বজ্রপাতে চাঁদপুরসহ নয় জেলায় ১৬ জনের প্রাণহানির ঘটনা ঘটেছে। ২৩ মে মঙ্গলবার দুপুর থেকে নরসিংদী, পাবনা, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, পটুয়াখালী, শরীয়তপুর, নেত্রকোনা, নওগাঁ, সুনামগঞ্জ ও চাঁদপুর জেলায় বজ্রপাতে এসব প্রাণহানির ঘটনা ঘটে।
চাঁদপুর সদর উপজেলার রামপুর ইউনিয়নের পশ্চিম ছোট সুন্দর গ্রামে বজ্রপাতে মো. হাসান মিজি (৪৫) নামে এক ব্যক্তির মৃত্যু হয়েছে।
২৩ মে মঙ্গলবার বিকেল ৩টার দিকে ওই গ্রামের গফুর মিয়াজী বাড়িতে এ ঘটনা ঘটে। নিহত হাসান ওই বাড়ির মৃত মো. কামাল উদ্দিন মিজির ছেলে। নিহত হাসানের ভাতিজা রামপুর ইউনিয়ন যুবলীগের যুগ্ম আহ্বায়ক মো. মারুফ মিজি বলেন, ঝড়ের সময় হাসান বাড়ির পাশের বাগানে আম কুড়াচ্ছিলেন। এ সময় বজ্রপাতে ঘটনাস্থলেই তার মৃত্যু হয়।
রামপুর ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) চেয়ারম্যান মো. আল মামুন পাটওয়ারী বলেন, প্রাথমিকভাবে জানতে পেরেছি, আম কুড়াতে গিয়ে বজ্রপাতে হাসানের মৃত্যু হয়েছে।
নরসিংদীতে পৃথক স্থানে বজ্রপাতে এক নারীসহ ৫ জনের মৃত্যু হয়েছে। মঙ্গলবার জেলার রায়পুরা মনোহরদী শিবপুর ও নরসিংদী সদরের বিভিন্ন স্থানে এ মৃত্যুর ঘটনা ঘটে।
নিহতরা হলেন- রায়পুরা উপজেলার শ্রীনগর ইউনিয়নের ফকিরের চর গ্রামের মোমরাজ মিয়ার স্ত্রী সামসুন নাহার (৪৫), নিলক্ষা ইউনিয়নের গোপীনাথপুর গ্রামের ইসমাইল মিয়ার ছেলে জাবেদ মিয়া (১২) ও মনোহরদী উপজেলার দৌলতপুর ইউনিয়নের পাতরদিয়া গ্রামের মৃত বাদল মিয়ার ছেলে প্রবাস ফেরত রায়হান মিয়া (২৫)। শিবপুরের দক্ষিণ সাদারচর গ্রামের খোরশেদ মিয়ার ছেলে খোকন মিয়া (৩০)। নরসিংদী শহরের পশ্চিম কান্দাপাড়া মহল্লার শুকুমার রায়ের ছেলে শুপ্তকর (১৪)। সে সাঠিরপাড়া কালিকুমার উচ্চ বিদ্যালয়ের অষ্টম শ্রেণীর ছাত্র।
ব্রাহ্মণবাড়িয়া: ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বাঞ্ছারামপুরে মেঘনা নদীতে নৌকার পানি সেচতে গিয়ে এক মাছ ব্যবসায়ীর মৃত্যু হয়েছে। মঙ্গলবার দুপুরে উপজেলার মানিকপুর ইউনিয়নের মায়ারামপুর গ্রামের মৃত আব্দুল কাদিরের ছেলে মেনু মিয়া (৩৫) মাছধরার নৌকা সেচতে গিয়ে বজ্রপাতে মারা যান। পরে এলাকাবাসী তাকে নদী থেকে উদ্ধার করে বাঞ্ছারামপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে আসলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। মৃত্যুকালে রেখে যান স্ত্রী ও এক সন্তান।
এ ব্যাপারে মেনু মিয়ার চাচাতো ভাই নুরুল ইসলাম বলেন, আমার চাচাতো ভাই একজন সহজ সরল মানুষ ছিল। আজ দুপুরে বৃষ্টির সময় তার মালিকের নৌকা সেচতে গিয়ে বজ্রপাতে মারা যান। আমরা নদী থেকে উদ্ধার করে বাঞ্ছারামপুর উপজেলা হাসপাতালে নিয়ে আসলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
