Tuesday, 02 June, 2015 10:13:04 PM
আবদুল গনি :
চাঁদপুর জেলার বেসরকারি স্কুল কলেজ ও মাদ্রাসার শিক্ষক ও কর্মচারীদের দাবি আদায়ে বাকশিস নেতা অধ্যক্ষ কার্তিক চন্দ্র শীলকে আজ শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করছি।
অধ্যক্ষ কার্তিক চন্দ্র শীল গত ১৫ মে হার্ট এটাকে আক্রান্ত অবস্থায় রাতে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে মৃত্যুবরণ করেন। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৪৯ বছর। অধ্যক্ষ কার্তিক চন্দ্র শীল ১৯৯৪ সাল থেকে ২০১৫ সাল পর্যন্ত বেসরকারি স্কুল, কলেজ ও মাদ্রাসার শিক্ষক কর্মচারীদের শত ভাগ বেতন ভাতার দাবি আদায়ে, উৎসব বোনাস, বাড়ি ভাড়া, ইনক্রিমেন্ট, মেডিকেল ভাতা বৃদ্ধিসহ শিক্ষকদের পেশাগত মর্যাদা রক্ষায় বাংলাদেশ কলেজ শিক্ষক সমিতি ও জাতীয় শিক্ষক কর্মচারী ফ্রন্টের গৃহীত প্রতিটি কর্মসূচিতে তিনি অংশগ্রহণ করে সক্রিয় ভূমিকা পালন করেন।
বিশেষ করে ১৯৯৪, ১৯৯৫, ১৯৯৭, ১৯৯৮, ২০০০, ২০০১, ২০০৩ ও ২০০৫ প্রভৃতি শিক্ষক আন্দোলনে তিনি সরাসরি অংশগ্রহণ করে দাবি আদায়ে আন্দোলন করেন। রাজপথের শ্লোগান, সভাপরিচালনা, সিদ্ধান্ত গ্রহণে পরামর্শ দিয়ে সংগঠনকে এগিয়ে নিয়েছেন।
তার অকাল এ মৃত্যুতে বাংলাদেশ কলেজ শিক্ষক সমিতি ও জাতীয় শিক্ষক কর্মচারী ফ্রন্টের শিক্ষক নেতৃবৃন্দ ও সাধারণ শিক্ষকদের গভীরভাবে মর্মাহত।
অধ্যক্ষ কার্তিক চন্দ্র শীল ১৯৬৬ সালে ১ জানুয়ারী হাজীগঞ্জ উপজেলার অলিপুর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতার নাম ছিল ডাঃ সচীন্দ্র চন্দ্র শীল এবং মাতার নাম বকুল রানী শীল। তিনি ১৯৮২ সালে চাঁদপুর কারিগরি উচ্চ বিদ্যালয় হতে এস.এস.সি, ১৯৮৫ সালে হাজীগঞ্জ মডেল কলেজ হতে এইচএসসি, ১৯৮৮ সালে কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া কলেজ হতে রসায়নে বিএসসি অনার্স এবং ১৯৮৯ চট্টগ্রাম বিশ^বিদ্যালয় হতে একই বিষয়ে মার্স্টার ডিগ্রি অর্জন করেন। বিশ^বিদ্যালয় হতে বের হওয়ার পর পরই দেশের একটি প্রসিদ্ধ ঔষধ কম্পানীতে কর্মকর্তা হিসাবে চাকুরীজীবন শুরু করেন। ৩ বছর পর ১৯৯৪ সালে হাজীগঞ্জের বিদ্যাপীঠ ও মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি বিজরিত প্রতিষ্ঠান নাসির কোর্ট শহীদ স্মৃতি কলেজে রসায়ন শাস্ত্রে প্রভাষক হিসাবে শিক্ষকতার মত মহান পেশায় প্রবেশ করেন। ২০০২ সালে পদোন্নতি পেয়ে ওই কলেজের সহকারী অধ্যাপক হন। তিনি ছিলেন শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের কাছে একজন প্রিয় শিক্ষক। ওই কলেজে শিক্ষকতার সুবাদে তিনি বাংলাদেশ কজেল শিক্ষক সমিতি ও জাতীয় শিক্ষক কর্মচারী ফ্রন্টের সাথে সাংগঠনিকভাবে সম্পৃক্ত হন। তিনি ছিলেন হাজীগঞ্জের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক ও বাকশিসের জেলার প্রচার সম্পাদক। সুদীর্ঘ ১৭ বছর নাসির কোর্ট কলেজের শিক্ষক হওয়ায় শিক্ষক সংগঠনের বিগত আন্দোলনের ফ্রন্টে চলে আসেন। ২০১০ সালের মার্চ মাসে ফরিদগঞ্জের প্রতিষ্ঠান গৃদকালিন্দিয়া হাজরা হাসমত ডিগ্রী কলেজের অধ্যক্ষ হিসাবে দায়িত্ব পালন করেন। ভাগ্যের নির্মম পরিহাস কি এক অজ্ঞাত কারণে তাকে ওই কলেজের অধ্যক্ষের পদ ছেড়ে আসতে হয়েছে। পরবর্তীতে কুমিল্লা দাউদকান্দি নতুনভাবে প্রতিষ্ঠিত একটি কলেজের অধ্যক্ষ হিসাবে দায়িত্ব নেন। ৮ মাস পর ভাগ্য বিড়ম্বিত অধ্যক্ষ কার্তিক চন্দ্রশীলকে দু’ভাইয়ের দ্বন্দ্বে কারণে এক বুক ব্যথা নিয়ে চলে আসতে হয়েছে।
বাকশিস নেতা গত ১৫ মে হার্ট অ্যাটাকে আক্রান্ত হয়। সাথে সাথে চাঁদপুরের একটি বেসরকারি হাসপাতালে নিলে কত্যর্বরত ডাক্তার তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রেফার করেন। রাত ১টায় ঢাকা মেডিকেল কলেজের লিফটে ৬ তলায় যাওয়ার পর তার বরাদ্দকৃত সীটে নেওয়ার পর পরই তিনি মৃত্যুবরণ করেন। পরের দিন ১৬ মে বিকেল ৪ টায় তার নিজ গ্রামের বাড়ি হাজীগঞ্জের অলিপুরে তার অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া সম্পন্ন হয়। জেলা বাকশিসের সাধারণ সম্পাদক ও সহকারী মাধ্যমিক শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদকসহ বেশ ক’জন শিক্ষক নেতা সমবেদনা জানাতে তার বাড়িতে যান। মৃত্যুকালে তার স্ত্রী অ্যাডভোকেট দিপালী ভৌমিক, কন্যা দশম শ্রেণিতে পড়–য়া মাতৃপীঠ স্কুলের ছাত্রী মাধুরী ভৌমিক ও একমাত্র শিশু সন্তান দেবজিৎকে রেখে যান।
চাঁদপুর টাইমস : এমআরআর/২০১৫
চাঁদপুর টাইমস’র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।