বন্যার পানি স্থলভাগের খুব উঁচুতে না উঠলেও এবারের বন্যা দীর্ঘস্থায়ী হওয়ার আশংকা রয়েছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, গত ২৭ জুন থেকে দেশের উত্তরাঞ্চল দিয়ে শুরু হওয়া এবারের বন্যার ধরন অনেকটা ’৯৮-এর মতোই। ১৯৯৮ সালের বন্যা ৩৩ দিন স্থায়ী হয়েছিল। ওই বন্যায় দেশের অর্ধেকেরও বেশি এলাকায় জীবন ও সম্পদের বিপুল ক্ষয়ক্ষতি হয়।
সরকারের বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র বলছে, চলমান বন্যার পানি আগামী দু–এক দিনে কমে আবারও বাড়তে শুরু করবে। দেশের উত্তরাঞ্চলের ৭ থেকে ৮টি জেলায় এই বন্যা ২০ থেকে ২২ জুলাই পর্যন্ত স্থায়ী হতে পারে।
দেশের দুর্যোগ বিশেষজ্ঞরা সম্ভাব্য দীর্ঘমেয়াদি বন্যার জন্য খাবার, ওষুধ ও অন্যান্য ত্রাণসামগ্রী দ্রুত প্রস্তুত করার পরামর্শ দিয়েছেন। একই সঙ্গে করোনা সংক্রমণের ঝুঁকি মোকাবিলার সক্ষমতাসহ আশ্রয়কেন্দ্রগুলো প্রস্তুত করতে বলেছেন। দীর্ঘদিন ধরে ব্যবহার না হওয়া বন্যা আশ্রয়কেন্দ্রগুলো দ্রুত প্রস্তুত করার ওপরও জোর দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।
ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের ইমেরিটাস অধ্যাপক আইনুন নিশাত বলেন, ‘জুন–জুলাইয়ের বন্যায় সাধারণত চরাঞ্চল ও নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়। কিন্তু এবার এখনই শুনতে পাচ্ছি, সিরাজগঞ্জসহ অনেক এলাকায় বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ ভেঙে পানি ঢুকে পড়ছে। আগামী ৩ থেকে ৪ দিনের মধ্যে যদি বন্যার পানি আরও বাড়ে, তাহলে বাঁধগুলো আরও ভেঙে বন্যায় সুরক্ষিত হিসেবে চিহ্নিত অনেক এলাকা প্লাবিত হতে পারে। এটা কেন হলো খোঁজ নিতে হবে এবং দ্রুত বাঁধগুলো যাতে আর না ভাঙে সেই ব্যবস্থা করতে হবে।’
১৪ লাখ মানুষ পানিবন্দী
সরকারের ত্রাণ ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা মন্ত্রণালয়ের হিসাবে, বর্তমানে দেশের ১৪টি জেলার প্রায় সাড়ে তিন লাখ মানুষ বন্যার পানিতে বন্দী অবস্থায় আছে। বন্যার কারণে ঘর ও ফসলের ক্ষতি হয়েছে প্রায় ১৪ লাখ মানুষের। সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত জেলা হচ্ছে জামালপুর, গাইবান্ধা ও সুনামগঞ্জ। বন্যায় আক্রান্ত অন্য জেলাগুলো হচ্ছে মানিকগঞ্জ, রাজবাড়ী, মাদারীপুর, সিলেট, টাঙ্গাইল, বগুড়া, সিরাজগঞ্জ, লালমনিরহাট, কুড়িগ্রাম, নীলফামারী।
এদিকে নদীভাঙন, পাহাড়ি ঢল, অতিবৃষ্টি, ঘূর্ণিঝড়, বন্যা, ভূমিকম্প, অগ্নিকাণ্ডসহ বিভিন্ন প্রাকৃতিক দুর্যোগে ক্ষতিগ্রস্তদের মানবিক সহায়তা দিতে সারা দেশে ১০ হাজার ৯০০ টন চাল এবং এক কোটি ৭৩ লাখ টাকা বরাদ্দ দিয়েছে সরকার। এসব ত্রাণ সমাগ্রী ডিসিদের অনুকূলে বরাদ্দ দিয়ে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় থেকে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদফতরের মহাপরিচালকে চিঠি পাঠানো হয়েছে।
এছাড়া বন্যাক্রান্ত ১২ জেলায় ২৪ হাজার প্যাকেট/বস্তা শুকনা ও অন্যান্য খাবার, শিশু খাদ্য কিনতে ২৪ লাখ টাকা এবং গো-খাদ্য কিনতে আরও ২৪ লাখ টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। মোট ২ কোটি ২১ লাখ টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়েছে।
বার্তা কক্ষ, ৬ জুলাই ২০২০
Chandpur Times | চাঁদপুর টাইমস Top Newspaper in Chandpur