বাংলাদেশ থেকে প্রতিবছর কয়েক হাজার শিক্ষার্থী স্নাতকোত্তর ও পিএইচডি পর্যায়ে গবেষণা করতে বিদেশে যান। তবে দেশের বিভিন্ন সরকারি বিশ্ববিদ্যালয় থেকেও এমফিল ও পিএইচডি পর্যায়ে গবেষণা ও ডিগ্রি লাভের সুযোগ আছে
সমকালীন বাংলা গানের ধারায় কাজী নজরুল ইসলামের আধুনিক গান নিয়ে পিএইচডি করছেন দেবাশীষ বিশ্বাস। তিনি বলেন, ‘ক্লাস, গবেষণা, থিসিস লেখা, পরীক্ষা ও মৌখিক পরীক্ষায় অংশগ্রহণের মতো নিয়মিত বিষয়গুলো পিএইচডি গবেষণার সঙ্গে যুক্ত। আমি মনে করি, যাঁদের বিদেশে পড়ার তেমন ইচ্ছে নেই বা সুযোগ নেই, তাঁরা চাকরির পাশাপাশি পিএইচডি করতে পারেন দেশে বসেই।’
যুক্তরাষ্ট্রের পিটসবার্গ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পাবলিক অ্যান্ড ইন্টারন্যাশনাল অ্যাফেয়ার্সে পিএইচডি করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের শিক্ষক এ এস এম আলী আশরাফ। তিনি বলেন, ‘গবেষণা ও শিক্ষকতায় ভবিষ্যতে যাঁরা ক্যারিয়ার গড়তে চান তাঁরা পিএইচডি পর্যায়ে গবেষণার সুযোগ নিতে পারেন। পিএইচডি পর্যায়ে গবেষণার বিভিন্ন ধাপ ও পদ্ধতি সম্পর্কে শিক্ষার্থীদের তাত্ত্বিক ও ব্যবহারিক বিভিন্ন বিষয় সম্পর্কে গভীর ও বিশদ আকারে পড়ানো হয়, শেখানো হয়। তাত্ত্বিক ক্ষেত্রে বিভিন্ন মাত্রায় বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে দেশেই গবেষণা করার সুযোগ আছে। পিএইচডি পর্যায়ে পড়াশোনার জন্য প্রয়োজন আগ্রহ, ধৈর্য ও লেগে থাকার অনুপ্রেরণা।’
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে যত সুযোগ
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে নিয়মিত পর্যায়ে এমফিল ও পিএইচডি ডিগ্রি লাভে সুযোগ আছে। এই বিশ্ববিদ্যালয়ের দুই বছরের এমফিল ও পিএইচডি—সব মিলিয়ে চার বছরের প্রোগ্রাম। এমফিল কোর্সের পড়াশোনাকে পূর্ণকালীন কোর্স হিসেবে গণ্য করা হয়। এ জন্য যাঁরা চাকরি করছেন, তাঁদের ছুটি নিয়ে এমফিল গবেষণা করতে হয়। এমফিল ও পিএইচডি প্রোগ্রামে ভর্তির জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার অফিসের এমফিল ও পিএইচডি শাখা থেকে আবেদনপত্র সংগ্রহ করতে হবে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে এমফিল করতে শিক্ষার্থীর চার বছর মেয়াদি স্নাতক সম্মান ডিগ্রি, তিন বছর মেয়াদি স্নাতক সম্মান ও এক বছর মেয়াদি স্নাতকোত্তর ডিগ্রি কিংবা দুই বছর মেয়াদি স্নাতক ও দুই বছর মেয়াদি স্নাতকোত্তর ডিগ্রি থাকতে হয়। শিক্ষাজীবনের সব পরীক্ষায় ন্যূনতম দ্বিতীয় বিভাগ বা শ্রেণিসহ ন্যূনতম ৫০ শতাংশ নম্বর থাকতে হবে। মাধ্যমিক থেকে স্নাতক বা স্নাতকোত্তর পর্যন্ত সব পরীক্ষায় জিপিএ–৫-এর মধ্যে কমপক্ষে ৩.৫ অথবা সিজিপিএ–৪-এর মধ্যে ৩ থাকতে হবে। শুধু ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় নয়, স্বীকৃত যেকোনো বিশ্ববিদ্যালয় থেকে উত্তীর্ণরা ভর্তির জন্য এখানে আবেদন করতে পারবেন।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পিএইচডি গবেষণা করার জন্য প্রার্থীকে এমফিল পাস হতে হয়। শিক্ষাগত যোগ্যতা এমফিলের অনুরূপ। এ ছাড়া প্রার্থীকে ন্যূনতম স্নাতক পর্যায়ে শিক্ষাদানের কমপক্ষে দুই বছরের অভিজ্ঞতা কিংবা দুই বছরের গবেষণার অভিজ্ঞতা বা গবেষণা প্রতিষ্ঠানে দুই বছরের চাকরির অভিজ্ঞতা দেখাতে হবে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ব্যতীত চাকরিরত প্রার্থীরা কর্মস্থল থেকে কমপক্ষে এক বছরের ছুটি নিয়ে পিএইচডি প্রোগ্রামে যোগ দিতে পারেন। প্রতিবছর পিএইচডি গবেষকদের বিভাগীয় একাডেমিক কমিটির সামনে একটি সেমিনারে বক্তব্য দিতে হয়। দুটি সেমিনার রিপোর্ট ছাড়া পূর্ণাঙ্গ থিসিস জমা নেওয়া হয় না। প্রতিবছর পিএইচডির আবেদনপত্র গ্রহণের জন্য বিজ্ঞপ্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা হয়। বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় কিংবা বিদেশের কোনো বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতকোত্তর পরীক্ষায় উত্তীর্ণরা এমফিল ও পিএইচডি প্রোগ্রামে আবেদন করতে পারবেন।
