বাক প্রতিবন্ধী হয়েও জীবন সংগ্রামে থেমে নেই মতলবের আনোয়ার

প্রতিবন্ধী হয়েও জীবন সংগ্রামে থেমে নেই চাঁদপুরের মতলব উত্তর উপজেলার ছেংগারচর পৌরসভার ৫নং ওয়ার্ডের ঘনিয়ারপার গ্রামের বাসিন্দা আনোয়ার হোসেন। বাক প্রতিবন্ধী আনোয়ার (৩৫)। আনোয়ার হোসেন প্রতিবন্ধী ভাতা পেলেও তার উপর ভরসা না করে তিনি টেইলার্স এন্ড সেলাই মেশিন সার্ভিসিং সেন্টার করেছেন। টেইলার্স দোকানে মাধ্যমে তিনি তিনি সফলতার মুখ দেখছেন।

প্রতিবন্ধকতা কখনোই সাফল্যকে আটকে দিতে পারে না। প্রতিবন্ধীরা বুঝা নয়,সঠিক যত্ন ও পরিচর্যা পেলে ওরাও বদলে দিতে পারে সমাজ, সংসার ও পরিবার। সমাজের মানুষের শুভ দৃষ্টি ও রাষ্ট্রের সামান্য সহযোগিতা পেলে অন্যদশ জন সুস্হ্য স্বাভাবিক মানুষের মতই দেশ ও শিক্ষিত জাতী গঠনে ভুমিকা রাখতে পারে সম পরিমান।

এমনি একটি উদাহারন চাঁদপুরের মতলব উত্তর উপজেলার ছেংগারচর পৌরসভার ৫নং ওয়ার্ডের ঘনিয়ারপার গ্রামের বাসিন্দা আনোয়ার হোসেন। প্রতিবন্ধী হয়েও জীবন সংগ্রামে থেমে নেই। কাজের মাঝেই তার পরম আনন্দ। তার বাবার নাম মৃত আব্দুল মালেক মৃধা, মায়ের নাম মৃত খোকন বেগম। ব্যাক্তি জীবনের তিনি বিবাহিত, তিন সন্তানের জনক তিনি।

আনোয়ার হোসেন তার নিজস্ব প্রচেষ্টায় ঘনিয়ারপার মোড়ে দিয়েছেন আনোয়ার টেইলর্স এন্ড সেলাই মেশিন সার্ভিসিং সেন্টার। নিজেই ব্যবসা পরিচালনা করেন। যার আয় হয় তাই দিয়েই চলে তাদের সংসার।

টেইলার্স হিসেবে আনোয়ার হোসেন একজন সুপরিচিত মুখ। বাকপ্রতিবন্ধী হয়েও থেমে নেই তার কর্মজীবন। সংসারে একমাত্র উপার্জনকারী সে। কাজের মাঝেই তার পরম আনন্দ।

বাক প্রতিবন্ধী আনোয়ার হোসেন। ভাগ্যের নির্মমপরিহাসে বাক প্রতিবন্ধী হিসেবেই তার জম্ম। সে মনের ভাবটুকু দশজনের মত প্রকাশ করতে পারেনা। এরপরও নিজেকে খাট করে দেখেনা। তিন ভাইয়ের মধ্যে সংসারে আনোয়ার হোসেন (৩৬) সবার মধ্যে বড় । আনোয়ার স্পষ্টভাবে কথা বলতে না পারলেও ইশারায় ইঙ্গিতে কথা বলে বুজিয়ে দেন সবাইকে। সে বাকহীন হলেও তার কোন দুঃখ নেই বলতে থাকে সবই আল্লাহর ইচ্ছা।

সে বোবা হলেও তার কোন দুঃখ নেই ইশারায় জানতে চাইলে দেখিয়ে দিয়ে বলতে থাকে সবই আল্লাহর ইচ্ছা। আনোয়ারের বিবাহিত সংসারে এক ছেলে দুই মেয়ে রয়েছে। গরীব হলেও মোঃ আনোয়ার হোসেন এর তার নিজ এলাকায় ভাল শুনামও রয়েছে এবং সে একজন ভাল ব্যক্তি হিসেবে পরিচিত। সবার কাছে খুবই পরিচিতি রয়েছে আনোয়ার হোসেন।

