বাংলাদেশ ও যুক্তরাজ্যের মধ্যে ক্রমবর্ধমান জোরালো ও বিস্তৃত সম্পর্কের কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে চিঠি পাঠিয়েছেন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী টেরেসা মে।
ব্রিটিশ পররাষ্ট্র ও কমনওয়েলথ দপ্তরের কূটনৈতিক নিরাপত্তা বিভাগের প্রধান ও পার্মানেন্ট আন্ডারসেক্রেটারি স্যার সায়মন ম্যাকডোনাল্ড মঙ্গলবার সকালে পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলীর কাছে ওই চিঠি হস্তান্তর করেন।
এরপর ঢাকায় রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন পদ্মায় তিনি সাংবাদিকদের বলেন, ‘এইমাত্র আমি পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক করে এসেছি। শেখ হাসিনাকে লেখা আমার প্রধানমন্ত্রীর একটি চিঠি হস্তান্তর করতে পেরে আমি সম্মানিত বোধ করছি। ’
তিনি আরো বলেন, চিঠিতে ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী বাংলাদেশ ও যুক্তরাজ্যের মধ্যে জোরালো ও ক্রমবর্ধমান সম্পর্কের কথা উল্লেখ করেন। টেরেসা মে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে তাঁর প্রথম আনুষ্ঠানিক বৈঠকের ব্যাপারে আগ্রহ প্রকাশ করেন।
আগামী বছর কমনওয়েলথ শীর্ষ সম্মেলনের জন্য দুই দেশই প্রস্তুত হচ্ছে। যুক্তরাজ্য আগামী বছর কমনওয়েলথ সম্মেলনের আয়োজক দেশ।
সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলার আগে পররাষ্ট্রসচিব মো. শহীদুল হক ও ব্রিটিশ আন্ডারসেক্রেটারি স্যার সায়মন ম্যাকডোনাল্ড দুই দেশের মধ্যে নিয়মিত স্ট্র্যাটেজিক সংলাপ অনুষ্ঠানের লক্ষ্যে একটি সমঝোতা স্মারক (এমওইউ) স্বাক্ষর করেন।
এরপর প্রথম স্ট্র্যাটেজিক সংলাপে বসার আগে ব্রিটিশ আন্ডারসেক্রেটারি বলেন, ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) বাজারে বাংলাদেশ এখন যে বাণিজ্য সুবিধা পাচ্ছে, ভবিষ্যতেও তা অব্যাহত থাকবে বলে বাংলাদেশ যে আশা করছে সে ব্যাপারে যুক্তরাজ্য অবগত।
তিনি বলেন, ‘আমরা জানি যে এটি আলোচনার জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। আমি আশ্বস্ত করতে পারি ও আশা করি, যুক্তরাজ্য এর চেয়েও ভালো সম্পর্ক চায়। ’
তিনি ইঙ্গিত দেন, ইইউ থেকে যুক্তরাজ্যের বেরিয়ে যাওয়ার ফলে বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্কে কোনো নেতিবাচক প্রভাব পড়বে না।
উল্লেখ্য, টেরেসা মে ইউরোপীয় কাউন্সিলকে জানিয়েছেন, ইইউ থেকে বেরিয়ে আসতে আজ বুধবার লিসবন চুক্তির ৫০তম অনুচ্ছেদ কাজে লাগাবেন। আজকের এই দিনকে যুক্তরাজ্যের জন্য গুরুত্বপূর্ণ একটি দিন উল্লেখ করে ব্রিটিশ আন্ডারসেক্রেটারি বলেন, ইউরোপের বাইরে বাংলাদেশ-যুক্তরাজ্য ঐতিহাসিক সম্পর্কের গুরুত্বের ব্যাপারে তাঁরা অতীতের যেকোনো সময়ের চেয়ে এখন বেশি সজাগ। এই সম্পর্ক ভবিষ্যতে আরো জোরদার হওয়া দেখতেই তাঁরা আগ্রহী।
সন্ত্রাস দমনে সহযোগিতা প্রসঙ্গে ম্যাকডোনাল্ড বলেন, ‘এটি দুই দেশের সরকারের জন্যই অগ্রাধিকারের বিষয়। আমরা নিবিড়ভাবে কাজ করব। ’
বাংলাদেশ-যুক্তরাজ্য গতকাল প্রথম স্ট্র্যাটেজিক সংলাপে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনা করেছে। সংলাপ শেষে এক যৌথ বিবৃতিতে জানানো হয়, উভয় পক্ষ সাম্প্রতিক সন্ত্রাসী হামলার নিন্দা এবং হতাহতদের প্রতি সহমর্মিতা জানিয়েছে। এ ছাড়া উভয় পক্ষ সন্ত্রাস মোকাবেলায় এবং এর মূল কারণ নিরসনে বৈশ্বিক উদ্যোগের প্রয়োজনীয়তা এবং আন্তর্জাতিক মানবাধিকার ও আইনের শাসনের প্রতি সম্মান জানাতে সম্মত হয়।
সংলাপে সিদ্ধান্ত হয়, বিমান চলাচল নিরাপত্তাকে গুরুত্ব দিয়ে যুক্তরাজ্য ও বাংলাদেশ ঢাকায় হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে নিরাপত্তা জোরদারে নিবিড়ভাবে কাজ করা অব্যাহত রাখবে। যুক্তরাজ্য এ ক্ষেত্রে আরো সহযোগিতা দেওয়ার আগ্রহ প্রকাশ করে। ঢাকা থেকে যুক্তরাজ্যে সরাসরি কার্গো ফ্লাইট আবারও শুরুর ব্যাপারে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নিতে যুক্তরাজ্য তার সম্মতির কথা সংলাপে জানিয়েছে।
উভয় পক্ষ মিয়ানমারে রোহিঙ্গা সমস্যার স্থায়ী সমাধান খুঁজতে একসঙ্গে কাজ করতে সম্মত হয়েছে। এ ছাড়া দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য ও সরাসরি বিদেশি বিনিয়োগ উৎসাহিত করতেও উভয় পক্ষ সম্মত হয়।
যুক্তরাজ্য আগামী জুন মাস থেকে বাংলাদেশিদের ব্রিটিশ ভিসা আবেদনের ক্ষেত্রে তিন থেকে পাঁচ দিনের মধ্যে ভিসা পাওয়ার সেবা চালু করবে। যুক্তরাজ্য নিশ্চিত করেছে, বাংলাদেশিদের ব্রিটিশ ভিসা আবেদন ব্রিটিশ কর্মকর্তারাই পর্যালোচনা করেন। এ ছাড়া বাংলাদেশিদের ‘সেটলমেন্ট ভিসা’র সিদ্ধান্ত নেওয়ার ব্যবস্থা নয়াদিল্লি থেকে যুক্তরাজ্যে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে।
যুক্তরাজ্যে থাকার বৈধতা নেই এমন বাংলাদেশিদের ফিরিয়ে আনার ব্যাপারে ঢাকার অঙ্গীকারকে যুক্তরাজ্য স্বাগত জানিয়েছে। তাদের প্রত্যাবাসনে বাস্তবধর্মী পদক্ষেপ নেওয়ার ব্যাপারে বাংলাদেশ আশ্বাস দিয়েছে। আগামী বছরের প্রথমার্ধে দ্বিতীয় স্ট্র্যাটেজিক সংলাপ লন্ডনে অনুষ্ঠিত হবে।
করেসপন্ডেন্ট
আপডেট, বাংলাদেশ সময় ০৬: ০০ এএম, ২৯ মার্চ ২০১৭, বুধবার
ডিএইচ