হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের তৃতীয় টার্মিনাল নির্মাণ কাজ শুরু হয়েছে। গত ২৮ ডিসেম্বর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এ কাজের শুভ উদ্বোধন ও ফলক উন্মোচন করেন। তৃতীয় টার্মিনাল প্রকল্প কাজ সমাপ্ত হলে বাড়বে বিমানবন্দরের সক্ষমতা। বছরে প্রায় ২ কোটি যাত্রীর চলাচলে আন্তর্জাতিক মানের আধুনিক সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত হবে। সবমিলিয়ে বদলে যাবে বিমানবন্দরের দৃশ্য।
জানা গেছে, ক্রমবর্ধমান ফ্লাইটের চাপ সামলাতে এই বিমানবন্দর সম্প্রসারণ করা হচ্ছে। মূল টার্মিনালের দক্ষিণ পাশে সাড়ে ১৪ হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত হচ্ছে সুপরিসর ও অত্যাধুনিক সুবিধা সম্বলিত এই টার্মিনাল। এর মধ্যে প্রকল্প সহায়তা হিসেবে জাপানি সাহায্য সংস্থা জাইকা দেবে ১১ হাজার ২১৪ কোটি টাকা। বাকি অর্থ সংস্থান করবে বাংলাদেশ সরকার। আগামী ২০২৩ সালে এই নির্মাণকাজ সম্পন্ন হবে।
তৃতীয় টার্মিনালের নকশায় রয়েছে ২৪টি বোর্ডিং ব্রিজ, যদিও প্রথম ধাপে নির্মাণ করা হবে ১২টি। পরবর্তীকালে প্রয়োজন অনুযায়ী বাকি ১২টি বোর্ডিং ব্রিজ ধাপে ধাপে নির্মাণ করা হবে। যাত্রীদের তৃতীয় টার্মিনালে চেক ইন বেল্ট থাকবে ১৩টি। আগত যাত্রীদের চাপ সামলাতে ও যানজট এড়াতে বিমানবন্দরের সঙ্গে সংযোগ সড়কেও আসবে পরিবর্তন। একই সঙ্গে হোটেল লা মেরেডিয়ানের কাছেই বিমানবন্দরে ঢোকার মূল সংযোগ সড়ক নির্মাণ করা হবে।
এছাড়া বিমানবন্দরের সঙ্গে ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে যুক্ত করতে সাবওয়ে নির্মাণ করা হবে। নতুন কার্গো ভিলেজের আয়তন হবে ৪১ হাজার ২০০ বর্গমিটার। ভিভিআইপি কমপ্লেক্স ৫ হাজার ৯০০ বর্গমিটার। পার্কিং অ্যাপ্রন হবে ৪ লাখ ৯৮ হাজার ৫০০ বর্গমিটার। এছাড়া র্যাপিড এক্সিট অ্যান্ড কানেকটিং ট্যাক্সিওয়ে, তৃতীয় টার্মিনাল ভবনের সঙ্গে মূল এয়ারপোর্টের সড়কের কানেকটিভিটি তৈরি করা হবে।
এদিকে, তৃতীয় টার্মিনাল নির্মাণ প্রকল্পের জন্য বাংলাদেশ বেসামরিক বিমান চলাচল (বেবিচ) কর্তৃপক্ষ ও এভিয়েশন ঢাকা কনসোর্টিয়াম (এডিসি) এর মধ্যে একটি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে। গত মঙ্গলবার বিমানবন্দরে এক অনাড়ম্বর অনুষ্ঠানের মাধ্যমে এ চুক্তি সাক্ষরিত হয়। চুক্তিপত্রে ‘বেবিচ’ কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান এয়ার ভাইস মার্শাল মোঃ মফিদুর রহমান এবং এডিসি‘র পক্ষে মিতসুবিসি কর্পোরেশনের জেনারেল ম্যানেজার মি. ইয়াসুনোরি সাকামোতো স্বাক্ষর করেন।
জানা গেছে, শুরুতেই তৃতীয় টার্মিনালে যাত্রী সেবার মানের দিকে নজর দেয়া হবে। এক্ষেত্রে টার্মিনালের গ্রাউন্ড হ্যান্ডলিংয়ের কাজ আউটসোর্সিংয়ে দেওয়া হবে। টেন্ডারের মাধ্যমে এই আউটসোর্সিংয়ের কাজ ছেড়ে দেয়া হবে বেসরকারি খাতে। এতে সেবার মান বাড়বে, সহজ হবে ফ্লাইট পরিচালনা।
এ বিষয়ে বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন প্রতিমন্ত্রী মো. মাহবুব আলী বলেন, আন্তর্জাতিক মানের সেবা নিশ্চিত করতে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের তৃতীয় টার্মিনাল অত্যাধুনিকভাবে নির্মাণ করা হচ্ছে। এই টার্মিনাল নির্মাণ শেষ হলে তা হবে এ অঞ্চলের সেরা বিমানবন্দর। আগামী ৪৮ মাসের মধ্যে এ টার্মিনালের নির্মাণ কাজ সম্পন্ন হবে।
বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মো. মহিবুল হক বলেন, তৃতীয় টার্মিনালের নির্মাণ কাজ শুরু করতে আমাদের বেশ কিছু বাধা পেরিয়ে আসতে হয়েছে। সবার আন্তরিক প্রচেষ্টায় এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ঐকান্তিক আগ্রহ, প্রচেষ্টা ও দিকনির্দেশনায় আমরা প্রতিবন্ধকতা পেরিয়ে এ জায়গায় এসেছি। টার্মিনালটি এমন একটি মেকানিজমে নিয়ে আসা হচ্ছে, যাতে কেন্দ্রীয়ভাবে এর প্রতিটি কাজ মনিটরিং করা যাবে।
চাঁদপুর টাইমস রিপোট