আনোয়ার হোসেনের ব্যবহার মানুষের ভালবাসা বা চলাফেরা খুবই মুগ্ধকরে দেয়। তার ভালবাসায় সিগ্ধ হয়ে তাকেই পছন্দ করে সবাই এবং এলাকা পেরিয়ে দূরদূরান্তেও তার ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। সবচেয়ে একটি মজার ব্যাপার হল আনোয়ার কারো কোনো কাজের দায়িত্ব পেলে আন্তরিকতার সাথে দায়িত্ব পালন করে।

সে জানায় যখন তার মনের কথাটি বুঝাতে অক্ষম হয় তখন মাটিতে বা কাগজে সুন্দর হাতে লিখে বুঝানোর চেষ্টা করেন। এলাকাবাসির দাবি আনোয়ার হোসেনকে যদি সরকারের পক্ষ থেকে সহযোগীতা করা হয়, তাহলে সে কারো বোঝা না হয়ে আত্ননির্ভরশীল হবে।

আনোয়ার হোসেনের স্বপ্ন বাস্তবায়ন হলে বোবারা আর কারো বিরক্তের কারন না হয়ে নিজের কর্ম নিজে করে নিজের জীবনটা সুন্দর করে সাজাতে পারবেন।

তার পার্শ্ববর্তি ঘনিয়ারপাড় গ্রামের ছেংগারচর পৌরসভার সাবেক মহিলা কাউন্সিলর মিল্লাতুনেছা মিলি বলেন, আনোয়ার প্রতিবন্ধী হয়েও যে নিজের কর্ম-দক্ষতায় নিজের পুরো সংসারের খরচ বহন করছে টেইরার্স দোকান করে। এটা সমাজের জন্য গৌরবের। আনোয়ারকে দেখে আরো অনেক মানুষ আছে স্বাবলম্বী হতে পারে। শারীরিক বা বাকপ্রতিবন্ধী যাদের দোকান আছে তাদের যদি আর্থিক সহায়তা দেওয়া হয়। তাহলে তাদের দোকান গুলো উন্নত করতে পারবে। শারীরিক বা বাক প্রতিবন্ধীদের কর্মসংস্থানের আওতায় আনলে এবং দোকান করার জন্য আর্থিক সহায়তা দিলে দোকান করে নিজেদের সংসারের খরচ বহন করতে পারবে।

উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা আনিসুর রহমান তপু বলেন, বর্তমান সরকার প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের সমঅধিকার ও সমমর্যাদা প্রদানে বদ্ধপরিকর। আমারা উপজেলায় প্রতিবন্ধীদের কার্ড শতভাগ করবার জন্য কাজ করে যাচ্ছি।

বাক প্রতিবন্ধী আনোয়ার হোসেন প্রতিবন্ধী কার্ডের সুবিধা ভোগ করছে এছাড়াও দগ্ধ ও প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের পুর্নবাসন কার্যক্রম বাস্তবায়ন নীতিমালার আওতায় প্রতিবন্ধীদের আমরা ৫ হাজার টাকা থেক সর্বোচ্চ ৩০ হাজার টাকা পর্যন্ত ঋণ দিয়ে থাকি, যদি ওনি ঋণের জন্য আবেদন করে তাহলে আমারা ঋণের ব্যবস্থা করে দিব।

তিনি আরও বলেন, প্রতিতবন্ধী সেবা ও সাহায্য কেন্দ্র থেকে সরকার প্রতিবন্ধীদের চিকিৎসার জন্য বিভিন্ন উপকরণ দিয়ে থাকে।

নিজস্ব প্রতিবেদক, ৭ সেপ্টেম্বর ২০২২

Share