বিস্তারিত: du.ac.bd/footer_widget/footer_widget_item/phd_students
সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে পিএইচডি করতে চাইলে
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়সহ দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে পিএইচডি ও এমফিল করার সুযোগ আছে। বিশ্ববিদ্যালয়ভেদে ভর্তির যোগ্যতা ভিন্ন হয়।
l রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়: রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে পিএইচডি প্রোগ্রামে ভর্তির ক্ষেত্রে প্রার্থীদের অবশ্যই এমফিল বা সমমানের ডিগ্রি থাকতে হবে। তবে কোনো প্রার্থীর যদি এমফিল ডিগ্রি না থাকে, সে ক্ষেত্রে স্বীকৃত কোনো জার্নালে তিনটি গবেষণা প্রকাশনা বা পাঁচ বছরের শিক্ষকতার অভিজ্ঞতা অথবা গবেষণা প্রতিষ্ঠানে ছয় বছর গবেষণার অভিজ্ঞতা থাকতে হবে। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণা প্রতিষ্ঠান ইনস্টিটিউট অব বাংলাদেশ স্টাডিজেও (আইবিএস) দুই বছর মেয়াদি এমফিল এবং তিন বছর মেয়াদি পিএইচডি প্রোগ্রামে ভর্তি হওয়া যায়।
বিস্তারিত: http://www.ru.ac.bd/management/m-phil-ph-d/
l জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়: যাঁরা জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে বিভিন্ন বিভাগের অধীনে এমফিল প্রোগ্রামে ভর্তি হতে চান, তাঁদের চার বছর মেয়াদি স্নাতক সম্মান ও এক বছর মেয়াদি স্নাতকোত্তর ডিগ্রি থাকতে হবে। এ বিশ্ববিদ্যালয়ে যাঁরা পিএইচডি প্রোগ্রামে ভর্তি হতে চান, সেসব প্রার্থীকে অবশ্যই এমফিল বা সমমানের ডিগ্রি নিতে হবে। যাঁদের স্নাতক (সম্মান) পর্যায়ে চার বছরের শিক্ষকতার অভিজ্ঞতা আছে অথবা কোনো প্রতিষ্ঠিত গবেষণা প্রতিষ্ঠানে দুই বছরের গবেষণার অভিজ্ঞতা আছে, তাঁরা এই প্রোগ্রামে ভর্তি হতে পারবেন। ভর্তির যোগ্যতা এমফিলের শর্তগুলোর মতো।
বিস্তারিত: https://juniv.edu/admission/m.phil-phd
l চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়: চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগে যাঁরা এমফিল করতে চান, তাঁদের যেকোনো বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক (সম্মান) ও স্নাতকোত্তর পাস হতে হবে। এ ক্ষেত্রে তিন বছরের স্নাতকসহ স্নাতকোত্তর অথবা চার বছরের স্নাতকসহ স্নাতকোত্তর হতে পারে। এ ক্ষেত্রে প্রার্থীকে শিক্ষাজীবনের সব পর্যায়ে দ্বিতীয় বিভাগসহ অবশ্যই ৫০ শতাংশ নম্বর পেতে হবে। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে পিএইচডি প্রোগ্রামে ভর্তির জন্য এমফিল ডিগ্রি থাকতে হবে। এমফিল ডিগ্রি না থাকলে প্রার্থীকে ৪ বছরের স্নাতকসহ (সম্মান) স্নাতকোত্তর ডিগ্রি এবং থিসিসসহ ৬০ শতাংশ নম্বর পেতে হবে। বিস্তারিত: http://cu.ac.bd/content/index.php?menumapno=45
বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়সহ দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন অনুষদ, বিভাগ ও ইনস্টিটিউটে এমফিল ও পিএইচডি পর্যায়ে গবেষণার সুযোগ আছে। সারা বছরই বিভিন্ন সময়ে ভর্তির জন্য আবেদন গ্রহণ করা হয় বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে।
খরচ ও বৃত্তির সুযোগ
এমফিল ও পিএইচডি প্রোগ্রামে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে কম খরচে পড়া যায়। বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে আবেদনের ফরম ও ভর্তির জন্য ফি গ্রহণ করা হয়। সব বিশ্ববিদ্যালয়ে এমফিল ও পিএইচডি পর্যায়ে ভর্তি হওয়া শিক্ষার্থীরা মাসিক বৃত্তি পেয়ে থাকেন। এ ছাড়া বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন, শিক্ষা মন্ত্রণালয়সহ বিভিন্নভাবে অনুদান ও বৃত্তির সুযোগ পান শিক্ষার্থীরা। শুধু বৃত্তিই নয়, বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের এমফিল ফেলোশিপ ও পিএইচডি ফেলোশিপে আর্থিক বৃত্তি ও সুযোগ-সুবিধা প্রদান করা হয়। (প্রথম আলো অবলম্বনে)
বার্তা কক্ষ, ২৬ জানুয়ারি ২০২০