Home / সম্পাদকীয় / বজ্রপাত থেকে রক্ষায় করণীয় নির্ধারণ জরুরি
Editorial

বজ্রপাত থেকে রক্ষায় করণীয় নির্ধারণ জরুরি

মানুষের মধ্যে ‘বজ্রপাত’ শব্দটা যদিও অতি পরিচিত। মানুষও কখনো এর ক্ষয়ক্ষতির দিকটি নিয়ে ভাবেনি। এর কারণ হলো- বজ্রপাতে ক্ষয়ক্ষতি মানুষের মৃত্যুর বিষয়টি খুবই বিরল ছিলো।

দেশের কৃষক, জেলে, কুলি, ক্ষেতমজুরসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ ঝড়-বৃষ্টির মধ্যে খোলা আকাশে কাজ করে। বজ্রপাতে এরাই বেশি আক্রান্ত হচ্ছে।

সাম্প্রতিক সময়ে, বিশেষ করে বছর তিনেক থেকে এটি ক্রমান্বয়ে আলোচনায় আসতে শুরু করেছে। এর ব্যাপকতা বেড়ে বহু সংখ্যক মানুষের অস্বাভাবিক মৃত্যুর অন্যতম কারণ হয়ে দেখা দিচ্ছে। চলতি বছরে ‘বজ্রপাত’ যেন একরকমের ভয়াবহ দুর্যোগরূপে আবির্ভুত হয়েছে। মানুষ অত্যন্ত আতংকিত হয়েছে পড়েছে। বিশেষ করে ক্ষেত-খামারে কাজ করা মানুষের মধ্যে ‘বজ্রপাত’ এক আতংক হিসেবে দেখা দিয়েছে। সম্প্রতি সময়ে বাংলাদেশে ৮০ জন নিহত হওয়ার ঘটনা গোটা দেশকে নাড়া দিয়েছে।

ত্রাণ ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা মন্ত্রী মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া ২৬ মে ২০১৬ এক সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে বজ্রপাতকে জাতীয় দুর্যোগ হিসেবে ঘোষণা দিয়েছেন।

২০১৩ সাল থেকে এর আলাদা হিসাব-নিকাশ ও মনিটরিংয়ের কাজ শুরু করে সরকারের পক্ষ থেকে জাতীয় দুর্যোগ সাড়াদান কেন্দ্র। বেসরকারি একটি সংগঠন- ‘দুর্যোগ ফোরাম’ ও দেশে বজ্রপাতে নিহতের একটি হিসাব-নিকাশ দেখাচ্ছে।

২০১৩ সালের ৬ সেপ্টেম্বর প্রকাশিত একটি জাতীয় দৈনিকের প্রকাশিত প্রতিবেদনে এ দুর্যোগ ফোরাম-এর বরাত দিয়ে বলা হয়েছিলো, বাংলাদেশে ২০১১ সালে ১৭৯ জন এবং ২০১২ সালে ১৫২ জন মানুষ বজ্রপাতে নিহত হয়েছেন। ।

বজ্রপাতের স্থায়ীত্ব অত্যন্ত অল্প সময়ের। তাই বজ্রপাতকে প্রাকৃতিক দুর্যোগ নয়, আপদ হিসেবেই দেখছে। এ আপদ কীভাবে মোকাবিলা করা যাবে সেই উপায়-পন্থা এখনো বের করা যায়নি। পূর্বাভাস দেয়ার মতোও কোনো প্রস্তুতি নেই আবহাওয়াবিদগণের।

আবহাওয়াবিদরাও একেক জন একেক কথা বলছেন। কালবৈশাখির সম্ভাবনা থাকলে বজ্রপাতের আশংকা হতে পারে। কালবৈশেখির আভাস পেলেই ঘন্টাখানেকের জন্য বজ্রপাতের পূর্বাভাস দেয়ার পরামর্শ দিচ্ছেন। যাতে মানুষ ওই সময়ের জন্য নিরাপদ স্থানে আশ্রয় নিতে কৃষক ও ক্ষেতমজুরদের পরামর্শ দেয়া হয় ।

এক সময় গ্রামে-গঞ্জে অভিশাপ হিসেবে দেখা হতো বজ্রপাতে মৃত্যুকে। মানুষ এটাকে স্বয়ং আল্লাহতা’আলার সরাসরি শাস্তি হিসেবে মনে করতো। মিরজাফরের পুত্র মিরন বজ্রপাতে নিহত হওয়ার ঘটনাটি বহুল আলোচিত হয়। তখন বজ্রপাতে মৃত্যুর ঘটনা ছিলো বিরল। সাধারণত মাওলানা-মৌলভীরা বিভিন্ন প্রাকৃতিক দুর্যোগকে সমাজ ও রাষ্ট্রের প্রতি আল্লাহর অসন্তুষ্টির প্রভাব হিসেবে বর্ণনা করে থাকেন।

দেশে সাম্প্রতিক সময়ে বজ্রপাতে মৃত্যুর প্রবণতা বাড়ার কারণ হিসেবে কেউ কেউ বলেন, ধাতব দ্রব্যের ব্যবহার বৃদ্ধি, অসংখ্য হারে ম্যাগনেট ফিলার চুরি ও পাচার, বৈদ্যুতিক ব্যবহার, জলবায়ু পরিবর্তন প্রভৃতি এর জন্য দায়ী।

বিজ্ঞানীদের মতে, বায়ুমন্ডলে বাতাসের তাপমাত্রা ভূ-ভাগের উপরিভাগের তুলনায় কম থাকে। এ অবস্থায় বেশ গরম আবহাওয়া দ্রুত উপরে উঠে গেলে আর্দ্র বায়ুর সংস্পর্শ পায়। তখন গরম আবহাওয়া দ্রুত ঠান্ডা হওয়ায় প্রক্রিয়ার মধ্যে আলোড়ন সৃষ্টি হয়ে বজ্রমেঘের সৃষ্টি হয়।

আবার কেউ কেউ বলেন, পৃথিবীর মধ্যাকর্ষণ শক্তি অক্ষুন্ন রাখার জন্য বজ্রপাত প্রাকৃতিক চার্জ হিসেবে কাজ করে। অন্য বিজ্ঞানীদের বক্তব্য হলো – হিমালয়ের পাদদেশ থেকে বঙ্গোপসাগর পর্যন্ত জলবায়ু পরিবর্তনের কেন্দ্র হিসেবে বিবেচিত বলেই বাংলাদেশকে বজ্রপাতপ্রবণ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়। চৈত্র-বৈশাখে কালবৈশাখীর সময়ে বজ্রপাতের ঘটনা সবচেয়ে বেশি ঘটে।

এখন পর্যন্ত বজ্রপাত প্রতিরোধ বা এটাকে থামানোর কোন কৌশল বিজ্ঞান আবিষ্কার করতে পারেনি। তবে সাবধানতা অবলম্বন করে বজ্রপাত থেকে নিজেকে কিছুটা রক্ষা করা সম্ভব বলে আবহাওয়াবিদগণ বলেছেন।

বজ্রপাত থেকে মুক্তি পেতে সরকার ও সংশ্লিষ্ট সকলের আরো বেশি সচেতনতা এবং প্রচারণার পাশাপাশি গবেষণাধর্মী একটি করণীয় নির্ধারণ করাও জরুরি। আমরা আশা রাখি সরকারের বিভাগগুলি এ বিষয়ে এগিয়ে আসবেন।

সম্পাদকীয় : আপডেট, বাংলাদেশ সময় ০৫:০০ এএম, ২০ জুন ২০১৬, সোমবার
ডিএইচ

Leave a Reply