বাংলাদেশের সঙ্গে আস্থা-বিশ্বাসের সম্পর্ক পুনঃপ্রতিষ্ঠা চায় যুক্তরাষ্ট্র

বাংলাদেশের সঙ্গে আস্থা-বিশ্বাসের সম্পর্ক পুনঃপ্রতিষ্ঠা চায় যুক্তরাষ্ট্র। এমনটাই জানিয়েছেন সফররত দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়া বিষয়ক মার্কিন সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডনাল্ড লু। প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ উপদেষ্টা সালমান এফ রহমানের বাসভবনে আয়োজিত নৈশভোজে তিনি যুক্তরাষ্ট্রের তরফে সম্পর্ক পুনপ্রতিষ্ঠার ওই আগ্রহ ব্যক্ত করেন। মঙ্গলবার রাতে গুলশানে নৈশভোজ ও বৈঠক শেষে সংবাদ সম্মেলনে ডনাল্ড লুকে উদ্বৃত করে সালমান এফ রহমান বলেন, এ নিয়ে তিনি একটি কথাই বলেছেন। তার ভাষায়- উই ওয়ান্ট টু রিবিল্ড দ্য ট্রাস্ট। আমরা যেটা বুঝেছি তাহলো আমেরিকা আমাদের সঙ্গে আস্থার সম্পর্কটা আরও গভীর করতে আগ্রহী। প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা বলেন, এখানে ‘অনানুষ্ঠানিক’ আলোচনা হয়েছে। অত্যন্ত খোলামেলা এবং ইনফর্মাল কথাবার্তা হয়েছে। তিনি বলেন, “আমরা চাচ্ছি যে, আমাদের সাথে উনাদের সাথে যেন সম্পর্কটা আরও ভালো হয়। উনারা সে কথাটাই বলেছেন।

আমার মনে হয় এটাই উনার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কথা। প্রতিউত্তরে আমরা বলেছি, আমরাও সেটাই চাই। নির্বাচনের আগে-পরে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে যে টানাপোড়েন চলছে সেটাকে ‘ভুল বোঝাবুঝি’ হিসাবে অভিহিত করে উপদেষ্টা আজকের নৈশভোজে সেটা তারা তুলেননি, আমরাও তুলিনি। সালমান এফ রহমান বলেন, তারা যেটা চাচ্ছেন তাহলো, ইলেকশনের পরে আমাদের মধ্যে সম্পর্কটা ভালো করতে। আমরা সেটা স্বাগত জানিয়েছি। ট্রাস্ট রিবিল্ড করার প্রশ্নে উপদেষ্টার কাছে জানতে চাওয়া হয়েছিলো যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে তাহলে আস্থার ঘাটতি কোথায়? জবাবে তিনি বলেন, “উনি একটা কথা বলেছেন, আমরা বলেছি ‘ইয়েস, আমরাও চাই।’ ওটাতেও আমি জিজ্ঞেস করব না উনাকে, কেন মনে করেন যে, ট্রাস্ট ডেফিসিট রয়েছে, বা ট্রাস্ট ডেফিসিটটা কোথায় আছে?

প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা বলেন, আমরা সবাই জানি, নির্বাচনের আগ পর্যন্ত, নির্বাচনের পরেও উনাদের তরফ থেকে একটা রিজার্ভেশন ছিলো। কিন্তু নির্বাচনের পর প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন যখন চিঠি লিখলেন প্রধানমন্ত্রীকে। সেটার পরে আমরা ভাবলাম যে, নির্বাচনটা তারা মেনে নিয়েছেন। আমাদেরকে সরকারকেও তারা মেনে নিয়েছেন। প্রেসিডেন্ট বাইডেনের চিঠিটাতো সবাই দেখেছেন, এটা খুবই পজিটিভ চিঠি ছিল। তারপর থেকে আমরা যুক্তরােষ্ট্রর সঙ্গে এনগেজমেন্ট শুরু করি। বাংলাদেশে নির্বাচন প্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত করলে যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা বিধিনিষেধ দেওয়ার উদ্যোগের নিয়ে আলোচনার বিষয়ে এক প্রশ্নে সালমান এফ রহমান বলেন, ভিসা নিষেধাজ্ঞার বিষয়টি উনারা তুলেননি, আমরাও তুলি নাই। ভিসা নিষেধাজ্ঞাতো শেষ হয়ে গেছে। এ সময় তিনি মৃদু হেসে বলেন এখন ভিসা বিধিনিষেধ তো বিএনপির ওপর দেয়া উচিত। সম্পূরক প্রশ্নে তিনি বলেন, লু’র সঙ্গে এ নিয়ে কোন কথা হয়নি।

