কাচঘেরা বিশাল হলঘরের মাঝখানে দাঁড়িয়ে চিফ রিপোর্টার নাজনীন মুন্নী বললেন, দেখেছেন কতো বড় স্টুডিও! এতো বড় স্টুডিও আর কারোরই নেই।
কথায় মিশে আত্মবিশ্বাস ঝরছে তার কণ্ঠে। সেই আত্মবিশ্বাসে সোনালী আগামীর স্পষ্ট আভাস, প্রতিযোগিতামূলক বাজারে দাপুটে বিচরণের দৃঢ় প্রত্যয়।
বাস্তবিকই বিশাল স্টুডিও নিউজ২৪ এর। মেঝে থেকে ছাদের উচ্চতা ৩৯ ফুট। সেই ছাদের খাঁজে খাঁজে বসে গেছে সাদা সাদা বৈদ্যুতিক বাতি। আসছে শুক্রবার (২৫ মার্চ) সন্ধ্যা ৬টায় এই হলঘরেই বসবে বসুন্ধরা গ্রুপের নতুন এই টেলিভিশন চ্যানেলের পরীক্ষামূলক সম্প্রচারের সূচনা আসর।
কেমন হবে সেই অনুষ্ঠানের আসর, কে কোথায় বসবে, কি করবে তার নকশা ইত্যাদি সব প্রাসঙ্গিক বিষয় আলোচনায় আঁকছেন সংশ্লিষ্টরা।
মূল স্টুডিওর পাশে অপেক্ষাকৃত ছোট আর একটি স্টুডিও। তবে নিচের ফ্লোরের অধিকাংশ আয়তন জুড়ে সাজানো হচ্ছে নিউজরুম। মোড়ক হিসেবে ব্যবহৃত নীল পলিথিনগুলো তুললেই হেসে উঠবে ওয়ার্ক স্টেশনের সাদা সাদা টেবিল। কোনটা লম্বা, কোনোটাবা গোল করে সাজানো। কিছু জায়গায় শেষ সময়ের পোঁচ দিচ্ছেন রঙ মিস্ত্রীরা। গোটা ফ্লোর জুড়ে রঙের গন্ধ আর প্রস্তুতি কাজের ধুলার দাপট।
দু’দিন পরই এটি হবে কর্মব্যস্ত ওয়ার্ক স্টেশন। গমগম করবে নিউজরুম। শিডিউলে শিডিউলে ফুরসতহীন ব্যস্ত হয়ে উঠবে মেগা সাইজ স্টুডিও। রোবোটিক ক্যামেরার ফুটেজ এই নিউজরুমে পোলিশ হয়েই সম্প্রচার হতে শুরু করবে ছোট পর্দায়।
সদ্য নির্মিত ভবনটির নিচের ফ্লোরের মতো দোতলাটা অতো খোলামেলা নয়। টেকনিক্যাল, প্রশাসন এবং বার্তা ও রিপোটিং সেকশনের কাণ্ডারিরা বসবেন এখানে। প্রস্তুত ডিডিও ফুটেজ রাখার লাইব্রেরি আর গ্রাফিক্স ল্যাবও। এরইমধ্যে লালগালিচা বসে গেছে দোতলার ফ্লোরে। গালিচাহীন অংশটুকু ঝকঝকে তকতকে। কনফারেন্স রুমে লালগালিচার ওপরে বসানো হয়েছে চকচকে কাঠের আয়তকার টেবিল।
এই ফ্লোরেরই প্রবেশ পথে দাঁড়িয়ে চিফ নিউজ এডিটর শাহনাজ মুন্নী বললেন, একটু তড়িঘড়ি হলেও প্রস্তুতি ভালো। আমাদের সিইও নঈম নিজাম ভাই এর চারিদিকে খেয়াল। কি নিউজ, কি মার্কেটিং, কি টেকনিকাল বিষয় সব দিকেই তার সমান নজর। তার নেতৃত্বে চ্যালেঞ্জে নামতে প্রস্তুত আমরা।
তবে প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ার সফল ব্যক্তিত্ব নঈম নিজাম অবশ্য নিজেকে আলাদা করে তুলে না ধরে সদ্য গঠিত টিমের কাঠামোতেই নিজেকে সেঁধিয়ে রাখতে পছন্দ করলেন।
