শাহজাহান শাওন :
বিশ্বে বাংলাদেশের অবস্থান আরও দৃঢ় করতে এবং বাংলাদেশকে মধ্যম আয়ের দেশে উন্নীত করতে ব্যস্ততার মধ্যে রয়েছে সরকার। বিদেশী বিনিয়োগ আকৃষ্ট করতে বাংলাদেশকে বিভিন্নভাবে বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে উপস্থাপন করছে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।
সরকার চাচ্ছে, ইসরাইল ছাড়া বিশ্বের প্রতিটি দেশের সঙ্গে বাংলাদেশের বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক আরও শক্তিশালী করতে। যাতে সবার সহযোগিতা নিয়ে বাংলাদেশের উন্নয়নে বিনিয়োগ বাড়ানো যায় এবং অর্থনৈতিকভাবে বাংলাদেশ শক্ত অবস্থানে পৌঁছতে পারে।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, সামনের ১৬ ও ১৭ মে বাংলাদেশ ও মালয়েশিয়ার মধ্যে পররাষ্ট্রমন্ত্রী পর্যায়ের যৌথ কমিশন বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে।
বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্ক আরও শক্তিশালী করতে সামনের ২৪ মে ৩ দিনের সফরে ঢাকায় আসছেন চীনের উপ-প্রধানমন্ত্রী লিউ ইয়ানদং। বাংলাদেশ ও সিঙ্গাপুরের মধ্যে পররাষ্ট্র সচিব পর্যায়ের বৈঠক (ফরেন অফিস কনসালটেশন বা এফওসি) সামনের ২৮ মে অনুষ্ঠিত হবে। অন্যদিকে, সবকিছু ঠিক থাকলে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি সামনের ৬ জুন দুই দিনের সফরে ঢাকা আসছেন। এই বিষয়গুলো নিয়ে কাজ করতে ও বাংলাদেশের পক্ষে আন্তর্জাতিক অঙ্গনের এই ঘটনাগুলোকে শতভাগ সফলতার চাদরে মুড়তে ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।
পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী মো. শাহরিয়ার আলম বলেন, ‘যেকোনো সময় থেকে বাংলাদেশের সঙ্গে বিশ্বের খুব ভাল সময় যাচ্ছে। আমরা বিশ্বের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্ক আরও শক্তিশালী করতে কাজ করছি। বিভিন্ন আহ্বানে আমরা আন্তর্জাতিক অঙ্গন থেকে ইতিবাচক সাড়াও পাচ্ছি।’
তিনি আরও বলেন, ‘বাংলাদেশ বিদেশী বিনিয়োগের উৎকৃষ্ট জায়গা। আমরা বিশ্বের বিভিন্ন দেশকে তা বুঝাতে সক্ষম হয়েছি এবং বিদেশী বিনিয়োগ আকৃষ্ট করতে ধারাবাহিকভাবে কাজ করে যাচ্ছি। জার্মানী, চীন, জাপান, কানাডা, যুক্তরাজ্যসহ অনেক দেশই বাংলাদেশের উন্নয়নে বিনিয়োগ করছে। আরও অনেক দেশ এরই মধ্যে বিনিয়োগে আগ্রহ প্রকাশ করেছে। আমরা আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বন্ধু বাড়ানোর পক্ষে। যাতে ২০২১ সালের মধ্যে মধ্যম আয়ের দেশে উন্নীত হতে পারি।’
পররাষ্ট্র সচিব মো. শহীদুল হক বলেন, ‘মে ও জুন মাসে বাংলাদেশের সঙ্গে কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ রাষ্ট্রের শীর্ষ পর্যায়ের বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে। এই বৈঠকগুলো নিয়ে খুবই ব্যস্ততার মধ্যে সময় কাটছে।’
১৬ ও ১৭ মে বাংলাদেশ ও মালয়েশিয়ার মধ্যে পররাষ্ট্রমন্ত্রী পর্যায়ের যৌথ কমিশন বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে। পররাষ্ট্রমন্ত্রী পর্যায়ের যৌথ কমিশন বৈঠকে বাণিজ্য, বিনিয়োগ ও জনশক্তি সংক্রান্ত বিষয়গুলো গুরুত্ব পাবে। বিশেষ করে অতি সাম্প্রতিকালে মানবপাচারের ঘটনা বেড়ে যাওয়ায় তার কারণগুলো চিহ্নিত করে করণীয় সম্পর্কে বাংলাদেশ, মালয়েশিয়া ও থাইল্যান্ডের মধ্যে ত্রিপক্ষীয় চুক্তির বিষয় নিয়ে আলোচনা হবে। এরই মধ্যে মালয়েশিয়ার পক্ষ থেকে বাংলাদেশ ও থাইল্যান্ডকে এই বিষয়ে পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানান হয়েছে।
