একাদশ জাতীয় সংসদের প্রথম অধিবেশন বসছে আজ বুধবার বিকালে। বিএনপি ও গণফোরামের আট সংসদ সদস্যকে বাইরে রেখেই এ অধিবেশন বসছে।
এদিন বিকাল ৩টায় ডেপুটি স্পিকার অ্যাডভোকেট ফজলে রাব্বি মিয়ার সভাপতিত্বে অধিবেশনের কার্যক্রম শুরু হবে। এদিন থেকেই একাদশ জাতীয় সংসদের পাঁচ বছরের মেয়াদ শুরু হবে।
এ প্রসঙ্গে স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী বলেন, ৩০ জানুয়ারি থেকে একাদশ সংসদের মেয়াদ শুরু হচ্ছে, শেষ হবে ২০২৪ সালের ২৯ জানুয়ারি। এই সংসদের সরকার ও বিরোধী দলের সব সদস্যকে অধিবেশনে উপস্থিত থাকতে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, প্রথম দিন ডেপুটি স্পিকারের সভাপতিত্বে অধিবেশন শুরু হবে। স্পিকার ও ডেপুটি স্পিকার নির্বাচনের পর অধিবেশন মুলতবি করা হবে। এর পর নতুন স্পিকার শপথ নিয়ে মুলতবি অধিবেশন শুরু করবেন।
অধিবেশনে রাষ্ট্রপতি দিকনির্দেশনামূলক বক্তব্য দেবেন। ওই ভাষণের ওপর আনিত ধন্যবাদ প্রস্তাব নিয়ে আগামীতে সংসদে বিস্তারিত আলোচনা হবে।
দশম সংসদের মতো এ সংসদেও সরকার ও বিরোধী দল দায়িত্বশীল ভূমিকা রাখবে এবং সংসদ প্রাণবন্ত হবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন।
নিয়মানুযায়ী, নতুন সংসদের প্রথম অধিবেশনের প্রথম বৈঠকে সংবিধানের ৭৪ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী স্পিকার ও ডেপুটি স্পিকার নির্বাচন করতে হয়।
এ কারণে প্রথমেই স্পিকার ও ডেপুটি স্পিকার নির্বাচন করা হবে। স্পিকার পদে ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীই থাকছেন। ডেপুটি স্পিকার পদে আসছেন নতুন মুখ।
বর্তমান দশম জাতীয় সংসদের ডেপুটি স্পিকার অ্যাডভোকেট ফজলে রাব্বি মিয়াকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সংসদবিষয়ক উপদেষ্টা পদে দেখা যেতে পারে। এ পদে আগে ছিলেন প্রয়াত আওয়ামী লীগ নেতা সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত।
প্রথম দিন স্পিকার ও ডেপুটি স্পিকার নির্বাচন ছাড়াও অধিবেশনে সভাপতিমণ্ডলী মনোনয়ন, শোক প্রস্তাব ও অধ্যাদেশ উত্থাপন (যদি থাকে), সংসদীয় কমিটি গঠন (যদি থাকে), সংবিধান বা আইন অনুযায়ী কোনো রিপোর্ট উপস্থাপন (যদি থাকে) ও রাষ্ট্রপতির ভাষণ।
তবে রেওয়াজ অনুযায়ী, প্রশ্নকাল থাকে না। এবার অধিবেশনে পাঁচটি অধ্যাদেশ উপস্থাপন করা হবে। সংসদ অধিবেশন না থাকায় এ অধ্যাদেশগুলো জারি করেছিলেন রাষ্ট্রপতি। এগুলো ক্রমান্বয়ে আইনে পরিণত করা হবে।
এদিন স্পিকার ও ডেপুটি স্পিকার নির্বাচনের পর সভাপতিমণ্ডলীকে মনোনয়ন দেয়া হবে। সংসদে স্পিকার, ডেপুটি স্পিকারের অনুপস্থিতিতে জ্যেষ্ঠতার ভিত্তিতে তারা সংসদের বৈঠকে সভাপতিত্ব করবেন।
রেওয়াজ অনুযায়ী, প্রত্যেক অধিবেশনেই পাঁচজন করে সভাপতি নির্বাচন করা হয়। এর মধ্যে একজন নারী সদস্যকে মনোনয়ন দেয়া হয়।
সংবিধান অনুযায়ী, বছরের প্রথম অধিবেশন শুরুর দিন রাষ্ট্রপতি সংসদে সরকারের বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ড তুলে ধরে বক্তব্য দেন।
পরে রাষ্ট্রপতির ওই ভাষণের ওপর ধন্যবাদ প্রস্তাব জানাতে সাধারণ আলোচনা হয়। তবে এবার আগে আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম মারা যাওয়ায় সংসদে শোক প্রস্তাব আনা হবে।