তাই সেনাপতিদের সঙ্গেই রাখলেন তিনি। একান্ত আলাপচারিতায় সত্যিকার অর্থেই তারা হয়ে উঠলেন পরস্পরের পরিপূরক। একটা পারফেক্ট টিম কম্বিনেশনই বুঝি ডানা মেলে উড়লো বাংলাদেশ প্রতিদিন সম্পাদকের কক্ষে।
পুরো সময়টিতে ‘আমি’ শব্দটি এড়িয়ে চললেন নাকের ডগায় কড়া নাড়তে থাকা নিউজ২৪ এর সিইও। প্রতিবারই তার মুখে শোনা গেলো ‘আমরা’ শব্দটি। টিম ওয়ার্কের জন্য তো এমন অ্যাপ্রোচই দরকার বটে।
এর আগে ইলেকট্রনিক ও প্রিন্ট উভয় মিডিয়াতেই নজিরবিহীন সাফল্যের নজির গড়া নঈম নিজামের আত্মবিশ্বাসী বক্তব্যে একের পর এক মেলতে থাকলো নিউজ২৪ এর ডানা।
সব ধরনের প্রযুক্তি ব্যবহারের প্রত্যয় ব্যক্ত করে তিনি বললেন, আমাদের আছে রোবোটিক ক্যামেরা। বাংলাদেশে তো বটেই, এই দক্ষিণ এশিয়াতেই এ ক্যামেরা কেউ স্থাপন করেনি। সঙ্গে থাকছে ভারচুয়াল স্টুডিও। দেশের ২৪ স্থান থেকে লাইভ সম্প্রচারের ব্যবস্থা থাকছে আমাদের। লাইভ সম্প্রচারের এই স্পট ১২৪টিতে উন্নীত করার ইচ্ছা আছে। আমরা সবার আগে সর্বশেষ খবর দর্শকের কাছে পৌছে দিতে চাই। যেখানেই ঘটনা ঘটবে আমাদের রিপোর্টাররা দ্রুততম সময়ে সেখানে পৌছে যাওয়ার চেষ্টা করবে। এ কাজে আমরা হেলিকপ্টারও ব্যবহার করবো।
মরুভূমি থেকে সমুদ্র, বাংলাদেশের সমৃদ্ধি কিছুই এড়াবে না আমাদের খবর শিকারিদের চোখ। নিউইয়র্ক, লন্ডনে আমাদের অফিস থাকবে। দেশের প্রতিটি জেলায় অফিস থাকবে স্থাপনা। মধ্যপ্রাচ্য থেকে ইউরোপ পর্যন্ত সব দেশে থাকবে করেসপন্ডেন্ট।
কিন্তু বিশ্ব মিডিয়ার সঙ্গে প্রতিযোগিতায় সম্ভাবনার ডানায় কতোটুকু ভর করতে পারবে নিউজ২৪? বাংলাদেশের মতো নিরন্তর লড়াইয়ের একটি দেশে থেকে এমন স্বপ্নপূরণ কতোটুকু সম্ভব জানতে বাইলে যেনো আরো বেড়ে গেলো নঈম নিজাম এর আত্মবিশ্বাস।
মোক্ষম একটা উদাহরণ পেড়ে তিনি বললেন, আফগানিস্তান যুদ্ধের সময়ে সিএনএন ও বিবিসির মতো পশ মিডিয়াকে ছাপিয়ে কিন্তু বিশ্বব্যাপী জনপ্রিয় হয়ে উঠেছিলো আরবী চ্যানেল আল জাজিরা। আমরা আমাদের কাজগুলো ঠিকঠাক করে যেতে পারলে বাংলাভাষায় খবর প্রচার করেও বিশ্ব মিডিয়াকে নাড়িয়ে দেওয়ো সম্ভব। এজন্য নবীন ও প্রবীণের সমন্বয়ে গঠিত হচ্ছে আমাদের টিম।
