বন্যার উচ্চ ঝুঁকিতে দেশের ৬০% মানুষ

প্রতি বছর বর্ষার মৌসুমে বাংলাদেশে আঘাত হানে বন্যা। সম্প্রতি এক প্রতিবেদনে বলা হয়, বাংলাদেশের ৬০% মানুষ বন্যার উচ্চ ঝুঁকিতে রয়েছে।

বুধবার (২৩ আগস্ট) প্রকাশিত গ্রান্থাম রিসার্চ ইনস্টিটিউট অন ক্লাইমেট চেঞ্জ অ্যান্ড দ্য এনভায়রনমেন্ট অ্যান্ড সেন্টার ফর ক্লাইমেট চেঞ্জ ইকোনমিক্সের প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, বাংলাদেশের ৪৫% মানুষ নদীর পানি বেড়ে সৃষ্ট বন্যার ঝুঁকিতে রয়েছে। যা বিশ্বে সর্বোচ্চ।

এতে আরও বলা হয়, বর্তমানে বন্যায় প্রতি বছর গড়ে বাংলাদেশের স্থলভাগের ২০-২৫% এলাকা জলমগ্ন হয়। অন্যদিকে, চরম বন্যার কারণে দেশের ৫৫-৬০% এলাকা জলমগ্ন হয়। জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে বন্যার ঝুঁকি আরও বেড়েছে। এতে আর্থিক খরচসহ মানবসম্পদের ক্ষতির সম্ভাবনাও বাড়ছে।

প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, অবস্থানগত কারণে এবং নিচু সমতল ভূমির জন্য বাংলাদেশে বন্যার প্রবণতা রয়েছে। অতিবৃষ্টির মতো জলবায়ু পরিবর্তন সম্পর্কিত বেশ কিছু কারণে বাংলাদেশে বন্যার ঝুঁকি আরও বাড়ছে।

গবেষকদের ধারণা, ক্রমাগত জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে উচ্চ নির্গমন পরিস্থিতিতে নদী প্রবাহের সর্বোচ্চ মাত্রা গড়ে ৩৬% বাড়তে পারে। কম-নির্গমন পরিস্থিতিতে ১৯৭১-২০০০ সালের তুলনায় ২০৭০-২০৯৯ সালের মধ্যে সেটি ১৬% বাড়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

সামগ্রিকভাবে ২০০০ থেকে ২০১৯ সালের মধ্যে বিশ্বব্যাপী জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান সপ্তম। জলবায়ু পরিবর্তনের এই ক্ষতিকর প্রভাবের অধিকাংশই বন্যার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট।

১৯৭১ থেকে ২০১৪ সালের মধ্যে বাংলাদেশে ৭৮টি বন্যার ঘটনায় ৪১,৭৮৩ জনের মৃত্যু হয়েছে। ফসল ও সম্পত্তি বিনষ্ট হওয়ায় এ সময়ে মোট ১,২২০ কোটি ডলারের আর্থিক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।

এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট ব্যাংকের ধারণা, শুধুমাত্র ২০১৪ সালেই বন্যার কারণে বাংলাদেশের অর্থনীতিতে প্রায় ২২০ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে, যা দেশের জিডিপির ১.৫% এর সমান। ধারণা করা হচ্ছে, গত বছর বন্যায় বাংলাদেশের ১০০ কোটি ডলারের আর্থিক ক্ষতি হয়েছে এবং ৭৩ লাখ মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

প্রতিবেদনে বলা হয়, বাংলাদেশ একটি লো-এমিটিং (কম নির্গমনকারী) দেশ। ২০২১ সালে পৃথিবীতে নির্গত গ্রিন হাউস গ্যাসের মাত্র ০.২৫% বাংলাদেশ থেকে নির্গত হয়েছে।

তবে কৃষি এবং জ্বালানিখাত বেশিরভাগ দেশের গ্রিন হাউস গ্যাস নির্গমনের পেছনে দায়ী। এই দুই খাত থেকে যথাক্রমে ৪৪% ও ৩৯% গ্রিন হাউস গ্যাস নির্গত হয়।

কিন্তু জলবায়ু পরিবর্তনের কারণ থেকে বন্যার ঝুঁকি সবই নির্ভর করে বৈশ্বিক নির্গমন হারের ওপর। বিশেষ করে শিল্পোন্নত দেশগুলোর নির্গমন এক্ষেত্রে বড় ভূমিকা রাখে, বলা হয় প্রতিবেদনে।

বন্যা মোকাবিলার জন্য প্রাথমিক প্রচেষ্টা হিসেবে বিবেচনা করা হয় বাঁধ নির্মাণকে। মূলত বিভিন্ন জায়গার বন্যাপ্রবণ এলাকাগুলোকে নিরাপদ রাখতেই এই কাঠামোগত ব্যবস্থার ওপর নজর দেওয়া হয়। কিন্তু বাঁধ নির্মাণ পুরোপুরি কার্যকর না হওয়ায় দেশের জনসংখ্যার একটি বড় অংশই বন্যার ঝুঁকিতে পড়ে।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সাম্প্রতিক সময়ে নেওয়া সরকারি নীতিমালার কারণেও বন্যার ঝুঁকি অনেকাংশে বেড়েছে। বাংলাদেশে কার্যকর বন্যা ঝুঁকি প্রতিরোধী ব্যবস্থাপনা বাস্তবায়নের পথে বাধার হিসেবে রয়েছে দুর্বলতা এবং স্থানীয় চাহিদা সম্পর্কে পর্যাপ্ত জ্ঞানের অভাব, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের মতো স্থানীয় প্রতিষ্ঠানে সক্ষমতার অভাব, প্রশাসনিক সমস্যা।

প্রতিবেদনে বন্যা প্রতিরোধের জন্য পরামর্শ হিসেবে বন্যা মোকাবিলায় কার্যকরী পদক্ষেপ এবং আরও বেশি সাংগঠনিক অংশগ্রহণের ওপর জোর দেওয়া হয়েছে। সরকারী ও বেসরকারি সংস্থাগুলোর (এনজিও) মধ্যে আরও ভাল সমন্বয়ের মাধ্যমে বন্যা ও দুর্যোগের ঝুঁকি নিয়ন্ত্রণে উন্নতি করা যেতে পারে।

২৩ আগস্ট ২০২৩
এজি

Share