এর পর তার স্মরণে আলোচনা অনুষ্ঠিত হবে। শোক প্রস্তাব গ্রহণ শেষে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ভাষণ দেবেন। তার ভাষণের পরই সংসদ মুলতবি করা হবে।
অধিবেশন সামনে রেখে সংসদ ভবন এলাকায় নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে। প্রথম দিন দর্শনার্থীদের প্রবেশ নিয়ন্ত্রণ করা হয়েছে। সংসদ ভবন এলাকায় সভা-সমাবেশ নিষিদ্ধ করা হয়েছে।
অধিবেশন কেন্দ্র করে সংসদ ভবনজুড়ে উৎসবের আমেজ বিরাজ করছে। ইতিমধ্যে প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে বলে সংসদ সচিবালয়ের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে।
নতুন সংসদের প্রথম দিনের অধিবেশনে প্রধান বিচারপতি, তিন বাহিনীর প্রধান, প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা, দেশি-বিদেশি কূটনীতিক, রাজনৈতিক নেতা, সরকারি কর্মকর্তা এবং ভিআইপিদের আত্মীয়স্বজনসহ পাঁচ শতাধিক অতিথি উপস্থিত থাকবেন।
ইতিমধ্যে রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় এবং পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়সহ সংশ্লিষ্ট দফতর থেকে সংগৃহীত তালিকা চূড়ান্ত করে আমন্ত্রণপত্র বিতরণ করা হয়েছে।
আমন্ত্রণপত্র ছাড়া কোনো অতিথি ওই দিন সংসদে প্রবেশ করতে পারবেন না বলে সংসদের নিরাপত্তা বিভাগ থেকে জানানো হয়েছে।
গত ৩০ ডিসেম্বর একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। এ নির্বাচনে ২৫৮ আসন পায় আওয়ামী লীগ। ২২ আসন নিয়ে প্রধান বিরোধী দল হয় জাতীয় পার্টি।
দলটির চেয়ারম্যান সাবেক রাষ্ট্রপতি হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ হন বিরোধীদলীয় নেতা। দশম জাতীয় সংসদে ৩৪ আসন নিয়ে প্রধান বিরোধী দলের আসনে ছিল জাতীয় পার্টি।
বিরোধীদলীয় নেতা হন দলটির সিনিয়র কো-চেয়ারম্যান রওশন এরশাদ। নতুন সংসদে বিরোধীদলীয় নেতা নির্বাচিত হলেও সিঙ্গাপুরে চিকিৎসাধীন থাকায় প্রথম দিন অনুপস্থিত থাকবেন হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ। বিরোধীদলীয় উপনেতা জিএম কাদের সংসদে জাতীয় পার্টির নেতৃত্ব দেবেন।
দশম সংসদে বিরোধী দলের পাশাপাশি সরকারে থাকলেও এবার শুধু বিরোধী দলের দায়িত্ব পালন করবেন জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্যরা।
ইতিমধ্যে বিরোধীদলীয় প্রধান হুইপ হিসেবে নিয়োগ পাওয়া জাতীয় পার্টির মহাসচিব মশিউর রহমান রাঙ্গা বলেন, সংসদীয় গণতন্ত্রে বিরোধী দলের গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব রয়েছে।
সেই দায়িত্ব যথাযথভাবে পালনে আমরা প্রস্তুত। সরকারের ইতিবাচক কর্মসূচিতে সহযোগিতা ও নেতিবাচক পদক্ষেপ নিয়ে সমালোচনার মাধ্যমে জনগণের স্বার্থরক্ষায় সংসদে বিরোধী দল দায়িত্ব পালন করবে বলে তিনি জানান।
৩০ ডিসেম্বর নির্বাচনের পর গত ৩ জানুয়ারি সংসদ ভবনের শপথকক্ষে চার ধাপে সংসদ সদস্যরা শপথ নেন। স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী সংবিধান ও কার্যপ্রণালি বিধি অনুযায়ী প্রথমে নিজে শপথগ্রহণ করেন এবং শপথ বইয়ে স্বাক্ষর করেন।
পরে অন্যদের শপথবাক্য পাঠ করান। নির্বাচনে জয়ী বিএনপির ছয়জন ও গণফোরামের দুজন এখনও শপথ নেননি। ফলে তাদের বাইরে রেখেই বসছে নতুন সংসদের প্রথম অধিবেশন। (যুগান্তর)
৩০ জানুয়ারি,২০১৯