হাজীগঞ্জের মান্নান কোল্ডস্টোরেজে প্রতিদিন পাঁচ হাজার করে বস্তা বলে ঢুকছে বলে ব্যবস্থাপক অমৃত লাল রায় গত ২ মার্চ দুপুরে জানান। ট্রাকে ট্রাকে বা পি-কাপে কওে হাজীগঞ্জের মান্নান কোলেস্টোরে সংরক্ষণের লক্ষ্যে প্রতিদিন হাজার হাজার বস্তা আসছে। গত ২৫ ফেব্রুয়ারি থেকে এবারের উৎপাদিত নতুন আলু কোল্ড স্টোরেজে আশা শুরু করেছে।
গত রবিবার ২ মার্চ পর্যন্ত ২৫ হাজার বস্তা কৃষক সংরক্ষণের জন্য প্রবেশ করিয়েছেন ।
সংশ্লিষ্ট কৃষি বিভাগের সূত্রে জানা গেছে – হাজীগঞ্জ , শাহরাস্তি এবং কচুয়া উপজেলায় চলতি বছর ২ হাজার ৫ শ ৮৫ সেক্টর জমিতে ৭৭ হাজার ৫ শ ৭০ টন আলুর উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ছিল । মাঠে এখনো আলু থাকায় উৎপাদন নির্নয় করা সম্ভব হয়নি বলে চাঁদপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর খামার বাড়ি চাঁদপুর জানায় ।
প্রাপ্ত তথ্য মতে, এবার হাজীগঞ্জে চাষাবাদের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৫শ ২৫ হেক্টর ও উৎপাদন ১৩ হাজার ৬শ ৫০ মে.টন,শাহরাস্তিতে চাষাবাদ লক্ষ্যমাত্রা ৪০ হেক্টর ও উৎপাদন ১ হাজার ৪শ মে.টন এবং কচুয়ায় চাষাবাদের লক্ষ্যমাত্রা ২ হাজার ২০ হেক্টর ও উৎপাদন ৫২ হাজার ৫শ ২০ মে.টন। এ সব আলুই যাতায়ত ব্যবস্থা উন্নত , দূরত্ব কম , যানবাহনের ব্যাপকতা ও শ্রমিকের কারণে কৃষককুল মান্নান কোল্ড স্টোরেজে উৎপাদিত আলু নিয়ে আসে।
জানা যায়- এটি হাজীগঞ্জের একমাত্র কোলেস্টোরেজ। যার ধারণক্ষমতা ৮ হাজার মেট্রিক টন অর্থাৎ ১ লাখ ২০ হাজার বস্তা বা ব্যাগ সংরক্ষণ করার ক্ষমতা রাখে। গত বছরের রেট ছিল ছিল শ্রমিক চার্জ ব্যতীত অক্টোবর পর্যন্ত ২শ ৬০ টাকা ভাড়া। এবার ৩শ টাকা হতে পারে বলে জানা গেছে। কেন্দ্রিয় কোলেস্টোরেজ মালিক সমিতি এটি নির্ধারণ করে থাকে। আমরা ইচ্ছে করলে ঐ হার বাড়াতে পারি না। হাজীগঞ্জ, কচুয়া, মতলব, সদরসহ বিভিন্ন এলাকা হতে এ আলু উৎপাদনকারী উৎপাদনকারী ও ছোট ছোট ট্রাকগুলোর মাধ্যমে নিয়ে আসে। উৎপাদিত আলু কয়েক দিন যাবত আসা শুরু করেছে ।
হাজীগঞ্জের মান্নান কোল্ডস্টোরেজের ধারণ ক্ষমতার চেয়ে প্রায় ৮গুণ বেশি এ ৩ উপজেলায় উৎপাদন রয়েছে। ফলে বাকি উৎপাদিত আলু সংরক্ষণের বাহিরে থেকে যাচ্ছে । এসব আলু কৃষকগণ যদি কৃত্রিমভাবেও সংরক্ষণ না করতে পারে তাহলে আলু চাষিগণ আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে।
বিদ্যুতের বিষয়ে এক প্রশ্নের জবাবে ব্যবস্থাপক অমৃত লাল রায় জানান-গত বছর আমাদের নানা কারণে লোডশেডিং থাকায় কিছুটা ভিন্ন ঘটেছে। জেনারেটরের মাধ্যমে বিদ্যুৎ সঞ্চালন নিরবিচ্ছিন্ন রাখার ব্যবস্থা আছে। আলু সংরক্ষণের স্বার্থে এক সেকেন্ডও বিদ্যুৎবিহীন রাখার মতো অবস্থা নেই। আমরা সবসময় এ ব্যাপারে সজাগ রয়েছি। তারপরও প্রতি মাসে আমাদের বিদ্যুৎ বিল দিতে হয় ১ লাখ ২০ হাজার টাকা ।
এদিকে চাঁদপুরে এবারের রবি মৌসুমে সাড়ে ৭ হাজার হেক্টরে আলু উৎপাদন লক্ষ্য মাত্রা ধরা হয়েছে ১ লাখ ৯০ হাজার মে.টন। আলু উৎপাদনে চাঁদপুর দেশের মধ্যে দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে। মুন্সিগঞ্জের পরেই চাঁদপুর জেলা রয়েছে- উৎপাদনের তুলনামূলক হিসেবের তালিকায়। এ বছর ২০২৪-২৫ অর্থবছরে ৭ হাজার ৫শ হেক্টর জমিতে চাষাবাদ হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এ জেলা একটি নদীবিধৌত কৃষি ভিক্তিক অঞ্চল বিধায় কৃষকরা সময়মত চাষাবাদ, বীজবপন ও সঠিক পরিচর্যায় পারদর্শী বলে জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে। কৃষি সম্প্রাসারণ অধিদপ্তর ,চাঁদপুর এ তথ্য জানান।
উপজেলাওয়ারী দেখা যায়- চাঁদপুর সদরে এবার আলু চাষাবাদের লক্ষ্যমাত্রা ১ হাজার ৭শ হেক্টর ও উৎপাদন ৪৪ হাজার ২শ মে.টন। মতলব উত্তরে ৬শ ৫০ হেক্টর ও উৎপাদন ১৬ হাজার ৯শ মে.টন। মতলব দক্ষিণে চাষাবাদের লক্ষ্যমাত্রা ২ হাজার ৩শ হেক্টর ও উৎপাদন ৫৯ হাজার ৮শ মে.টন, ফরিদগঞ্জে চাষাবাদের লক্ষ্যমাত্রা ৯৫ হেক্টর ও উৎপাদন ২ হাজার ৪শ ৯০ মে.টন এবং হাইমচরে চাষাবাদের লক্ষ্যমাত্রা ১শ ৭০ হেক্টর ও উৎপাদন ৪ হাজার ২শ ৩০ মে.টন। এ সব আলু চাষাবাদেও পর দু’ থেকে আড়াই মাস পর ক্ষেত থেকে উঠানো হয়।
প্রসঙ্গত , জেলা ব্যাংকগুলো যথারীতি ফসল ঋণ প্রদান করে কৃষিপণ্য উৎপাদনে ব্যাপক সহায়তা দিচ্ছে। বর্তমানে প্রতি কেজি আলুর খুচরা মূল্য ২০ থেকে ২৫ টাকা। বর্তমানে নতুন আল বাজারে উঠেছে । নতুন আলু মুন্সিগঞ্জ, বগুড়া, রংপুরসহ বিভিন্ন স্থান থেকে চাঁদপুরে আসতে দেখা যাচ্ছে। চাঁদপুরে মৌসুমের শুরুতে প্রচুর বৃষ্টিপাত হওয়ায় কৃষকগণ তাদের জমি আলু চাষাবাদে বিলম্ব হচ্ছে বলে