নাসিরনগর (ব্রাহ্মণবাড়িয়া) : ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাসিরনগরে বজ্রপাতে মোজাম্মেল হক (৩২) নামে একজন ইটভাটা শ্রমিকের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। এছাড়া বজ্রপাতের বিকট শব্দে আতঙ্কে আরও একজনের মৃত্যু হয়েছে। সোমবার দুপুরে উপজেলার গোয়ালনগর ও বুড়িশ্বর ইউনিয়নে পৃথক ঘটনা ঘটে।
গোয়ালনগর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আজহারুল হক ভূঁইয়া বলেন, সোমবার দুপুর ২টার দিকে উপজেলার গোয়ালনগর ইউনিয়নে এ ঘটনা ঘটে। নিহতের বাড়ি নাসিরনগর উপজেলার গোয়ালনগর ইউনিয়নের সোনাতলা গ্রামে। তিনি ওই গ্রামের মতি মিয়ার ছেলে মোজাম্মেল হক।
অপরদিকে উপজেলার বুড়িশ্বর ইউনিয়নে মেদির হাওড়ে কাজ করতে গিয়ে বজ্রপাতের শব্দে আতঙ্কিত হয়ে এক কৃষকের মৃত্যু হয়েছে বলে স্থানীয়দের দাবি। তার নাম অলি মিয়া। তিনি আশুরাইল গ্রামের নমিজ উদ্দিনের ছেলে।
বুড়িশ্বর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ইকবাল চৌধুরী বলেন, বজ্রপাতে আতঙ্কিত হয়ে এক শ্রমিক মারা গেছেন বলে আমি শুনেছি। তবে তার শরীরে কোনো আঘাতের চিহ্ন নেই।
ভাঙ্গুড়া (পাবনা) : মঙ্গলবার পাবনার ভাঙ্গুরায় বজ্রপাতে ধান কাটা অবস্থায় দুইজন শ্রমিক নিহত হয়েছেন। নিহত শ্রমিকেরা উপজেলার বেতুয়ান গ্রামের মাঠে ধান কাটছিলেন। বজ্রপাতে নিহত রমিজ (৩১) ও শাকিল (২২) পার্শ্ববর্তী চাটমোহর উপজেলার ছাইকোলা গ্রামের বাসিন্দা। ওই বজ্রপাতে আরও ১৩ জন আহত হয়েছেন।
বেতুয়ান গ্রামের ইউপি সদস্য আরজু খান মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, উপজেলার দিলপাশার ইউনিয়নের বাউঞ্জান এলাকার মাঠে বোরো ধান কাটছিল শ্রমিকেরা। বিকাল থেকেই বৃষ্টির সঙ্গে প্রচণ্ড বজ্রপাত শুরু হয়। এতে দুই শ্রমিক মারা যায় এবং ৫-৬ জন আহত হয়। আহতদের হাসপাতালে ভর্তি করে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।
শরীয়তপুর: শরীয়তপুরে গোসাইরহাটে টিউবওয়েল থেকে আনতে গিয়ে বজ্রপাতে একজনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। মঙ্গলবার বিকালে সাড়ে ৩টায় উপজেলার কোদালপুর ইউনিয়নের রসিদ সরদারপাড়া গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। নিহত মাঈনউদ্দিন মান (২৭) কোদালপুর ইউনিয়নের মহিউদ্দিনের ছেলে মাঈনউদ্দিন পেশায় একজন কৃষক।
বিষয়টি নিশ্চিত করে কোদালপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান এসএম মিজানুর রহমান সরদার বলেন, আমার ইউনিয়নের রসিদ সরদারপাড়া গ্রামের মহিউদ্দিনের ছেলে মাঈনউদ্দিন বিকালে বাড়িতে খাবার পানি আনতে গিয়ে বজ্রপাতে গুরুতর আহত হন। তাকে হাসপাতালে নেওয়া হলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।
দশমিনা ও দক্ষিণ (পটুয়াখালী): পটুয়াখালীর দশমিনায় ফসলের মাঠে গরু আনতে গিয়ে বজ্রপাতে মো. আবদুর রব হাওলাদার (৬০) নামে এক কৃষকের মৃত্যু হয়েছে। মঙ্গলবার বিকালে উপজেলার সদর ইউনিয়নের কাটাখালী গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। নিহত কৃষক ওই গ্রামের আবদুল আলী হাওলাদারের ছেলে। এ ঘটনায় একটি গরুরও মৃত্যু হয়েছে।
মদন (নেত্রকোনা): নেত্রকোনার মদনে বাড়ির সামনের বিলে মাছ ধরতে গিয়ে জয়নাল আবেদিন (৪০) নামে এক কৃষক বজ্রপাতে মারা গেছেন। তিনি উপজেলার বাগজান গ্রামের মৃত আব্দুর রহমানের ছেলে।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. শাহ আলম মিয়া জানান, মঙ্গলবার সকালে বজ্রপাতে জয়নাল আবেদিন নামে একজন লোক মারা গেছেন। এমন সংবাদ শুনে আমি তার গ্রামের বাড়ি যাই এবং পরিবারের খোঁজ খবর নেই। প্রশাসনের পক্ষ থেকে তার পরিবারের সদস্যদের ২০ হাজার টাকা আর্থিক অনুদান দেওয়া হয়েছে।
রাণীনগর (নওগাঁ) : নওগাঁর রাণীনগরে ফসলের ক্ষেত থেকে ভুট্টা তুলতে গিয়ে বজ্রপাতে জামিল প্রামাণিক (২২) নামে এক শ্রমিকের মৃত্যু হয়েছে। মঙ্গলবার বিকাল ৩টার দিকে উপজেলার ভবানীপুর মাঠে এ ঘটনাটি ঘটে। নিহত শ্রমিক জামিল প্রামাণিক উপজেলার গোনা ইউনিয়নের ভবানীপুর গ্রামের মৃত আজাদ প্রামাণিকের ছেলে।
ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে রাণীনগর থানার ওসি আবুল কালাম আজাদ বলেন, এ ঘটনায় থানায় একটি ইউডি মামলা দায়ের করা হয়েছে।
ধর্মপাশা (সুনামগঞ্জ): সুনামগঞ্জের ধর্মপাশা উপজেলার বড়ইয়া নদীতে ধানবোঝাই করা ইঞ্জিনচালিত নৌকা থেকে বজ্রপাতের বিকট শব্দে পানিতে পড়ে ওমর ফারুক (১৫) নামে এক কিশোরের মৃত্যু হয়েছে। মঙ্গলবার সকাল ৯টার দিকে বজ্রপাতের বিকট শব্দে ওমর ফারুক নৌকা থেকে পানিতে পড়ে নিখোঁজ হয়। পরে তার লাশ উদ্ধার করা হয়। ওমর ফারুক ওই গ্রামের আলীম উদ্দিনের ছেলে। সে উপজেলার জয়শ্রী উচ্চ বিদ্যালয়ের দশম শ্রেণির ছাত্র ছিল।
এ সময় নৌকায় থাকা কৃষক আবুল কাশেম (৫৫) ও তার ছেলে শাহীন মিয়া (১৫) এবং কৃষক কালাচান (৬৫) বজ্রপাতে আহত হন। হতাহতদের বাড়ি উপজেলার জয়শ্রী ইউনিয়নের বাদে হরিপুর গ্রামে।
ধর্মপাশা থানার ওসি মোহাম্মদ মিজানুর রহমান বলেন, ঘটনার খবর পাওয়ার পরপরই ঘটনাস্থলে পুলিশ পাঠানো হয়েছে। জেলেরা নদীতে জাল ফেলে খোঁজাখুঁজি করে ওমর ফারুকের লাশ উদ্ধার করেছেন।
চাঁদপুর টাইমস রির্পোট, ২৩ মে ২০২৩