সেন্ট্রাল আফ্রিকান রিপাবলিকে গুলিবিদ্ধ হয়ে এক বাংলাদেশি শান্তিরক্ষী নিহত হয়েছেন। ২৯ বছর চার মাস বয়সী সেনা সদস্য আবদুর রহিমের গ্রামের বাড়ি সাতক্ষীরা সদর থানার হাজীপুর গ্রামে।
তাঁর মৃত্যুতে পরিবারে চলছে শোকের মাতম।
বৃহস্পতিবার রাতে আইএসপিআর এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, কর্তব্যরত অবস্থায় সৈনিক আবদুর রহিম স্থানীয় সন্ত্রাসীদের সঙ্গে সংঘর্ষে গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যান। তাঁর বাবা আবদুল মজিদ। তাঁর স্ত্রী রুবাইয়া সুলতানা রুনা। তাঁদের পাঁচ মাস বয়সের একটি পুত্রসন্তান রয়েছে।
সরেজমিনে গতকাল বিকেলে আবদুর রহিমের গ্রামের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, বাড়ির উঠানভর্তি শত মানুষের ভিড়ে ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে একটি মুখই যেন খোঁজার চেষ্টা করছে পাঁচ মাস বয়সের শিশু আহনাব।
প্রিয় সেই মুখটি আর দেখা হবে না তার। আহনাব জানে না তার বাবা আর কোনো দিন ফিরে আসবে না। বিদেশ থেকে খেলনা নিয়ে ফিরে আসার কথা বলে ক্রন্দনরত আহনাবকে তার মায়ের কোলে রেখে গিয়েছিলেন বাবা আবদুর রহিম।
এক মাস ২১ দিন আগে শান্তিরক্ষা মিশনে (আফ্রিকার সুদানে) যান আবদুর রহিম। দায়িত্ব পালনরত অবস্থায় গত বৃহস্পতিবার সকালে মাথায় গুলি লেগে ঘটনাস্থলেই নিহত হন তিনি। তাঁর অকাল মৃত্যুতে হাজীপুর গ্রামই যেন শোকে কাতর।
ছেলের মৃত্যুর খবরে রহিমের মা রওশানারা বেগম পাগলপ্রায়। একই অবস্থা বাবা মজিদেরও। পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ছেলেকে হারিয়ে তাঁরা অনেকটাই বাকরুদ্ধ হয়ে পড়েছেন। আবদুল মজিদ জানান, তাঁর দুই ছেলে ও এক মেয়ে।
বড় ছেলে আবদুর রহিম এসএসসি পাস করার পর গত ২০০৫ সালে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীতে সৈনিক পদে যোগদান করেন। মেজ ছেলে আবদুল করিম মানসিক প্রতিবন্ধী।
মেয়ে রেহেনা খাতুন স্থানীয় একটি স্কুলে নবম শ্রেণিতে লেখাপড়া করে। ছোট আকৃতির মাটির একটি বাড়িতেই সবাই বসবাস করেন। তাঁর নিজের কোনো জমাজমি নেই।
অন্যের ক্ষেতে দিনমজুরি করেই সংসারটা ঘানির মতো করে টেনে নিয়ে যান। বেতন থেকে যে টাকা রহিম পাঠাতেন তা দিয়ে প্রতিবন্ধী ছেলের চিকিৎসার খরচ, মেয়ের লেখাপড়া ও অসুস্থ মায়ের ওষুধের ব্যবস্থা হতো।
নিহত রহিমের স্ত্রী রুবাইয়া সুলতানা রুনা জানান, পাঁচ বছর আগে তাঁর বিয়ে হয়। তাঁদের পাঁচ মাস বয়সী পুত্রসন্তানের নাম আহনাব। রুনা কাঁদতে কাঁদতে আরো জানান, বৃহস্পতিবার সকালে তাঁর সঙ্গে স্বামী আবদুর রহিমের শেষ কথা হয়। ওই সময় ছেলের দিকে খেয়াল রাখার কথা বলে রাতে বিস্তারিত কথা হবে জানিয়ে ফোন কেটে দেন। পরে আর কথা হয়নি।
রুবাইয়া সুলতানা জানান, প্রতিদিনই স্বামীর সঙ্গে কথা হতো। মিশন থেকে ফিরে সবাই মিলে থাকার মতো একটি বাড়ি তৈরি করার স্বপ্ন ছিল তাঁর। ছেলেটাকে নিয়েও বড় স্বপ্ন দেখতেন আবদুর রহিম।
মা রওশানারা বেগমও পুত্রশোকে পাগলপ্রায়। তিনি সংজ্ঞাহীন। জ্ঞান ফিরে মাঝে মাঝে চিৎকার করে কেঁদে ওঠে বলছেন, ‘আমার বাবাটারে তোমরা এনে দাও। বাড়ি থেকে যাওয়ার সময় তাকে ভ্যানে করে আমি বাসস্ট্যান্ডে রেখে এসেছিলাম। অভাবের সংসারে আমার বাবা ছিল বটগাছ। আমার আর বটগাছের ছায়ার দরকার নেই। ’ -কালেরকণ্ঠ