বন্যায় সিলেটের ৭ শতাধিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ

পাহাড়ি ঢলের কারণে সৃষ্ট বন্যার পানি সিলেটের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতেও ঢুকে পড়েছে। যে কারণে সরকারি ঘোষণা ছাড়াই বন্ধ হয়ে গেছে জেলার সাত শতাধিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের পাঠদান কার্যক্রম।

খোঁজ নিয়ে জানা গেলো, জেলার পাঁচ শতাধিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্যার পানিতে প্লাবিত হয়েছে। আরও ২০০ শতাধিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে বন্যা দুর্গতদের জন্য আশ্রয়কেন্দ্র খোলা হয়েছে। এ কারণে জেলার অন্তত সাত শতাধিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের পাঠদান কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে।

গত ১০ মে থেকে সিলেটে ভারী বর্ষণ শুরু হয়, যা এখনো চলমান। একই সঙ্গে উজান থেকে নামছে ঢল। এতে গত ১১ মে থেকেই সিলেটের নিম্নাঞ্চল তলিয়ে যেতে শুরু করে। আর গত ১৩ মে থেকে পানিতে তলিয়ে যেতে শুরু করে সিলেট নগর। এখন বন্যা পরিস্থিতি ভয়াবহ রূপ নিয়েছে।

বন্যার পানিতে তলিয়ে গেছে সিলেট সদর উপজেলার লামা আকিলপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। এই বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সুলতানা রাবিয়া জুবেরী জাগো নিউজকে জানান, তার স্কুলের ক্লাসরুমের ভেতরেই হাঁটুজল রয়েছে। একারণে গত সোমবার থেকে বিদ্যালয় বন্ধ রয়েছে।

তিনি আরও বলেন, এবারের বন্যার কারণে তার আশপাশের স্কুলগুলোরও একই অবস্থা। রাস্তাঘাট ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো তলিয়ে যাওয়ায় পাঠদান বন্ধ হয়ে গেছে। গত ১৮ বছরের মধ্যে এত পানি দেখেননি বলে জানান এই নারী প্রধান শিক্ষক।

ইমরান আহমদ সরকারি মহিলা কলেজের অধ্যক্ষ ড. এনামুল হক সরদার বলেন, আমাদের কলেজের নিচতলায় প্রায় চার ফুট পানি। একারণে পাঠদান বন্ধ রয়েছে। তবে ডিগ্রি পরীক্ষা চলমান থাকায় বিশেষ ব্যবস্থায় কলেজের দ্বিতীয় তলায় পরীক্ষা নেওয়া হচ্ছে।

বন্যার কারণে নগরের বেশকিছু কিন্ডারগার্টেন স্কুলও বন্ধ রয়েছে। এর মধ্যে নগরের ১০ নম্বর ওয়ার্ডের নবাব রোডস্থ আল মদিনা ইন্টারন্যাশনাল স্কুল অ্যান্ড কলেজ, কলাপাড়াস্থ জালালাবাদ স্কুল অ্যান্ড কলেজ, লামাপাড়াস্থ সানরাইজ স্কুল, ঘাসিটুলা মাদরাসা, ঘাসিটুলা গ্রিনবার্ড স্কুলসহ এই ওয়ার্ডেই অন্তত ১২টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ রয়েছে।

আল মদিনা ইন্টারন্যাশনাল স্কুল অ্যান্ড কলেজের অধ্যক্ষ অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ মঈন উদ্দিন বলেন, রোববার সন্ধ্যায়ও স্কুল ক্যাম্পাস শুকনো ছিল। কিন্তু সোমবার সকালে প্রতিষ্ঠান খুলতে গিয়ে দেখি স্কুলের রাস্তা ও ক্লাসরুমে এক ফুটের ওপরে পানি চলে এসেছে। এরপর থেকে বিনা ঘোষণায় স্কুলটি বন্ধ রয়েছে।

