Home / বিশেষ সংবাদ / বজ্রপাতে সতর্কতা ও করণীয়
electric

বজ্রপাতে সতর্কতা ও করণীয়

বৈশাখের সঙ্গে হাত ধরাধরি করে আসে কালবৈশাখী। কয়েক ঘণ্টার মধ্যে তৈরি হয় বলে ঝড়ের পূর্বাভাস সবসময় দেওয়া সম্ভব হয় না। আমাদের দেশে কালবৈশাখী ঝড়ে ও বজ্রপাতে অনেক মানুষ আহত হন এবং মারাও যান। কিছু সাধারণ সতর্কতা মেনে চললে এই ক্ষতি অনেকটাই কমানো সম্ভব।

কেন হয় : বাংলাদেশ, পশ্চিমবঙ্গ, বিহার, ওড়িশা, ঝাড়খন্ড এবং আসামের কিছু এলাকায় এ সময় কালবৈশাখী হয়। গ্রীষ্মকাল অর্থাৎ এপ্রিল-মে মাসে দিনের বেলা প্রখর সূর্যকিরণের তাপে এসব অঞ্চলের জলাশয় ও নদীর পানি বাষ্প হয়ে উপরে উঠে যায়। ফলে বাতাসে আর্দ্রতার পরিমাণ থাকে অত্যন্ত বেশি। এই গরম, আর্দ্র বাতাস সোজা উপরের দিকে উঠে গিয়ে শীতল হয়ে এক বিশেষ ধরনের কালো মেঘ তৈরি করে। এই সময়ে বঙ্গোপসাগরের উপরে উচ্চচাপ বলয় থাকে। আর্দ্র বায়ু শুষ্ক বায়ুর সংস্পর্শে এসে বজ্র- মেঘ তৈরি হয়ে ঝড়ের উৎপত্তি হয়।

ক্ষতিকর প্রভাব : কালবৈশাখী ও বজ্রপাত একটি প্রাকৃতিক আকস্মিক ঘটনা, তাই একে প্রতিরোধ করা সম্ভব নয়। ঝড়ের সময় কোনো ব্যক্তি বজ্রাঘাতপ্রাপ্ত হলে তার মৃত্যু ঠেকানো সম্ভব হয় না। এমনকি বজ্রপাতের স্থানের কাছাকাছি থাকা ব্যক্তিদেরও নানা ধরনের শারীরিক জটিলতা তৈরি হয়। তাদেরও সঠিক চিকিৎসার প্রয়োজন হয়। বজ্রপাতের স্থানের কাছাকাছি থাকা ব্যক্তিদের ইসিজি-এমআরআই রিপোর্ট পর্যবেক্ষণে দেখা গেছে তাদের হার্টের দুর্বলতা, উচ্চ রক্তচাপ এবং রক্তচাপ অস্বাভাবিকভাবে ওঠা-নামা করে। এ ছাড়া স্নায়ু দুর্বলতার পাশাপাশি তাদের শ্রবণশক্তি কমে যাওয়ার আশঙ্কা থাকে। তাই এমন ব্যক্তিদের যত দ্রুত সম্ভব চিকিৎসকের শরণাপন্ন হয়ে সঠিক চিকিৎসা নিতে হবে।

প্রাথমিক চিকিৎসা : কেউ বজ্রপাতে আক্রান্ত হলে তাকে খালি হাতে স্পর্শ করবেন না। শুকনো বাঁশ বা শুকনো কাঠ দিয়ে আক্রান্ত ব্যক্তিকে মুক্ত করুন। মুক্ত করার পর বা বাজ পড়ার পর ব্যক্তিকে কেউ কার্ডিয়াক ম্যাসাজ দিয়ে হার্টের মেশিন চালু করুন। বুকের বাম দিকে ম্যাসাজ করলে দু-তিন মিনিটের মধ্যে হার্ট চালু হয়ে আক্রান্ত ব্যক্তি বেঁচে উঠবেন। এ সময় অ্যাট্রোপিন, ডেক্সামেথাসন ইনজেকশন বেশ কার্যকর। এ ছাড়া গরম পানি, স্যুপ, দুধ, চা বা কফি পান করতে দিতে পারেন। জরুরি অক্সিজেনের ব্যবস্থা করতে হতে পারে। তাই আক্রান্ত ব্যক্তিকে যত দ্রুত সম্ভব হাসপাতালে নিতে হবে।

