মঙ্গলবার, ১৪ এপ্রিল ২০১৫, ১২ : ১৭ অপরাহ্ন
চাঁদপুর টাইমস ডট কম :
বাংলাদেশে বিপজ্জনক বৈরিতা দেখা দিয়েছে বলে মন্তব্য করেছে প্রভাবশালী পত্রিকা ফিনান্সিয়াল টাইমস। সোমবার ভিক্টর ম্যালেটের লেখা এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বাংলাদেশে বর্তমান প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ প্রধান শেখ হাসিনা এবং সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও বিএনপি প্রধান খালেদা জিয়ার মধ্যে দীর্ঘদিন ধরে চলা প্রতিদ্বন্দ্বিতার নতুন মাত্রা ফুটে ওঠেছে সাম্প্রতিক গোলযোগে। অথচ আন্তর্জাতিক সমাজ বিষয়টিতে গুরুত্ব দিচ্ছে না।
প্রতিবেদেনের শুরুতে বলা হয়, প্রায় এক মাস আগে হাসিনা আহমেদের স্বামী বিএনপির সিনিয়র নেতা সালাহ উদ্দিন আহমেদকে চোখ বেঁধে সাদা পোশাকের সশস্ত্র পুলিশ সদস্যরা উত্তর ঢাকার তার এক বন্ধুর বাসা থেকে তুলে নিয়ে যায়। এরপর থেকেই আর তার হদিস মেলেনি।
‘আমি শুধু আমার স্বামীকে ফেরত চাই, আর কিছুই না,’ বলছিলেন হাসিনা আহমেদ। তার কণ্ঠ রুদ্ধ হয়ে আসছিল।
গুলশানের একটি অ্যাপার্টমেন্টে বসে হাসিনা আহমেদ যখন কথা বলছিলেন তখন তার পাশেই ছিল তার এক সন্তান। ‘তারা কেন তাকে আদালতে হাজির করে না?এভাবে তুলে নেয়ার কোনো অধিকার তাদের নেই। আমার চারটি সন্তান আছে।’
বাইরে থেকে দেখলে ঢাকার ব্যস্ত ও আধুনিক সড়ক অন্যান্য উন্নয়নশীল দেশের মতই, এর অর্থনীতিও দ্রুত বিকাশমান। ১৯৯০ সালে সামরিক শাসন শেষ হওয়ার পর থেকেই প্রধানত মুসলিম অধ্যুষিত প্রায় ১৬ কোটি মানুষের এই দেশটিতে প্রাণবন্ত গণতন্ত্র লক্ষ্ করা গেছে, যদিও মাঝে মাঝে সহিংসতা এবং অকার্যকর গণতন্ত্রও ছিল।
তবে বাংলাদেশিরা এখন বলছেন, বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব সালাহ উদ্দিন আহমেদের নিখোঁজ হওয়াটা হলো গত ২৫ বছরের বেশি সময়ের মধ্যে সবচেয়ে ভয়াবহ রাজনৈতিক সহিংসতা, রাষ্ট্রীয় নিপীড়ন এবং আইনশৃঙ্খলাহীনতার মধ্যে নিপতিত হওয়ার সর্বশেষ লক্ষণ।
বাংলাদেশে যে জঘন্য পরিস্থিতি বিরাজ করছে, সালাহ উদ্দিন আহমেদের গুম তার সর্বশেষ নজির। স্থানীয় মানবাধিকার সংস্থা অধিকারের হিসাব অনুযায়ী, ২০০৯ সাল থেকে এ পর্যন্ত র্যাবের হাতে ২০২ জন গুম হয়েছে।
বাংলাদেশে বর্তমান প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ প্রধান শেখ হাসিনা এবং সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও বিএনপি প্রধান খালেদা জিয়ার মধ্যে দীর্ঘদিন ধরে চলা প্রতিদ্বন্দ্বিতার নতুন মাতা ফুটে ওঠেছে সাম্প্রতিক গোলযোগে। প্রধান দলগুলোর মধ্যকার গোলযোগের ফলে ইসলামি চরমপন্থীদের বিপজ্জনক উত্থানের বিষয়টি এড়িয়ে যাচ্ছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, সরকার যদি বিরোধী দলের কর্মীদের গুম বা বিচার-বহির্ভূতভাবে হত্যা না-ও করে, তবে তারা বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলার শিকার হচ্ছে বা এসব দিয়ে তাদের হয়রানি করা হচ্ছে। তাদের অনেকে লুকিয়ে আছেন। অধিকার নিজেও বিদেশী তহবিল থেকে বঞ্চিত হয়ে অর্থ সঙ্কটে পড়েছে। সংস্থাটির প্রধান আদিলুর রহমান খঅন নিজেও অপহরণের শিকার হয়েছিলেন, তাকে দুই মাসের জন্য আটক রাখা হয়েছিল।
মিডিয়াও সরকারের প্রতিহিংসার শিকার হচ্ছে, সাংবাদিকরা গ্রেফতার হচ্ছেন, টেলিভিশন চ্যানেল বন্ধ করা হচ্ছে, ভাইবার, টাঙ্গোর মতো মোবাইল ম্যাসেজিং অ্যাপসে বিঘ্ন সৃষ্টি করা হচ্ছে। এর ফলে একসময় বাংলাদেশীরা সাংবাদিকদের সাথে অবাধে কথা বললেও এখন নাভার্স হচ্ছে।
অল্প কয়েকটি আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা এবং কয়েকজন রাজনীতিবিদের কথা বাদ দিলে, বহির্বিশ্ব বাংলাদেশ সঙ্কট থেকে মোটামুটিভাবে দূরেই রয়েছে। পাশ্চাত্যের সরকারগুলো প্রকাশ্যে বিড়বিড় করে কিছু বলেই শেষ করছে। আর হিন্দু-সংখ্যাগরিষ্ঠ ভারত বিএনপির চেয়ে আওয়ামী লীগ সরকারকেই অগ্রাধিকার দিচ্ছে।
বিশিষ্ট বাংলাদেশিরা এখন শেখ হাসিনা ও খালেদা জিয়ার মধ্যকার ক্রমবর্ধমান তিক্ত বিরোধে উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছেন।
প্রথমত তারা শঙ্কিত যে শেখ হাসিনার শাসন এখন এতোটাই নিপীড়নমূলক যে ভবিষ্যতে বিএনপি সরকার ক্ষমতায় এলে তিনি যে প্রতিহিংসার শিকার হবেন সে কারণে তিনি সরকার পরিবর্তনের কথা ভাবতেই পারছেন না।
সর্বশেষ বিক্ষোভ শুরু হয় ৫ জানুয়ারির নির্বাচনের প্রথম বার্ষিকীতে যেটি বিএনপি বর্জন করে এবং আওয়ামী লীগ এবং শেখ হাসিনা ক্ষমতায় আসেন।
এ সময় শতাধিক লোক নিহত হয়েছে। এ সময় বাংলাদেশের বৃহত্তম শিল্প তৈরি পোশাকের রপ্তানিকারকদের ট্রাকবহর করে অথবা বিমানে করে চট্টগ্রামে পোশাক পৌঁছাতে হয়েছে। অনেক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ ছিল।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে একজন অর্থনৈতিক বিশ্লেষক বলেন, প্রচণ্ড দুর্নীতি ও সামষ্টিক অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতার কথা উল্লেখ করে বাংলাদেশকে কেনিয়ার সাথে তুলনা করেন এবং হাসিনা-খালেদার মধ্যে সাম্প্রতিক দ্বন্দ্ব নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেন।
তিনি বলেন, ‘তারা দু’জনেই বর্তমান অবস্থাটাকে শেষ যুদ্ধ হিসেবে বিবেচনা করছেন। আমার চিন্তা হচ্ছে আমরা আরো কম-বেশি চাপা সহিংসতার দিকে যাচ্ছি। অস্থির অগ্ন্যুৎপাতের একটি উচ্চ পর্যায়ের ‘নতুন স্বাভাবিকতার’ মধ্যে চলছি যেখানে রাজনীতির স্থান খুবই সামান্য।’
বাংলাদেশ পলিসি রিসার্চ ইনিস্টিটিটের চেয়ারম্যান জায়েদি সাত্তার বলেন, ‘রাজনীতির কাছে পণবন্দি থাকার কারণে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি সম্ভাব্যতার নিচে রয়ে গেছে।’
সাবেক সংসদ সদস্য হাসিনা আহমেদ এখনো তার স্বামীকে খুঁজলেও তিনি প্রধানমন্ত্রী হাসিনা, বিভিন্ন মানবাধিকার গোষ্ঠী, মার্কিন, ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন, সংযুক্ত আরব আমিরাত ও অন্যান্য কূটনৈতিক মিশনের সাহায্য চেয়েছেন। তবে তার কোনো প্রভাব এখনো দৃশ্যমান নয়।
বেদনাহত হাসিনা আহমেদ বলেন, তিনি ১০০ ভাগ নিশ্চিত যে, সালাউদ্দিন আহমেদ রাষ্ট্র কর্তৃক অপহৃত হয়েছেন।
তিনি বলেন, ‘আমি জানি না সে বেঁচে আছে না মরে গেছে।’ নিস্তব্ধভাবে তার প্রশ্ন, ‘আমার কিই-বা করার আছে?’
চাঁদপুর টাইমস : ডিএইচ/2015