কেমন কাটছে চাঁদপুর শহরের বেঁদে পরিবারদের রোজার চাঁদপুর টাইমসের অনুসন্ধানে এর কিছু চিত্র পাঠকদের জন্য তুলে ধরা হলো।
বছরের বারো মাসই নদীতে মাছ শিকার করে কিংবা সিংগা লাগিয়ে অথবা বাড়িতে বাড়িতে থালা বাসন ফেরি করে যাদের জীবিকা নিরবাহ করা হয়। সেই বেঁদে পরিবারদের খবর কেউ রাখেননি।
চাঁদপুর শহরের প্রেসক্লাব ঘাট ও ১০ নং চৌধুরী ঘাটস্থ কোস্ট গার্ড পুন্টুন সংলগ্ন বেঁদে পল্লীতে গিয়ে দেখা যায়, বেঁদে পরিবারের অধিকাংশ সদস্যরাই কর্মহীন ভাবে বসে আছেন। খবর নিয়ে জানা যায় তাঁেদের দুঃখ দুর্দশার কথা।
এখন পবিত্র রমজান মাস, রোজা রাখা অবস্থায় সিংগা লাগানোর নিয়ম নেই বলে কেউই বেঁদে নারীদের কাছে সিংগা লাগায়নি এবং রোদ ও বৃষ্টির দিনে থালা বাসন ফেরি করতে পারছেন অনেকে। তাই তাদের রোজাগারের পথটিও বন্ধ। অন্যদিকে নদীতে তেমন মাছ ধরা পড়ছে না তাই পুরুষদের অর্থ উর্পাজনের আর কোন পথ খোলা নেই। কিন্তু তবুও রোজা রাখতে হচ্ছে। কিন্তু কেমন কাটছে তাদের এই রোজার মাস সে খবর কেউ না রাখলেও তারা আল্লাহ তাদের খবর রাখেন তাই আল্লাহর রহমতের দিকে তাকিয়েই প্রতিদিন বর্তা, শাক, লতা পাতা রান্না করে সেহরী খেয়ে কোন রকম রোজা পালন করছেন।
কেমন কাটছে তাদের রোজার মাস, এবং কি দিয়ে ভাত খেয়ে আজ রোজা রাখছেন জানতে চাইলে বেঁদে পরিবারের ৮০ বছর বয়সি জমিলা খাতুন বলেন, ‘আরে বা’জান গো, কি দিয়া আর ভাত খামু আমরা গরীব মানুষ, বেইন রাইতে বর্তা আর হাগ সবজি দিয়া ভাত খাই। বিয়াল বেলা পানি আর চাইরডা মুড়ি দিয়া ইপতার করি। আমরা মাছ-গোছ কই পামু বা। মাঝে মাঝে ওই চাইর তলার (পাশের ভবন) হেতিরা (বাসিন্দারা) একটু বাজি-বুজি দেয়, তহন তা দিয়া বেইন রাইতে ( ভোর রাত) ভাত খাইয়া রোজা রাহি। আমার মাইয়ায় ওই চাইর তলায় কাম কাইজ করে হেলিগ্গা ( (সেজন্যে) হেরা মাঝে মাঝে একটু আকটু তরকারি দেয়।
প্রশাসন কিংবা কোথা থেকে তারা কোন সাহায্য সহযোগিতা পান কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে জমিলা খাতুন অনেক দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বলেন, আ গো বা’জান গো আমাগো রে কেউই কোন সাহায্য সহযোগিতা করেনা। গরীব রে কে কি দেয়, আমাগো খবর আল্লা ছাড়া কেউ রাহেনা। আমরা কোন রকম শাক লতা পাতা টোকিয়ে তরকারি রান্না করে খাই।
একই ভাবে বেঁদে পরিবারের কোরফুন্নেছা মনি ও শাহনাজ বেগম বলেন, রোজার মাসে আমরা তেমন ভালো নেই। ‘রমজান মাসে রোজা রাইকখা সিংগা নিতে চায়না। তাছাড়া বৃষ্টি ও প্রচন্ড রোদের কারনে আমরা থালা বাসনও ফেরি কইরা বেছতে পারিনা। আর বেছতে গেলেও মানুষজন তা কিনতে চায়না। নদীতে তেমন মাছ ধরা পড়ছে না , এজন্য আমাদের আয় উর্পাজন নেই। অনেক কষ্ট করে আমাদের সংসার চলে। আমরা খাইয়া না খাইয়া কোন রকম দিন পার করছি।’
শুধু চৌধুরী ঘাটস্থ কোস্টগার্ড পন্টুন সংলগ্নই নয় এর বাইরেও চাঁদপুর শহরের ৫ নং খেয়া ঘাট, শেখের হাট, শাহতলী, রঘুনাথপুরসহ শহর ও তার বাইরে বহু বেদে পরিবার রয়েছে। তারাও একই ভাবে অনেক কষ্টে দিনযাপন করছেন বলে জানা গেছে।
১০ নং ঘাটস্থ ৫ নং ঘাট এই দুই স্থানের বেঁদে পরিবারদের সরদার আবদুল মালেক সরদার চাঁদপুর টাইমসকে জানান, ‘শহরের এ দুই স্থানে মোট ২’শ ৭০ জন বেঁদে পরিবার রয়েছে। তারা এখানে থাকছেন শত বছরেরও বেশি সময় ধরে।’
তিনি জানান, ‘সরকারিভাবে তাদেরকে কোন সাহায্য সহযোগিতা না করা হলেও ঈদসহ ধর্মীয় বিভিন্ন উৎসবে চাঁদপুর পৌরসভার মেয়র তাদেরকে বিভিন্ন সাহায্য সহযোগিতা করেন। এছাড়াও বেঁদে পরিবারের মোট ৮০ জন জেলে কার্ডপ্রাপ্তরা চাল পেয়ে থাকেন।’
আবদুল মালেক সরদার আরো জানান, ‘পৌর মেয়র নাছির উদ্দিন আহমেদ ও সাংসদ ডাঃ দীপু মনি বলেছেন তাদের বাসস্থানে গুচ্ছ গ্রাম করে দিবেন।’
কবির হোসেন মিজি
: আপডেট, বাংলাদেশ সম ৪: ০০ এএম, ১০ জুন ২০১৭, শনিবার
ডিএইচ