নদী বিধৌত চাঁদপুরে বর্ষার আগমনে নদী উপকূলীয় এলাকা ও চরাঞ্চলের মানুষের চলাচলের একমাত্র বাহন নৌকা।
এ বছরও বর্ষার শুরু থেকে নৌক তৈরি শুরু হয়েছে। জেলার মতলব দক্ষিণ উপজেলার বড়দিয়া আড়ং বাজার এলকায় নৌকা তৈরি করার কাজে এখন ব্যস্ত সময় পার করছেন কারিগররা। এরইমধ্যে শুরু হয়েছে এসব নৌকা বিক্রি।
সোমবার (১৮ জুন) সকালে মতলব পৌর এলাকার ৮নং ওয়ার্ডের বড়দিয়া আড়ং বাজার ও এর আশাপাশের এলাকা ঘুরে দেখাগেছে নৌকা তৈরির প্রায় ১৫ কারখানা ও ছোট ছোট দোকান। ঈদের আমেজ না কাটলেও কারিগররা নৌকা তৈরি কাজে লেগে পড়েছেন। অনেকেই নৌকা তৈরি করে পানিতে রেখেছেন। আবার কেউ কেউ কারখানায় ও ডাঙায় রেখেছেন। আর এসব নৌকা বিক্রি হচ্ছে ৪ হাজার থেকে শুরু করে সাড়ে ৫ হাজার টাকা।
আড়ং বাজারের দক্ষিণ পাশের নৌকা তৈরি কারখানার মালিক মো. বাবুল গাজী। তিনি দীর্ঘ ৮ বছর বর্ষা মৌসুমে নৌকা তৈরি করে বিক্রি করেন।
বাবুল গাজী চাঁদপুর টাইমসকে জানান, যেসব এলাকায় সড়কগুলো ভালো এবং উপজেলা সড়কের সাথে যোগযোগ রয়েছে তাদের চলাচলে সমস্যা হয় না। কিন্তু নদী তীরবর্তী এলাকার মানুষগুলোর বর্ষায় চলাচলের একমাত্র বাহন নৌকা। কারণ বর্ষায় পানি আসলে খাল, বিল, পুকুর ও অন্যান্য জলাশয় কানায় কানায় পূর্ন হয়ে যায়।
গ্রামগুলোর চারপাশে পানি থৈ থৈ করে। তখন এসব লোকজনের চলার জন্য নৌকাই একমাত্র ভরসা। তাই আমরা গত ১মাস পূর্ব থেকেই নৌকা তৈরী শুরু করেছি।
একই এলাকার আরেক কারিগর জাহাঙ্গীর হোসেন জানান, আমরা যে সব নৌকা তৈরি করি স্থানীয় ভাবে কোষা নৌকা বলা হয়। এসব কোষা নৌকা তৈরি করতে দুইজন কারিগরের একদিন সময় লাগে। নৌকা তৈরিতে ব্যবহার হয় কড়াই ও চাম্বল কাঠ। মজুরি, কাঠসহ ব্যয় হয় সাড়ে ৩ থেকে ৪ হাজার টাকা। বিক্রি করেন ৫ থেকে সাড়ে ৫ হাজার টাকা। আবার অনেক সময় সাইজে ছোট হলে দামও কম হয়।
তিনি আরো জানান, গত বছর অর্ধশত নৌকা বিক্রি করেছি। এখন নৌকা তৈরি করে রেখেছি, কয়েকদিনের মধ্যে বিক্রি শুরু হবে।
কারিগর জামাল গাজী জানান, নৌকা তৈরি ও বিক্রি বর্ষার মৌসুমের কাজ। বাকি সময় কারিগর অন্যান্য ফার্নিচার সামগ্রী তৈরি করে। একসময় নৌকার অনেক কদর ছিলো। এখন বড় বড় নৌকা খুব কম তৈরি হয়। কারণ স্টিল দিয়ে অনেকেই ট্রলার তৈরি করে যাত্রী ও মালামাল বহন করেন। কিন্তু গ্রামাঞ্চলের নৌকার কদর এখনো কমেনি।
মতলব মোরকদি গ্রামের নৌকা কারখানার মালিক মো. হান্নান প্রধানিয়া চাঁদপুর টাইমসকে জানান, গত ২০ বছর ধরে তিনি নৌকা তৈরি করে বিক্রি করেন। তার কারখানায় এখনও ২০টির মতো নৌকা তৈরি করে জমা রেখেছেন। নোয়াখালী, লক্ষ্মীপুর ও চাঁদপুর জেলার চরাঞ্চলের মধ্যে হাইমচর, চাঁদপুর সদরের কিছু অংশ, মতলব উত্তর, হাজীগঞ্জ এলাকার লোকজন তাদের কাছ থেকে এসে নৌকা পাইকারী ও খুচরা ক্রয় করেন।
হাইমচর উপজেলার নীল কমল ইউনিয়নের চেয়ারম্যান সালাউদ্দিন সরদার চাঁদপুর টাইমসকে জানান, এ ইউনিয়নের ৩টি এলাকা সড়ক থেকে বিচ্ছিন্ন। আর কিছু এলাকায় আংশিক। এর মধ্যে মাঝির বাজার, বাংলা বাজার ও বাউচর এলাকার প্রায় ২০ হাজার বাসিন্দা নৌকা দিয়ে চলাচল করেন। তবে কিছু এলাকায় এখন চলাচলের জন্য রাস্তা তৈরি হয়েছে।
চাঁদপুর সদর উপজেলার ইব্রাহীমপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আবুল কাশেম চাঁদপুর টাইমসকে জানান, তার ইউনিয়নের ৯ ওয়ার্ডের মধ্যে ৬ ওয়ার্ডই চরাঞ্চল। বর্ষা আসলে এসব চরের ১৫ হাজার বাসিন্দার নৌকাই একামাত্র বাহন। এর মধ্যে বর্ষার সড়কের সাথে বিচ্ছিন্ন থাকেন পষন্নপুর, নরর্দী, চালতাতলী, ঝড়–য়া, পাইকাদী, গুক্ষদী, ইব্রাহীমপুর, হিন্দলী, চরপতেজংপুর, চরিলামপুর, থানেপুর ও চরকালিরচর গ্রামের মানুষ। তারা বর্ষায় নৌকা দিয়ে কষ্ট করে চলাচল করতে হয়। এসব এলাকায় এখন পর্যন্ত সড়ক তৈরি করা সম্ভব হয়নি।
সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট