দেশের বন্যারঅবনতি হয়েছে । মধ্যাঞ্চলে বাড়ছে পানি। প্লাবিত হচ্ছে নতুন নতুন এলাকা। পানি বন্দী হয়ে আছে কয়েক লাখ পরিবার। ঘর-বাড়ি পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় রান্না বন্ধ তাদের।
সরকারি ও বেসরকারিভাবে ত্রাণ সামগ্রী বিতরণ শুরু হলেও বানভাসি সব মানুষের কাছে তা’ পৌঁছাতেি বিলম্ব হওয়ার অভিযোগ রয়েছে। ফলে অনেকে অনাহারে-অর্ধাহারে দিন কাটাচ্ছেন।
দুর্যোগ ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী ১৫ লাখ মানুষ বন্যা উপদ্রূত। পানিতে তলিয়ে গেছে ৯ হাজার বাড়ি-ঘর। ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে আরো ১২ হাজার বাড়ি-ঘর। তবে বন্যা উপদ্রুত অঞ্চলের আমাদের সংবাদদাতাদের তথ্য অনুযায়ী প্রকৃত সংখ্যাটা আরো বেশি হবে।
বন্যার কারণে উপদ্রুত এলাকার ধান ও শাক-সবজি ক্ষেত তলিয়ে গেছে। ফলে স্থানীয়ভাবে সবজির সরবরাহ হ্রাস পেয়েছে এবং দাম বেড়েছে কয়েকগুণ। রাজধানী ঢাকায় এর প্রভাব পড়েছে ব্যাপক। কোনো কোনো সবজির দাম বেড়ে দ্বিগুণ হয়েছে।
উত্তরাঞ্চলের নদীসমুহের পানি সামান্য কমলেও সবগুলো নদীই শনিবার এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত বিপদসীমার উপর দিয়েই প্রবাহিত হচ্ছে। ব্রহ্মপুত্র, যমুনা, পদ্মা, ধলেশ্বরী, ধরলা, আত্রাই, ঘাঘটের মতো নদীগুলো বিপদ সীমার ৫০ থেকে ১৩৫ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। যদিও ধরলা, ঘাগট, ব্রহ্মপুত্র, যমুনার পানি সামান্য কমেছে।
পানি বিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন, বাংলাদেশে বন্যা মূলত ব্রহ্মপুত্র অববাহিকার পানির কারণে। বাংলাদেশের অভ্যন্তরেতো বটেই ভারতের আসামের বিভিন্ন অঞ্চলে প্রবল বর্ষণ হওয়ায় সে পানি আসছে ব্রহ্মপুত্র-যমুনা হয়ে। গঙ্গা বেসিনের পানি তেমন আসছে না। ভারতের বিভিন্ন অঞ্চলে গঙ্গার পানি সরিয়ে নেয়া হচ্ছে শুষ্ক অঞ্চলে। ফলে বাংলাদেশে প্রবাহিত গঙ্গা নদীর শতাধিক কিলোমিটারে পানি রয়েছে স্থিতিশীল। পদ্মায় যে পানিটা পড়ছে তা যমুনা থেকে আসা এবং পদ্মা পাড়ের বন্যার কারণও এটা। বর্তমানে বৃষ্টির যে ধরন তা থেকে মনে হচ্ছে এ বছর বাংলাদেশে বড় ধরনের কোনো বন্যা হবে না।
নদীর দু’ তীরে সৃষ্ট বন্যায় অর্থনৈতিক ক্ষতির পাশাপাশি মানুষের মধ্যে দেখা দিয়েছে নানা ধরনের রোগ-ব্যাধি। ত্রাণ সামগ্রী বিতরণ করা হলেও পর্যাপ্ত চিকিৎসা সুবিধা পাচ্ছেন না। হাসপাতালগুলো চিকিৎসা দেয়ার জন্য প্র¯তুত রাখা হলেও মানুষ তেমন আসতে পারছে না।
উপদ্রুত এলাকায় সরকারি অথবা বেসরকারি কোনো ধরনের মেডিক্যাল টিম যায়নি বলে খবর পাওয়া গেছে। মানুষ ডায়রিয়ায় আক্রাান্ত হচ্ছেন। দীর্ঘ দিন পানির মধ্যে বসবাস করায় ডায়রিয়া, আমাশয়ের সাথে সাথে যোগ হয়েছে নানা ধরনের চর্মরোগ, চোখ উঠা। পানিতে ডুবে মারা যাচ্ছে শিশুরা।
বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ডের পর্যবেক্ষণাধীন ৯০টি স্টেশনের মধ্যে ধরলা নদী কুড়িগ্রামে ৭০ সে.মি, ব্রহ্মপুত্র নদ চিলমারিতে ৮০ সে.মি, যমুনানদী বাহাদুরাবাদে ১১৬ সে.মি., সারিয়াকান্দিতে ৯৭ সে.মি. কাজিপুরে ৭৯ সে.মি, সিরাজগঞ্জে ৮৯ সে.মি ও আরিচায় ৫৪ সে.মি, গুরনদী সিংড়ায় ১৭ সে.মি. আত্রাই নদী বাঘাবাড়িতে ১০২ সে.মি, ধলেশ্বরী নদী এলাসিনে ১৩৫ সে.মি, লক্ষ্যা নদী নারায়ণগঞ্জে বিপদসীমায়, কালিগঙ্গা নদী তারাঘাটে ৪৭ সে.মি,পদ্মা নদী গোয়ালন্দে ৯৭ সে.মি, ভাগ্যকুলে ৪৮ সে.মি ও সুরেশ্বরে ১৫ সে.মি, কংস নদী জারিয়াজাঞ্জাইলে ৮৯ সে.মি এবং তিতাস নদী ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় বিপদসীমার ৩৯ সে.মি. উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
নিউজ ডেস্ক : আপডেট, বাংলাদেশ সময় ০৩:০০ পিএম, ৩১ জুলাই ২০১৬, রোববার
এজি/ডিএইচ