হাজারো মানুষের শ্রদ্ধা ও অশ্রুভেজা ভালোবাসায় রাজধানীর বনানী কবরস্থানে চির নিদ্রায় শায়িত হলেন ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী সদস্য সাজেদুল হোসেন চৌধুরী দিপুকে। তিনি আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া বীরবিক্রমের জ্যেষ্ঠ পুত্র।
সোমবার (৪ ডিসেম্বর) বিকেল ২টা ৩০ মিনিটের সময় রাজধানী বনানী কবরস্থান প্রাঙ্গনে তার ৫ম জানাজা জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। পৌনে ৩টার দিকে দাফন করা হয় চাঁদপুর ও ঢাকার জনপ্রিয় এই আওয়ামী লীগ নেতাকে। মতলবের যুবসমাজের আইকন সকলের প্রাণপ্রিয় সাজেদুল হোসেন চৌধুরীকে অশ্রুভেজা ভালোবাসা আর শ্রদ্ধা নিবেদনের মধ্য দিয়ে দাফন কার্যক্রম সম্পন্ন হয়েছ। এসময় এক আবেগঘন পরিবেশে নেতাকর্মী, আত্মীয়-স্বজন,শুভানুধায়ী, শুভাকাঙ্ক্ষীরা তিন মুঠোয় মাটি দিয়ে অশ্রুভেজা ভালোবাসায় প্রিয় নেতাকে শায়িত করেন।
প্রথম তার পিতা বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সভাপতিমন্ডির সদস্য মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া বীর বিক্রম তার সবচেয়ে আদরেরর সন্তানকে তিন মুঠোয় মাটি দিয়ে মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের নিকট শপে দেন। তিনি এসময় তার প্রিয় সন্তানকে যেন মহান আল্লাহ পাক জান্নাতের উচ্চ মাকাম দান করেন তারজন্য মহান আল্লাহ পাকের নিকট দোয়া কামনা করেন। এসময় তিনি আবেগে আপ্লূত হয়ে পরেন। এর তার ছোট ভাই বিশিষ্ট শিল্পপতি বাংলাদেশ আওয়ামীলীগের শিল্প ও বানিজ্য বিষয়ক উপ-কমিটির সদস্য রাশেদুল হোসেন চৌধুরী রনি তার বড় ভাইকে, দিপু চৌধুরীর জ্যেষ্ঠ পুত্র বাংলাদেশ ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সাবেক সহ-সভাপতি ব্যারিস্টার আশফাক চৌধুরী মাহি এবং তার ছোট ভাই রাহি চৌধুরী, তাদের প্রিয় পিতাকে তিন মুঠোয় মাটি দিয়ে চির বিদায় জানান। এরপর পর্যায় ক্রমে নেতাকর্মী, আত্মীয়-স্বজন,শুভানুধায়ী, শুভাকাঙ্ক্ষীরা তাদের প্রিয় নেতাকে চির বিদায় জানান। এসময় সন্তান,বাবা,ভাই এবং দলীয় নেতাকর্মীদের কান্নায় বনানী কবরস্থানের পরিবেশ ভারি হয়ে উঠে। এসময় মানুষের ঢল নামে। তার মরদেহে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান সর্বস্তরের মানুষ।
এ সময় আত্মীয়-স্বজন, ভক্ত-অনুসারী ও নেতাকর্মীদের কান্নায় এলাকার পরিবেশ ভারী হয়ে ওঠে। দাফন শেষে তার আত্মার মাগফিরাত কামনায় কয়েক দফা মোনাজাত ও বিশেষ দোয়া করা হয়। পরে ফুলে ফুলে ছেয়ে যায় সাজেদুল হোসেন চৌধুরী দিপুর কবর।
ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান,স্টার সংবাদ ও চাঁদপুর টিভি, চাঁদপুর-২ আসন (মতলব উত্তর-মতলভ দক্ষিণ) উপজেলার নেতাকর্মী , আত্মীয়-স্বজন,শুভানুধায়ী, শুভাকাঙ্ক্ষীরা তাদের প্রিয় নেতাকে ফুলেল শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। এরপর মরহুম সাজেদুল হোসেন চৌধুরীর দিপুর বিদেহী আত্মার মাগফেরাত কামনায় বিশেষ দোয়া করা হয়। এসময় বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সভাপতিমন্ডির সদস্য মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া বীর বিক্রম, বিশিষ্ট শিল্পপতি বাংলাদেশ আওয়ামীলীগের শিল্প ও বানিজ্য বিষয়ক উপ-কমিটির সদস্য রাশেদুল হোসেন চৌধুরী রনি তার বড় ভাইকে, দিপু চৌধুরীর জ্যেষ্ঠ পুত্র বাংলাদেশ ছাত্র লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সাবেক সহসভাপতি ব্যারিস্টার আশফাক চৌধুরী