হেড অব কারেন্ট অ্যাফেয়ার্স সামিয়া রহমান অবশ্য প্রবীণ শব্দটি ব্যবহারের ঘোর বিরোধী। এখানে বরং তিনি অভিজ্ঞ শব্দটি ব্যবহারের পক্ষে।
আর অভিজ্ঞদের দক্ষতার পারদ আরো চড়িয়ে দিতে টেকনিক্যাল এক্সপার্ট আসছে যুক্তরাজ্য, ভারত, জার্মানি ইত্যাদি দেশ থেকে। এরই মধ্যে ২০০০ নতুনের মধ্য থেকে বেছে ৬০ জনকে রাখা হয়েছে তালিকায়। শেষ পর্যন্ত জনা তিরিশেক উদ্যমী সংবাদ কর্মী মূল টিমে কাজ করার সুযোগ পাবেন।
কিন্তু এতো কিছু আয়োজনে আপনারা নতুন কি দিচ্ছেন যা বিদ্যমান চ্যানেলগুলোর চেয়ে আপনাদের আলাদা করে প্রতিষ্ঠিত করবে? এমন প্রশ্নের উত্তরটা অবশ্য আসে সামিয়া রহমানের কাছ থেকে। তিনি বলেন, আমরা যে বড় কিছু করার চ্যালেঞ্জ নিচ্ছি সেটাই আমাদের আলাদা করে তুলে ধরবে।
তার কথার সূত্র ধরে নঈম নিজাম বলেন, এখন মানুষ ঘটার সঙ্গে সঙ্গে ঘটনা জানতে, ছবি দেখতে চায়। তাই প্রতিদিনই আমাদের কোনো না কোনো লাইভ সম্প্রচারের ব্যবস্থা থাকবে।
বিভিন্ন বিভাগে দক্ষ কর্মীরা আমাদের এখানে যোগ দিয়েছেন। সাইমন ড্রিং এর অনেক কর্মী এখানে এসেছেন। গ্রাফিক্সের টিমও ভালো। তবে দক্ষদের আমরা আরো প্রশিক্ষীত করে তুলবো। নতুন দর্শক তৈরি করবো। যেসব দর্শক এখন টেলিভিশন বিমুখ তাদেরও ফিরিয়ে আনবো।
সিইও এর এমন বক্তব্যে সায় জানালেন হেড অব নিউজ ইব্রাহিম আজাদ এবং চিফ রিপোর্টার ফারুক হোসেনও।
নঈম নিজাম আরো বললেন, আমরা মুক্তিযুদ্ধের চেতনা, বাংলাদেশের মানচিত্র ও পতাকার প্রশ্নে কোনো আপোস করবো না। বাংলাদেশকে বুকে নিয়ে গণমানুষের পক্ষে লড়বো। কৃষক, গার্মেন্টস কর্মী সবাই আমাদের কাছে গুরুত্বপূর্ণ। আমরা কখনোই দলবাজি করবো না।
ভারতে বাংলাদেশের কোনো টিভি চ্যানেল না দেখতে পাওয়ার বিষয়ে মনোযোগ আকর্ষণ করা হলে নঈম নিজাম বলেন, সাংস্কৃতিক একমুখীতার চ্যালেঞ্জ জয় করতে আমরা বদ্ধপরিকর। আমরা বাংলার ঐতিহ্য অবশ্যই তুলে ধরবো। একটা সময় আমাদের নাটক ছিলো সমৃদ্ধ। আগরতলা, পশ্চিমবঙ্গ, মুর্শিদাবাদের মানুষ একসময় অয়োময় ও এইসব দিনরাত্রি নাটকের জন্য অপেক্ষায় থাকতো। আমরা সেই গৌরব ফিরিয়ে আনতে চাই।
সব সীমাবদ্ধতা কাটিয়ে মাস দুয়েকের মধ্যেই নিউজ২৪ পূর্ণাঙ্গ সম্প্রচারে যাবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন নঈম নিজাম।
সূত্র : বাংলা নিউজ টুয়েন্টিফোর
||আপডেট: ০৬:২৩ অপরাহ্ন, ২৩ মার্চ ২০১৬, বুধবার
চাঁদপুর টাইমস /এমআরআর