়নি বলে আমরা ফেরত দিয়েছিলাম। আজ আবার বাখরাবাদ পাঠিয়েছে। এখনও প্রস্তাব খোলা হয়নি। পুরোপুরি পর্যালোচনা করলেই বোঝা যাবে তাদের প্রস্তাব পূর্ণাঙ্গ কিনা। চলতি সপ্তাহে আরও প্রস্তাব আসবে বলে আমরা জানতে পেরেছি। তিনি বলেন, দাম বাড়ানোর প্রস্তাব পেলে প্রথমে যাচাই-বাছাই করে দেখা হবে। আবেদন যৌক্তিক হলে গণশুনানির মাধ্যমে দর চূড়ান্ত করে থাকে কমিশন।
ওদিকে বাখরাবাদের প্রস্তাবে বলা হয়েছে, প্রতি ঘনমিটার এলএনজি (তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস) আমদানি মূল্য ৩৬.৬৯ টাকা, মুসক, অগ্রিম আয়কর, ফিন্যান্সিং চার্জ, ব্যাংক চার্জ ও কমিশন, রি-গ্যাসিফিকেশন চার্জ, ভোক্তা পর্যায়ে উৎসে কর সবমিলিয়ে খরচ দাঁড়াচ্ছে ৫০.৩৮ টাকা। যে কারণে ভোক্তা পর্যায়ে গ্যাসের দাম ১ ফেব্রুয়ারি থেকে বাড়ানোর প্রয়োজন।
অন্যদিকে পেট্রোবাংলা গত সপ্তাহে জমা দেওয়া তাদের লিখিত প্রস্তাবে বলেছে, রাষ্ট্রীয় কোম্পানি বাপেক্স ও সিলেট গ্যাস ফিল্ডের গ্যাসের প্রতি ঘনমিটারের গড় ক্রয়মূল্য পড়ছে ১.২৬ টাকা, শেভরনের থেকে কিনতে হচ্ছে ২.৮৯ টাকা, তাল্লো থেকে ৩.১০ টাকা করে। অন্যদিকে এলএনজির প্রকৃত ক্রয়মূল্য ৩৬.৬৯ টাকা অন্যান্য চার্জ দিয়ে ৫০.৩৮ টাকা পড়ছে। দৈনিক ৮৫০ মিলিয়ন ঘন ফুট এলএনজি আমদানি বিবেচনায় এই দর।
আমদানিকৃত এলএনজির সঙ্গে দেশীয় গ্যাসের মিশ্রণ শেষে গড় খরচ দাঁড়াবে ৬৫ হাজার ২২৫ কোটি ৭৫ লাখ টাকা। এই টাকা ভোক্তাদের কাছ থেকে তুলতে হলে প্রতি ঘনমিটারের বাড়তি গড় ২০.৩৫ টাকা করা নির্ধারণ করা জরুরি। এই দর দৈনিক ৮৫০ এমএমসিএফ এলএনজি আমদানি বিবেচনায়। আমদানির পরিমাণ বাড়তে থাকলে গড়মূল্য বেড়ে যাবে সেই হারে। তবে গত সপ্তাহেই পেট্রোবাংলাসহ তিতাস গ্যাস ট্রান্সমিশন এন্ড ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি, পশ্চিমাঞ্চল গ্যাস কোম্পানি, জালালাবাদ গ্যাস ট্রান্সমিশন ও ডিস্ট্রিবিউশন সিস্টেম লিমিটেডের আবেদন ফিরিয়ে দেয় কমিশন। (বাংলা ট্রিবিউন)