সফরমালীর কৃষককুল জানান। জেলার ৮ উপজেলায় আলুর চাষাবাদ ও উৎপাদনে বিভিন্ন জাতের আলু চাষাবাদ করে থাকে এ অঞ্চলের কৃষকরা। কম-বেশি সব উপজেলায়ই আলুর ফলন ও চাষাবাদ হয়ে থাকে। বিগত ক’বছর ধরেই চাঁদপুরে ব্যাপক আলু উৎপাদন হচ্ছে। বিশেষ করে আলু বেশী উৎপাদনকারী স্থানগুলো হচ্ছে, সফরমালী, রালদিয়া, মুন্সীরহাট,কুমারডুগি,শাহাতলী,শাহমাহমুদপুর ইউনিয়ন,মহামায়া,বালিয়াসহ বিভিন্ন স্থানে।
হাজীগঞ্জের বলাখাল ও মতলব দক্ষিণের নারায়নপুর,কাশিমপুর,খাদেরগাও এলাকায়। কৃষকরা জানান, বর্তমান তারা লাঙ্গলের পরিবর্তে ট্রাক্টর,হোচার পরিবর্তে বিদ্যুৎ চালিত স্যালো সেচ ব্যবস্থায়,গোবরের সারের পরিবর্তে বিভিন্ন প্রকার উন্নত রাসায়নিক সার ব্যবহার, উন্নত বীজ,পরিমিত কীটনাশকের ব্যবহার,নতুন নতুন জাতের উদ্ভাবন ও প্রযুক্তির ব্যবহার এবং আবহাওয়ার অনুকুল পরিবেশে থাকলে আলুর বাম্পার ফলন হওয়ার সম্বাবনা রয়েছে।
চাঁদপুরে ১২ টি হিমাগারে ৭০ হাজার মে. টন আলু সংরক্ষণ করার ধারণ ক্ষমতা রয়েছে। বাকি আলু হিমাগারের বাহিরে রাখা হয়ে থাকে। এর মধ্যে কিছু পরিমাণ আলূ উৎপাদন মৌসুম থেকে বিক্রি হয়ে আসছে এবং বাকি আলু কৃষকগণ কৃষি বিভাগের পরামর্শে কৃত্রিমভাবে মাচায় সংরক্ষণ করা হয়েছে বলে কৃষি অফিস জানান। চাঁদপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-সহকারী কৃষি অফিসার মো.মোবারক হোসেন জানান, চাঁদপুরে এবারও ব্যাপক আলুর চাষ করার সম্ভাবনা রয়েছে। এ বছরের মুল্যে কৃষককুল লাভবান হয়েছে। আশা করি উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী হবে ।
সরকার এবার বীজ,সার ও নগদ অর্থ প্রণোদনা হিসেবে দিয়েছে। এবার প্রায় ৮০ হাজার কৃষক প্রণোদনা গ্রহণ করে কৃষি উৎপাদন কাজে লাগাতে পারবে। উল্লেখ্য, আলু প্রধান অর্থকরি সবজি। চাঁদপুর আলু উৎপাদনে দেশের মধ্যে দ্বিতীয় স্থান অর্জনকারী জেলা। মুন্সীগঞ্জের পরেই চাঁদপুরের স্থান। ফলে চাঁদপুরে বেসরকারিভাবে ১২টি কোল্ডস্টোরেজ রয়েছে। এগুলোর ধারণক্ষমতা মাত্র ৭০ হাজার মে.টন। মতলবের করিম কোল্ডস্টোরেজের সংরক্ষণাগারটির ধারণ বাড়ালেও বাকি আলু কৃষকদের নিজ দায়িত্বে মাচায় বা কৃত্রিম উপায়ে সংরক্ষণ করা হচ্ছে।
আবদুল গনি, ৫ মার্চ ২০২৫
Chandpur Times | চাঁদপুর টাইমস Top Newspaper in Chandpur