বাংলাদেশ ও সিঙ্গাপুরের মধ্যে পররাষ্ট্র সচিব পর্যায়ের বৈঠক সামনের ২৮ মে অনুষ্ঠিত হবে। বৈঠকে দ্বি-পাক্ষিক বাণিজ্য ও বিনিয়োগ গুরুত্ব পাবে। এ ছাড়া বাংলাদেশের কক্সবাজারের মাতারবাড়ীতে ৭০০ মেগাওয়াট ও সিরাজগঞ্জে ৪০০ মেগাওয়াট কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ উৎপাদনকেন্দ্র স্থাপনের জন্য সিঙ্গাপুর এরই মধ্যে সমঝোতা স্মারকে স্বাক্ষর করেছে। এই দুইটি কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ উৎপাদনকেন্দ্র স্থাপনের পরবর্তী পদক্ষেপ নিয়ে এফওসি বৈঠকে সিদ্ধান্ত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্ক আরও শক্তিশালী করতে সামনের ২৪ মে ৩ দিনের সফরে ঢাকায় আসছেন চীনের উপ-প্রধানমন্ত্রী লিউ ইয়ানদং। মূলত সামনের কয়েক মাসের মধ্যে বাংলাদেশ-চীন সম্পর্কের ৪০ বছর পূর্তি উদযাপন করতে চীনের প্রধানমন্ত্রী লি কেকিয়াংয় ঢাকা সফর করবেন। ওই সফরের পূর্ব প্রস্তুতি হিসেবে লিউ ইয়ানদং ঢাকা আসছে। চীন চাচ্ছে, বিসিআইএম (বাংলাদেশ-চীন-ভারত-মিয়ানমার) অর্থনৈতিক করিডোর বাস্তবায়ন করতে। এ জন্য দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রীর বিশেষ দূত ও বিভিন্ন প্রদেশের অর্থনৈতিক বিশেষজ্ঞ ও উদ্যোক্তরা চলতি মাসে ঢাকা সফর করেন। বাংলাদেশ চাচ্ছে, চীনের সহায়তা নিয়ে মিয়ানমারের সঙ্গে সম্পর্ক আরও শক্তিশালী করতে।
এদিকে সবকিছু ঠিক থাকলে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি সামনের ৬ জুন দুই দিনের সফরে ঢাকা আসছেন। সীমান্ত বিল পাস হবার পর নরেন্দ্র মোদির ঢাকা সফরকালে দ্বি-পাক্ষিক সহযোগিতার ক্ষেত্রে নতুন কিছু ইস্যু যুক্ত হবে বলে কূটনৈতিক সূত্র জানায়। মোদির সফরে বাণিজ্য, শিপিং, যোগাযোগ ও শিল্প ক্ষেত্রে নতুন সহযোগিতা বা চুক্তি স্বাক্ষর হবে বলে আভাস পাওয়া গেছে। ভারত সরকার বাংলাদেশকে এক শ’ কোটি মার্কিন ডলার ঋণ দেবে। এ ব্যাপারে চুক্তি সই হতে পারে মোদির সফরে।
প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ঢাকা সফরের প্রস্তুতি হিসেবে এরই মধ্যে তৃণমূল কংগ্রেস নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে বৈঠক করেছেন। মোদি ঢাকা সফরে মমতাকে তার সফর সঙ্গী হওয়ার প্রস্তাব দিয়েছেন। মমতাও আন্তরিকতার সঙ্গে প্রস্তাবটি গ্রহণ করেছেন।
ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের নবনিযুক্ত মুখপাত্র বিকাশ স্বরূপ জানান, মোদির ঢাকা সফরের সূচি কিছুদিনের মধ্যেই ঘোষণা করা হবে। পররাষ্ট্র সচিব জয়শঙ্করের মোদির নির্দেশে ঢাকা সফর ও পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ঢাকা সফরে সীমান্ত চুক্তি নিয়ে সবুজ সংকেত ও তিস্তা নিয়ে পূর্ণ সহযোগিতার আশ্বাস দেওয়ার পর দুই দেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় তৎপরতা শুরু হয়েছিল।
মোদি বাংলাদেশ সফরে গিয়ে তিস্তা নিয়ে চুক্তি স্বাক্ষর করবেন এমন একটি মত বাংলাদেশের পক্ষ থেকে দূত মারফত জানানো হলেও তিস্তার পানি বণ্টন নিয়ে ২০১১ সালের খসড়া নিয়ে নতুন করে এখন পর্যন্ত কোনো আলোচনা শুরু হয়নি বলে দিল্লীর বিভিন্ন সূত্র থেকে জানা গেছে।
বিজেপির এক শীর্ষ নেতা জানান, প্রধানমন্ত্রী মোদির বাংলাদেশ সফরে থাকতে পারে একগুচ্ছ উপহার। মোদি কী উপহার নিয়ে আসছেন এ বিষয়ে কিছু বলেননি তিনি। বিজেপির এই শীর্ষ নেতা বলেন, বাংলাদেশের জন্য মোদির এ ‘উপহারে’ থাকছে না দীর্ঘ প্রতীক্ষিত তিস্তার পানি বণ্টন চুক্তি।
ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা জানান, নরেন্দ্র মোদির সফর উপলক্ষ্যে কাজ শুরু হয়েছে। মোদির সফর নিয়ে এখন দিন-তারিখ চূড়ান্ত না হলেও জুনের মাঝামাঝি থেকে শেষ সপ্তাহকে সামনে রেখে তারা কাজ করছেন।
পররাষ্ট্র সচিব শহীদুল হক জানান, ভারতের প্রধানমন্ত্রীর বাংলাদেশ সফর দুই দেশের জনগণের কাছেও প্রত্যাশিত। আগামী জুনেই তিনি বাংলাদেশ সফরে আসছেন। এ সফরে দুই দেশের মধ্যে বিরাজমান সমস্যাবলী নিয়ে উভয় পক্ষের মধ্যে আরও বিস্তারিত আলোচনা হবে এবং দুই দেশের শীর্ষ পর্যায় থেকেই এ সব সমস্যার সম্ভাব্য সমাধানের চেষ্টা করা হচ্ছে।
চাঁদপুর টাইমস : এমআরআর/২০১৫