বিশেষ সংবাদ

বাংলাদেশে পাকিস্তানী ‘সুন্দরী নারী’ কর্মকর্তার নয়া মিশনের চাঞ্চল্যকর তথ্য ফাঁস !

পুলিশের হাতে আটক জেএমবি নেতা ইদ্রিস শেখ ম্যাজিস্ট্রেটকে দেওয়া স্বীকারোক্তিতে বাংলাদেশে জঙ্গি তৎপরতার মদদে ঢাকায় পাকিস্তানি দূতাবাসের এক মহিলা কূটনীতিকের সঙ্গে তার যোগসাজশের কথা জানিয়েছেন । শুধু বাংলাদেশেই নয় ভারতে জাল নোট পাচার ও জঙ্গিদের অর্থ জোগানোর কাজও করেন এই মহিলা কূটনীতিক এমনটাই দাবি তার ।

অভিযুক্ত ফারিনা আর্শাদ নামে এই কূটনীতিক ঢাকার পাক হাই কমিশনে সেকেন্ড সেক্রেটারি (পলিটিক্যাল) হিসাবে কর্মরত।

ঢাকায় পাকিস্তান দূতাবাসের ভিসা কর্মকর্তা মাযহার খানের পর এবার ফারিনা আরশাদ। দূতাবাসটির ‘সেকেন্ড সেক্রেটারি’ (রাজনৈতিক) পদমর্যাদার সুন্দরী এই কর্মকর্তা বাংলাদেশে বসে এই দেশের বিরুদ্ধে ভয়ঙ্কর সব কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে পড়েছেন। বাংলাদেশের অভ্যন্তরে তিনি যেমন জঙ্গি নেটওয়ার্ক মনিটর করছেন, তেমনি জাল মুদ্রার ব্যবসাতেও নেপথ্যে থেকে পৃষ্ঠপোষকতা করে আসছেন। ইংরেজি, উর্দু ও বাংলায় অনর্গল কথা বলতে সক্ষম এই সুন্দরীর রূপের ফাঁদে ইতিমধ্যেই পা দিয়েছেন সরকারের কয়েকজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা, ব্যবসায়ী এবং চিকিৎক।

তাদের ব্ল্যাকমেইল করে সুন্দরী এই কূটনীতিক ভয়ঙ্কর স্বার্থ হাসিলে অনেক দূর এগিয়েও গেছেন— এমন তথ্যপ্রমাণ সংগ্রহের পর সরকারের উচ্চ পর্যায়ে রীতিমতো তোলপাড় শুরু হয়েছে।

সম্প্রতি গোয়েন্দা পুলিশ কয়েকজন সন্দেহভাজন জেএমবি সদস্যকে জিজ্ঞাসাবাদের সময় এই কূটনীতিকের জঙ্গি সংশ্লিষ্টতার বিষয়ে তথ্য পায়। আটক সন্দেহভাজনদের একজন এই তথ্য দিয়ে আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিও দিয়েছেন।

জঙ্গিদের অর্থায়নে জড়িত সন্দেহে গত জানুয়ারিতে এ দূতাবাসেরই মাযহার খান নামের এক কর্মকর্তাকে বহিষ্কার করা হয়। এদিকে পাকিস্তানের বংশোদ্ভূত ইউরোপীয় একটি দেশের দূতাবাসের কনিষ্ঠ এক কূটনীতিকের বিরুদ্ধেও বাংলাদেশবিরোধী কর্মকাণ্ডে তৎপরতার অভিযোগ পাওয়া গেছে।

এরই মধ্যে ফারিনা আরশাদের ভয়ঙ্কর কর্মকাণ্ডসহ নানা বিষয়ে ঢাকা মহানগর হাকিম আবদুল্লাহ আল মাসুদের আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন গ্রেফতার হওয়া ইদ্রিস শেখ ও মো. মকবুল শরীফ। ইদ্রিসের জবানিতে উঠে এসেছে ফারিনা আরশাদ সম্পর্কে পিলে চমকানো চাঞ্চল্যকর তথ্য।

গত ২৮ নভেম্বর রাজধানীর উত্তরা ও খিলগাঁও থেকে জামা’আতুল মুজাহিদীন বাংলাদেশ (জেএমবি)-এর সদস্য ইদ্রিস শেখ, মো. মকবুল শরীফ, মো. সালাম ও মো. মোস্তফা জামানকে গ্রেফতার করে ডিবি পুলিশ। এর মধ্যে ইদ্রিস শেখ ও মকবুল পাকিস্তানের পাসপোর্টধারী।

সরকারি সূত্রের বরাতে একটি জাতীয় দৈনিকে প্রকাশিত খবর সুত্রে, শুধু সরকারবিরোধী ভয়ঙ্কর জঙ্গি তত্পরতাই নয়, বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ মুদ্রাবাজার ধ্বংস করে দেওয়ার ষড়যন্ত্র করছিলেন এই সুন্দরী কূটনীতিক।