সিলেট জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিস সূত্রে জানা গেছে, জেলায় ১ হাজার ৪৭৭টি প্রাথমিক বিদ্যালয় আছে। এর মধ্যে বৃহস্পতিবার সকাল পর্যন্ত ৪০০টি পানিতে প্লাবিত হয়েছে। ফলে এসব বিদ্যালয়ে পাঠদান বন্ধ রয়েছে। গোয়াইনঘাট, কানাইঘাট, জৈন্তাপুর, জকিগঞ্জ, কোম্পানীগঞ্জ ও সিলেট সদর উপজেলায় সবচেয়ে বেশি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান প্লাবিত হয়েছে।

জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা শাখাওয়াত হোসেন এরশাদ বলেন, বন্যাকবলিত এলাকার প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোতে পানি চলে আসায় পাঠদান বন্ধ রয়েছে। বন্যায় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান তলিয়ে যাওয়ার বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে।

তিনি আরও বলেন, জেলার সব বিদ্যালয়ে পাঠদান বন্ধের বিষয়ে কোনো নির্দেশনা আসেনি। যে বিদ্যালয়গুলোতে এখনো পানি ওঠেনি, সেগুলোকে প্রয়োজনে আশ্রয়কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহারের জন্য প্রস্তুত রাখতে বলা হয়েছে।

এদিকে, মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, জেলায় প্রায় দেড়শো মাধ্যমিক বিদ্যালয় ও মাদরাসায় পানি উঠেছে। এগুলোতেও পাঠদান বন্ধ রয়েছে।

জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা জাহাঙ্গীর আলম জানান, বন্যার পানিতে কানাইঘাটে ৪২টির মধ্যে ৩৭টি, বিশ্বনাথে ৫১টির মধ্যে পাঁচটি, জৈন্তাপুরে ৩২টির মধ্যে ১২টি, সদরের ৯৫টির মধ্যে ১৮টি, গোয়াইনঘাটে ৪৮টির মধ্যে ১৮টি ও কোম্পানীগঞ্জের ২৬টির মধ্যে ১৫টি বিদ্যালয় প্লাবিত হয়েছে। এছাড়া দক্ষিণ সুরমা ও নগরে আরও ২০টি মাধ্যমিক বিদ্যালয়সহ মোট ১২৫টি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে বন্যার পানি ঢুকে পড়েছে।

তিনি বলেন, পানি বৃদ্ধির কারণে প্লাবিত বিদ্যালয়ের সংখ্যাও বাড়ছে। এগুলোতে আপাতত পাঠদান বন্ধ রাখা হয়েছে। এছাড়া আরও অনেক বিদ্যালয়ে পানি না প্রবেশ না করলেও বন্যা আশ্রয়কেন্দ্র ঘোষণা করায় পাঠদান বন্ধ রয়েছে।

জেলাপ্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, সিলেট জেলা ও মহানগর এলাকায় মোট ২৭৪টি বন্যা আশ্রয়কেন্দ্র খোলা হয়েছে। এর মধ্যে সিলেট জেলায় ২৫২টি ও নগরে ২২টি। এই আশ্রয়কেন্দ্রগুলোর মধ্যে অনন্ত ২০০টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান রয়েছে।

প্রাথমিক ও মাধ্যমিক বিদ্যালয় ছাড়াও জেলার বিভিন্ন উপজেলার অন্তত ২০টি কলেজ প্লাবিত হয়ে পড়ায় পাঠদান বন্ধ রয়েছে।

এদিকে, জেলার বেশির ভাগ এলাকা প্লাবিত হওয়ায় যেসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে এখনো শিক্ষা কার্যক্রম চলছে সেসব প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা বিপাকে পড়েছেন।

সিলেটের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা) ইয়াসমিন নাহার রুমা বলেন, বন্যার কারণে বিপুল সংখ্যক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পাঠদান বন্ধ আছে। একারণে শিক্ষার্থীদের ক্ষতি হচ্ছে। কিন্তু প্রাকৃতিক দুর্যোগে তো আমাদেরও কারও কিছু করার নেই। পানি কমলে এই ক্ষতি পুষিয়ে নেওয়া হবে।

বার্তা কক্ষ, ২০ মে ২০২২

Share