সতর্কতা : কালবৈশাখী ও বজ্রপাতের বিষয়ে জনসাধারণের মধ্যে সচেতনা গড়ে তুলতে সক্ষম হলে বজ্রপাতে মৃত্যু ও স্বাস্থ্য সমস্যা থেকে জনগণকে রক্ষা করা সম্ভব হবে। এজন্য করণীয় বিষয়গুলে হলো—

বজ্রপাত যেহেতু হঠাৎ করে তৈরি হয় তাই চৈত্র-বৈশাখ মাসে কালো মেঘ দেখা দেয়া মত্রই পাকা বাড়ির নিচে আশ্রয় নিতে হবে। ঘন ঘন বজ্রপাত হতে থাকলে কোনো অবস্থাতেই খোলা বা উঁচু জায়গায় না থাকাই ভালো। এ অবস্থায় সবচেয়ে ভালো হয়, যদি কোনো দালানের নিচে আশ্রয় নিতে পারেন।

মাঠে কাজ করা কৃষকদের নিরাপদ আশ্রয়ে চলে যেতে হবে। নিজেদের ও পরিবারের অন্য সদস্যদের পাশাপাশি গৃহপালিত পশুর নিরাপদ অবস্থান নিশ্চিত করতে হবে।

বৈশাখীঝড়ের সময় খোলা স্থানে বা গাছের নিচে আশ্রয় নেয়া থেকে বিরত থাকুন। আশেপাশে কোনো স্থাপনা না থাকলে খোলা স্থানে মাটিতে যতটা সম্ভব নিচু হয়ে গুটিশুটি মেরে বসে পড়ুন। কোনো অবস্থাতেই মাটিতে শোয়া যাবে না।

উঁচু গাছপালা বা বিদ্যুতের খুঁটিতে বজ্রপাতের আশঙ্কা বেশি থাকে। খোলা জায়গায় কোনো গাছ থাকলে তা থেকে অন্তত ৪ মিটার দূরে থাকতে হবে। এ ছাড়া ফাঁকা জায়গায় কোনো যাত্রীছাউনি বা বড় গাছ ইত্যাদিতে বজ্রপাত হওয়ার আশঙ্কা অত্যন্ত বেশি।

ঘরে থাকলে বজ্রপাতের সময় জানালা থেকে দূরে থাকতে হবে। জানালা বন্ধ রাখতে হবে। বজ্রপাত ও ঝড়ের সময় বাড়ির ধাতব কল, সিঁড়ির রেলিং, পাইপ ইত্যাদি স্পর্শ করা যাবে না। এমনকি ল্যান্ড লাইন টেলিফোনও স্পর্শ না করার পরামর্শ দেওয়া হয়।

বজ্রপাতের সময় রাস্তায় গাড়িতে থাকলে যত দ্রুত সম্ভব নিরাপদ আশ্রয়ে ফেরার চেষ্টা করতে হবে। প্রচণ্ড বজ্রপাত ও বৃষ্টি হলে গাড়ি কোনো গাড়িবারান্দা বা পাকা ছাউনির নিচে রাখতে হবে। এ সময় গাড়ির কাচে হাত দেওয়া বিপজ্জনক হতে পারে।

বজ্রপাতের সময় চামড়ার ভেজা জুতা বা খালি পায়ে থাকা খুবই বিপজ্জনক। যদি একান্ত বেরোতেই হয় তাহলে পা ঢাকা জুতা পরে বের হতে হবে। রাবারের গামবুট এ ক্ষেত্রে সব থেকে ভালো কাজ করবে।

তাল, নারিকেল ও সুপারি গাছের মতো উঁচু গাছ বজ্রপাত থেকে মানুষকে রক্ষা করে। তাই রাস্তার পাশে বা খোলা জায়গায় বেশি করে এসব গাছ রোপণ করুন।

লেখক: মেডিসিন ও গ্যাস্ট্রোএন্টারোলজিস্ট

চাঁদপুর টাইমস

৩০ এপ্রিল ২০২৩
এজি