মাহি এবং তার ছোট ভাই রাহি চৌধুরী, উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সম্পাদক ও উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান মিজানুর রহমান,স্বাস্থ্য বিষয়ক সম্পাদক ও গজরা ইউপির সাবেক চেয়ারম্যান আলহাজ্ব হানিফ দর্জি, জহিরাবাদ ইউনিয়ন আওয়মীলীগের সভাপতি মুক্তার কাজী,ছেংগারচর পৌরসভার সাবেক মেয়র আলহাজ রফিকুল আলম জর্জ, আওয়ামী লীগের উপ-কমিটির সাবেক সদস্য আহসান হাবিব, শাহ আলম সিদ্দিকী, ছেংগারচর পৌর যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক জাকির খান, ষাটনল ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি একেএম শরীফ উল্লাহ সরকার, ফতেপুর পূর্ব ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি ও ইউপি চেয়ারম্যান আজমল হোসেন চৌধুরী, বাগানবাড়ি ইউপির সাবেক চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা নান ুমিয়া, ইউপি চেয়ারম্যান গাজী সেলিম, সুলতানাবাদ ইউপি চেয়ারম্যান আবুবকর ছিদ্দিক খোকন, কেন্দ্রীয় যুবলীগের সাবেক সদস্য রিয়াজুল হাসান রিয়াজ, কলাকান্দা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সোবহান সরকার সুভা, উপজেলা যুবলীগের সদস্য হাসান মোর্শেদ আহার চৌধুরী, হাবিবুর রহমান হাফিজল তপাদার, দূর্গাপুর ইউপির সাবেক চেয়ারম্যান দেওয়ান মো. আবুল খায়ের, ফরাজি কান্দি ইউপির সাবেক চেয়ারম্যান দেলোয়ার হোসেন দানেশ, সাদুল্যাপুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ইউসুফ মিয়া, যুবলীগ নেতা কামরুল হাসান মামুন,মতলব উত্তর উপজেলা ছাত্রলীগের সাবেক আহবায়ক মিনহাজ উদ্দিন খান,সাবেক সিনিয়র যুগ্ম-আহবায়ক তামজিদ সরকার রিয়াদ, জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সহ-সভাপতি জহির রায়হান, মোসাদ্দেক হাওলাদার মামুন, রহমত উল্লাহ সরকার লিখন,ছেংগারচর পৌরসভার সাবেক প্যানেল মেয়র আলহাজ্ব রুহুল আমিন মোল্লা,ছেংগারচর পৌর স্বেচ্ছাসেবকলীগের সভাপতি রফিকুল ইসলাম রিপন, উপজেলা মৎস্যজীবিলীগের সভাপতি নাইমুল ইষলাম লাভলু, সাধারণ সম্পাদক শাহিন চৌধুরী, ফরাজীকান্দি ইউনিয়ন যুবলীগ নেতা ফখরুল ইসলাম, জেলা ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি এসএম সেলিম রেজা, ইঞ্জিনিয়ার ফখরুল ইসলাম রনি, সাবেক সহ-সভাপতি এসএম নোমান দেওয়ান,উপজেলা স্বেচ্ছাসেবকলীগের আহবায়ক সিরাজুল ইসলাম ডাবলু, যুগ্ম-আহবায়ক সুমন দর্জি, উপজেলা ছাত্রলীগের ১ নাম্বার সদস্য সদরুল আমিন,উপজেলা ছাত্রলীগ নেতা জুবায়ের আহমেদ জনিসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক,সামাজিক,সুধিসমাজ,ব্যবসায়ী নেতৃবৃন্দ ও মতলব উত্তর-দক্সিণ উপজেলার নেতাকর্মীরা এসময় উপস্থিত ছিলেন। এদিকে সন্ধ্যার আগে রাজধানীর বনানী কবরস্থানে চির নিদ্রায় শায়িত হলেন ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী সদস্য সাজেদুল হোসেন চৌধুরী দিপুর কবর জেয়ারত করেন তার রত্নগর্ভা মা মিসেস পারবীন চৌধুরী ও সহধর্মিনী মিসেস সূবর্না চৌধুরী বীণা। এসময় তারা কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন।
এর আগে ঢাকার গুলশান সেন্ট্রাল মসজিদ (আজাদ) মসজিদে সাজেদুল হোসেন চৌধুরী দিপুর চতুর্থ জানাজা অনুষ্ঠিত হয়।
এদিন রাজধানীর বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউতে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে বেলা সাড়ে ১১টার দিকে সাজেদুল হোসেন চৌধুরী দিপুর তৃতীয় জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। জানাজায় ইমামতি করেন বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদের পেশ ইমাম হাফেজ মাওলানা মোঃ এহসানুল হক জিলানী।
