১৬% শিশু টিকা থেকে বঞ্চিত

দেশে এখনো ১৬ শতাংশ শিশু টিকা সুবিধা থেকে বঞ্চিত। এমনকি গত ১২ বছরে ইপিআই কভারেজ ৮৪ শতাংশের ওপরে ওঠেনি। সোমবার ‘বিশ্ব টিকাদান সপ্তাহ উদযাপন-২০২৫’ উপলক্ষে যৌথভাবে স্বাস্থ্য সুরক্ষা ফাউন্ডেশন ও ইউনিসেফ বাংলাদেশ আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এই তথ্য জানানো হয়। জাতীয় প্রেস ক্লাবে অনুষ্ঠিত সম্মেলনে মুল প্রবন্ধে সম্প্রসারিত টিকাদান কর্মসূচীর বর্তমান অবস্থা তুলে ধরেন স্বাস্থ্য সুরক্ষা ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক ডা. নিজাম উদ্দিন আহমেদ।

টিকার ৪০% পদ শূণ্য: মুল প্রবন্ধে ইউনিসেফ বাংলাদেশ ও স্বাস্থ্য সুরক্ষা ফাউন্ডেশনের যৌথ গবেষণা (২০২৪) তুলে ধরা হয়। গবেষণার তথ্য অনুযায়ি, বর্তমানে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের অধীনে শহর ও গ্রামে টিকাদান প্রকল্পে বরাদ্দকৃত জনবলের মধ্যে প্রায় ৪০ শতাংশ পদ এবং ইপিআই (সম্প্রসারিত টিকাদান কর্মসূচি) সদর দপ্তরে ৪৩ শতাংশ পদ শূন্য। এছাড়া বরাদ্দকৃত জনসংখ্যাও প্রয়োজনের তুলনায় কম। আরবান ইমিউনাইজেশন স্ট্র্যাটেজি-২০১৯ এবং ইপিআই মাইক্রোপ্ল্যান-২০২৪ অনুসারে প্রতি পঞ্চাশ হাজার জনসংখ্যার জন্য ৬ জন টিকাদানকর্মী প্রয়োজন, যা বাংলাদেশে এখনো বাস্তবায়ন করা হয়নি।

এ ছাড়া অঞ্চলভিত্তিতে টিকাকেন্দ্রের অসম বণ্টন, অপর্যাপ্ত অর্থ বরাদ্দ, টিকার অপর্যাপ্ততা, টিকাদান কর্মীদের প্রশিক্ষণের অভাব, দুর্গম এবং, ঝুঁকিপূর্ণ এলাকায় টিকা পরিবহনজনিত সমস্যা, টিকাদান সম্পর্কিত প্রচারণার অভাব ইত্যাদি কারণও টিকাদান কর্মসূচির বড় বাঁধা।

বরাদ্দ দেরি হচ্ছে: সংবাদ সম্মেলনে আরও বলা হয়, টিকাদান কর্মসূচী সঠিকভাবে পরিচালনা করার জন্য বাজেট বরাদ্দে দেরি হচ্ছে, হেলথ সেক্টর প্ল্যান আগামী ২ বছরের জন্য প্রস্তুত হচ্ছে। এর ফলে টিকা ক্রয়, টিকা পরিবহণ এবং বণ্টনে বাধা সৃষ্টি হচ্ছে। আগামী ২০২৯ সালের পর গ্যাভি টিকাদান প্রকল্পে সহায়তা বন্ধ হয়ে গেলে সরকারকে নিজস্ব অর্থায়নে টিকাদান কর্মসূচি পরিচালনা করতে হবে। তখন ভ্যাকসিনের অপর্যাপ্ততা টিকাদানের লক্ষ্য অর্জনে ব্যাঘাত সৃষ্টি করবে।

টিকার সংকট, পরিবহনেও বাঁধা: সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, অক্টোবর ২০২৪ সাল পর্যন্ত টিকায় বাজেট বরাদ্দ থাকলেও বিশেষ কিছু এন্টিজেন, যেমন- পিসিভি, ওপিভি এবং এমআর টিকার সংকট দেখা যাচ্ছে। টিকাদান কর্মীদের নিয়োগের পর টিকাদান বিষয়ে প্রশিক্ষণের বাবস্থা থাকলেও রিফ্রেসার প্রশিক্ষণের কোন ব্যবস্থা নেই। সারাদেশে শহর থেকে গ্রাম পর্যায়ে টিকাদানকেন্দ্র পরিদর্শন, টিকাদান পর্যবেক্ষণ ও মূল্যায়নের অভাব পরিলক্ষিত হয়। দুর্গম এবং উচ্চ ঝুঁকিপূর্ণ এলাকায় টিকা পরিবহন একটি বড় সমস্যা। বিশেষকরে পাহাড়ি, হাওর এবং নদীতীরবর্তী এলাকায় যানবাহনের সমস্যা থাকায় সঠিক সময়ে টিকাদান কেন্দ্রে টিকা পরিবহন সহজ হয় না।

মুল প্রবন্ধে আরও বলা হয়, আবহাওয়াজনিত (ঝড়, বন্যা, ভূমিধ্বস) কারণেও অনেক সময় টিকা পরিবহনে সমস্যার সম্মুখিন হতে হয়। বস্তিবাসী, ভাসমান জনগোষ্ঠী, পাহাড়ি, হাওর এবং নদীতীরবর্তী এলাকায় টিকাদানের লক্ষ্যমাত্রা অজানা থাকায় জিরো ডোজ এবং মিসড ডোজ শিশুদের সংখ্যা বেড়ে চলেছে। টিকাদান বিষয়ে সচেতনতা বৃদ্ধি বিষয়ক পদক্ষেপের অভাব, টিকাদান কেন্দ্র নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত খোলা রাখা হয়, যা কর্মজীবী মহিলাদের তাদের শিশুদেরকে টিকা দিতে না পারার অন্যতম কারণ।

সুপারিশ: সংবাদ সম্মেলনে ইপিআই এর উচ্চ কভারেজ নিশ্চিত এবং ইপিআই প্রোগ্রামকে আরও বেগবান করতে পরামর্শ তুলে ধরা হয়। সেগুলো হলো- শূন্যপদে দ্রুত নিয়োগ, জনসংখ্যা ভিত্তিক জনবলনীতি অভিযোজন করা, টিকা কেন্দ্রের সুষম বন্টন,কেন্দ্রে প্রয়োজনীয় টিকা নিশ্চিত করা, ভ্যাকসিন সরবরাহ ব্যবস্থাপনা শক্তিশালী করা ও অদুর ভবিষ্যতে ভ্যাকসিনের যে সংকট দেখা দিতে পারে সে ক্ষেত্রে যথাযত বাবস্থা গ্রহন করা।

সংবাদ সম্মেলনে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিচালক এবং লাইন ডিরেক্টর ডা.এস এম আব্দুল্লাহ আল মুরাদ, ইপিআই এর প্রোগ্রাম ম্যানেজার ডা.আবুল ফজল মো.সাহাবুদ্দিন খান উপস্থিত ছিলেন। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা ও স্বাগত বক্তব্য রাখেন ইউনিসেফ বাংলাদেশ ও স্বাস্থ্য সুরক্ষা ফাউন্ডেশন পরিচালিত গবেষণা প্রকল্পের পলিসি অ্যাডভাইজার অধ্যাপক ড.মো.রফিকুল ইসলাম।

২৩ এপ্রিল ২০২৫
এজি

Share