র‌্যাব এবং সাবেক-বর্তমান কর্মকর্তাদের উপর নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের বিষয়ে তোলার কথা জানিয়ে তিনি বলেন, র‌্যাবের ওপর থেকে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার এবং বঙ্গবন্ধুর খুনী রাশেদ চৌধুরীর ফিরিয়ে দিতে বলেছি আমরা। জবাবে লু বলছেন, যে দুটা ইস্যু- র‌্যাব এবং রাশেদ চৌধুরীকে ফেরত আনার বিষযটা- তাদের বিচার বিভাগে এখতিয়ারাধীন। তিনি জানিয়েছেন তাদের বিচার বিভাগ, হোয়াইট হাউজ ও পররাষ্ট্র দপ্তর থেকে আলাদা। যুক্তরাষ্ট্রে স্বাধীনভাবে কাজ করে বিচার বিভাগ। তারা বলেছেন, ইস্যু দুটো পুশ করছেন। বলেছেন যে, মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তর নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার এবং খুনিকে ফেরানোর প্রক্রিয়াকে পূর্ণ সমর্থন করে। ডনাল্ড লুর আগের সফরে র‌্যাবের উন্নতির প্রশংসা করার কথা তুলে ধরে সালমান এফ রহমান বলেন, র‌্যাব অনেক উন্নতি করেছে সেটা আগের সফরে জনসম্মুখেই বলেছেন লু। উপদেষ্টা বলেন, পররাষ্ট্র দপ্তরের কথাটা হলো- আমরা আমাদের তরফ থেকে বলেছি যে, উন্নতি হয়ে গেছে, এখন তোমাদেরকে নিষেধাজ্ঞা তুলে দেওয়া উচিত। হোয়াইট হাউজ থেকেও একই কথা বলা হচ্ছে। কিন্তু তারা এটাও বলছেন, তাদের বিচার বিভাগের একটা প্রক্রিয়া আছে। সেই প্রক্রিয়ার মাধ্যমে কাজ চলছে। তিনি এ নিয়ে আশাবাদী বলেও উল্লেখ করেছেন। বাংলাদেশের শ্রম আইন ও নীতি নিয়ে আলোচনার কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা বলেন, আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার (আইএলও) বাংলাদেশের সমঝোতা হয়ে গেলে যুক্তরাষ্ট্রও সে অনুযায়ী পদক্ষেপ নেবে। একসময়ে আইএলও’র মধ্যে আর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের দাবিগুলোর মধ্যে একটু আলাদা ছিল। এখন বলেছে, আমরা একদম একই অবস্থানে চলে এসেছি। তাই বাংলাদেশ যদি আইএলও’র সাথে সম্পর্ক করে নিতে পারো, তারা দ্রুত ডেভেলপমেন্ট কোঅপারেশন-ডিএফসি শুরু করবে। বাংলাদেশ শ্রম খাতে অনেক অগ্রগতি করেছে জানিয়ে তিনি বলেন, আইএলও’র সাথে আমরা আলাপ-আলোচনা করছি, আশা করি সমঝোতাটা হয়ে যাবে।

জলবায়ু পরিবর্তন এবং বিদ্যুতের আনা-নেওয়ায় ভুটান, নেপাল ও ভারতের সাথে বাংলাদেশের আঞ্চলিক কানেক্টিভিটির বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্ নৈশভোজে আলোচনা করেছে বলেও জানান সালমান এফ রহমান।রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের বিষয়ে আলোচনা হওয়ার কথা তুলে তিনি বলেন, “সেটা বলেছে যে, আমরা চেষ্টা করছি। আবার বলেছেন, আমরা সবাই জানি মিয়ানমারের বর্তমান যে অবস্থাটা ওখানে, সেখানে সময় লাগবে। বলেন, আমরা সবাই কাজ করছি। চেষ্টা করছি।” বাংলাদেশের মতো যুক্তরাষ্ট্রও ফিলিস্থিনে স্থায়ী যুদ্ধবিরতি চায় বলে জানান সালমান এফ রহমান। তিনি জানান এ প্রসঙ্গে লু বলেছেন, তোমাদের মতো আমরাও চাই এই যুদ্ধপরিস্থিতির অবসান ঘটুক। নৈশভোজে সালমান রহমানের সঙ্গে বাংলাদেশ প্রতিনিধি দলে ছিলেন আইনমন্ত্রী আনিসুল হক, বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী আহসানুল ইসলাম টিটু, তথ্য প্রতিমন্ত্রী মোহাম্মদ এ আরাফাত, পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেন, সাবেক পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম, বাংলাদেশ এন্টারপ্রাইজ ইনস্টিটিউটের বোর্ড সদস্য রাষ্ট্রদূত ফারুক সোবহান এবং ঢাকা স্কুল অব ইকোনমিক্সের চেয়ারম্যান অধ্যাপক কাজী খলীকুজ্জামান আহমদ। (সূত্র- মানবজমিন)

Share