জানাজায় অংশ নেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ বিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান, আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য জাহাঙ্গীর কবির নানক, সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য মোস্তফা জালাল মহিউদ্দিন, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক বাহাউদ্দিন নাছিম, আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক মির্জা আযম, পানি সম্পদ উপমন্ত্রী এনামুল হক শামীম, বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন, যুবলীগের চেয়ারম্যান শেখ ফজলে শামস পরশ, সাধারণ সম্পাদক মাইনুল হোসেন খান নিখিলসহ ক্ষমতাসীন দলের কেন্দ্রীয় ও ঢাকা মহানগর এবং চাঁদপুরের নেতাকর্মীসহ সর্বস্তরের সাধারণ মানুষ।
জানাজার পূর্বে ছেলের মরদেহের সামনে দাঁড়িয়ে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া বীরবিক্রম বলেন, বাবার কাঁধে ছেলের লাশ কত ভারি, আমি ছাড়া কেউ বুঝবে না। এসময় তিনি নিজ সন্তানের মাগফিরাত কামনায় সবার কাছে দোয়া চান।
জানাজা শেষে দিপু চৌধুরীর বিদেহী আত্মার শান্তি কামনা করে মোনাজাত করা হয়। পরে দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের নেতৃত্বে কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানানো হয় দীপু চৌধুরীর প্রতি। তার মরদেহ ঢেকে দেয়া হয় দলীয় পতাকায়।
এর আগে রোববার (৩ ডিসেম্বর) দুপুর ২টায় চাঁদপুর জেলার মতলব উত্তর উপজেলার মোহনপুর স্কুল মাঠে অনুষ্ঠিত হয় সাজেদুল হোসেন চৌধুরী দিপুর প্রথম জানাজা। এতে সংসদ সদস্য, বিভিন্ন দলের রাজনৈতিক নেতা এবং এলাকার সর্বস্তরের মানুষ উপস্থিত ছিলেন। একইদিন বিকেলে মতলব দক্ষিণ নিউ হোস্টেল মাঠে অনুষ্ঠিত হয় তার দ্বিতীয় জানাজা।
উল্লেখ্য, শনিবার (২ ডিসেম্বর) সন্ধ্যা ৫টা ১৭ মিনিটে রাজধানীর একটি বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান দিপু চৌধুরী। তার বয়স হয়েছিল ৫১ বছর। তিনি বাবা-মা, এক ভাই, এক বোন, স্ত্রী, দুই ছেলে, এক মেয়েসহ অসংখ্য গুণগ্রাহী রেখে গেছেন।
সাজেদুল হোসেন চৌধুরী দিপুর বর্ণাঢ্য জীবন-
কর্মজীবনে সাজেদুল হোসেন চৌধুরী দীপু ছিলেন এমআর কন্সট্রাকশন লিমিটেডের কর্ণধার ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক, চৌধুরী গার্মেন্টস লিমিটেডের পরিচালক, স্টার থাই অ্যালুমিনিয়ামের কর্ণধার ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক এবং রিনালয় সিএনজি ও ফিলিং স্টেশনের কর্ণধার ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক। তিনি অনলাইন নিউজপোর্টাল স্টার সংবাদ ও আইপি টেলিভিশন চাঁদপুর টিভির ব্যবস্থাপনা পরিচালক ছিলেন। এছাড়া ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট ফার্ম স্টারবক্সের ভাইস চেয়ারম্যান ছিলেন তিনি।
১৯৭২ সালে চাঁদপুরের মতলবে জন্মগ্রহণ করা সাজেদুল হোসেন চৌধুরী দীপু ছোটবেলা থেকেই বেড়ে উঠেছেন রাজনৈতিক আবহে। তিনি ছিলেন আওয়ামী লীগের নিবেদিত প্রাণ নেতা ও কর্মী। চাঁদপুরের মতলব উত্তর ও মতলব দক্ষিণ উপজেলায় তার জনপ্রিয়তা ছিল আকাশচুম্বী। তিনি ছিলেন একাধারে সমাজসেবক, ক্রীড়ানুরাগী, ব্যবসায়ী, ধর্মানুরাগী, দানবীর এবং অসহায় মানুষের বন্ধু।
প্রতিবেদক: খান মোহাম্মদ কামাল, ৫ ডিসেম্বর ২০২৩