জঙ্গি ও জাল মুদ্রার ব্যবসার অভিযোগ এনে গত বছর পাকিস্তান দূতাবাসের ভিসা কর্মকর্তা মাযহার খানকে বহিষ্কারের দাবি জানানো হয়। অভিযোগের পর তড়িঘড়ি করে তাকে প্রত্যাহার করে নেয় পাকিস্তান। এরপর জঙ্গি ও জাল মুদ্রার ব্যবসাসহ বাংলাদেশবিরোধী কর্মকাণ্ড পরিচালনার জন্য দায়িত্ব দেওয়া হয় ফারিনাকে।

সূত্র আরও বলছে, গ্রেফতারকৃত অনেকের দেওয়া তথ্য, সন্দেহভাজন দেশি-বিদেশি নাগরিকের সঙ্গে দেশবিরোধী কথোপকথনের রেকর্ডসহ আরও কিছু গুরুত্বপূর্ণ প্রমাণাদি সংযুক্ত করে পাকিস্তানি কূটনীতিক ফারিনা সম্পর্কিত একটি প্রতিবেদন এরই মধ্যে সরকারের উচ্চ পর্যায়ে জমা দিয়েছে একটি সংস্থা।

পাকিস্তান হাইকমিশনের এই কর্মকর্তার শিষ্টাচারবহির্ভূত কার্যক্রমের জন্য তাকে বাংলাদেশ থেকে বহিষ্কার ও পাকিস্তান থেকে বাংলাদেশে আসা ব্যক্তিদের ওপর কড়া নজরদারির সুপারিশ করা হয়েছে।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, নাশকতার সঙ্গে পাকিস্তান দূতাবাসের সহকারী ভিসা কর্মকর্তা মাযহার খানের সম্পৃক্ততার বিষয়টি স্পর্শকাতর হওয়ায় দীর্ঘ অনুসন্ধান চালায় বাংলাদেশের একাধিক গোয়েন্দা সংস্থা। পরবর্তীতে মাযহার খানকে পাকিস্তান দূতাবাস থেকে প্রত্যাহার করে নেওয়ার পর তার নেটওয়ার্কের সমন্বয় করে আসছেন ফারিনা। তবে মাযহার খানের বহিষ্কারের পর ১৭টি চ্যানেলের মধ্যে ১০টি চ্যানেল বন্ধ হয়ে গেলেও বর্তমানে সাতটি চ্যানেল অতি গোপনে তাদের কার্যক্রম চালিয়ে আসছে।

এই চ্যানেলের মধ্যে রয়েছে— ব্যবসায়ী, শিক্ষক, চিকিত্সক, সরকারি ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা। তবে ফারিনা নতুন করে সরকারের বেশ কয়েকজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার মাধ্যমে নেটওয়ার্কের পরিধি আরও বিস্তৃত করার প্রচেষ্টা চালাচ্ছেন। ভিন্ন ভিন্ন পরিচয়ে তিনি এসব ব্যক্তির সঙ্গে সম্পর্কে জড়ান। মাঝেমধ্যেই তাকে দেখা যায় পাকিস্তান দূতাবাসের পার্শ্ববর্তী অভিজাত রেস্টুরেন্ট ও বার ‘ঢাকা ক্যাপিটাল’-এ। শুধু তাই নয়, মাঝ রাতে তার দেখা মেলে পুরান ঢাকার কিছু খাবারের দোকানে। তবে সঙ্গে ভিন্ন মানুষ।

এদিকে, জিজ্ঞাসাবাদে প্রাপ্ত তথ্য সাংবাদিকদের জানিয়ে গোয়েন্দা পুলিশের কর্মকর্তা মনিরুল সেদিন বলেন, ইদ্রিস ১৯৮৫ সালে ভারত হয়ে পাকিস্তান যান। ১৯৯০ সালে পাকিস্তানি এক নারীকে বিয়ে করে সেখানেই বসবাস শুরু করেন।

পরে ২০০২ সালে সে দেশে ‘পাক-মুসলিম অ্যালায়েন্স’ নামে একটি রাজনৈতিক দলের হয়ে জাতীয় নির্বাচনে অংশ নিয়ে পরাজিত হন। ২০০৭ সালে বাংলাদেশে একাই ফেরত এসে জেএমবির সঙ্গে যুক্ত হয়ে পড়েন।

ইদ্রিস শেখ জবানবন্দিতে যে তথ্য দিয়েছেন, তাতে দেখা যায়, তার বাড়ি বাগেরহাটের চিতলমারী থানায়। তার বাবার নাম মৃত কাওসার শেখ।

মনিরুল বলেন, ইদ্রিস গত দুই বছরে ৪৮ বার পাকিস্তান গেছেন বলে তার পাসপোর্ট থেকে জানা গেছে।

নিউজ ডেস্ক || আপডেট: ০৭:০৭ পিএম, ১৬ ডিসেম্বর ২০১৫, বুধবার

এমআরআর  

Share