Home / চাঁদপুর / বঙ্গবাজারের পর নিউ মার্কেটেও পুড়লো মামুনের দোকান
বঙ্গবাজারের
বঙ্গবাজারের পর নিউমার্কেটের দোকান হারিয়ে বাকরুদ্ধ ব্যবসায়ী মামুন। ছবি: আতাউর রহমান রাইহান

বঙ্গবাজারের পর নিউ মার্কেটেও পুড়লো মামুনের দোকান

বৈশাখের আগুনঝরা গরমের মধ্যে নিউ মার্কেট লাগোয়া ফুটওভারব্রিজে বসে কাঁদছিলেন মামুন হোসেন। বয়স তার পয়তাল্লিশের মতো হবে। নিউ সুপার মার্কেটে তার দোকানটি পুড়ে ছাই হয়ে গেছে। বঙ্গবাজারে দুটি দোকান পুড়ে যাওয়ার ধকল এখনও কাটিয়ে উঠতে পারেননি তিনি। এরইমধ্যে নতুন বিপদ এসে পড়েছে তার ওপর।

শনিবার দুপুরে ফুটওভারব্রিজের ওপর দাঁড়িয়ে তার সঙ্গে কথা হয়। কথা বলার সময় আগুনের তাপ এসে গায়ে লাগছিল। সেই তাপের চেয়েও বুকে তিনি হতাশার ভয়ঙ্কর দহন চেপে রেখেছেন।

তিনি বলেন, ‘বঙ্গবাজারের দুটি দোকান পুড়ে যাওয়ার পর পুরোপুরি ভেঙে পড়েছিলাম। তখন দুই খালাতো ভাই এসে পাশে দাঁড়ান। তারা আমাকে এখানে একটি দোকানের ব্যবস্থা করে দেন। কিন্তু আজ তা-ও পুড়ে গেল।’

এক ছেলে ও এক মেয়ের বাবা মামুন হোসেন। পরিবার নিয়ে এক সময় ঢাকায় থাকতেন তিনি। কিন্তু করোনা মহামারি ছড়িয়ে পড়লে ব্যবসায় মন্দা দেখা দেয়। তখন পরিবারেকে গ্রামের বাড়ি চাঁদপুরে পাঠিয়ে দেন।

করোনা কেটে গেলে বঙ্গবাজারে ভালোই ব্যবসা জমে উঠেছিল তার। কিন্তু গেল ৪ এপ্রিল ভয়াবহ আগুনে তার সেই ব্যবসা প্রতিষ্ঠান পুড়ে যায়। একেবারে পথে বসে পড়ার অবস্থা তৈরি হয়েছিল তার। এরপর নিউ সুপার মার্কেটে দোকান দিয়ে তিনি আশার বীজ বুনছিলেন।

মামুন হোসেন বলেন, ‘আমি এখন রাস্তার ফকির ছাড়া আর কিছু না।’

এ সময়ে কথা হয় মাহদি আহমেদ শাওন (২৪) নামে আরেক যুবকের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘আমার বড় ভাইয়ের দুটো দোকান ছিল, যার মধ্যে এখন একটিও নেই। তার আরও একটি দোকান দেয়ার কথা ছিল।’ দোকানগুলোতে কোটি টাকার মাল ছিল বলে তিনি জানিয়েছেন।

ঋণ করে দোকানে মাল উঠিয়েছিলেন জানিয়ে শাওন বলেন, ‘গেল তিন বছর ধরে নিউ সুপার মার্কেটে ভাইয়ের দোকানে কাজ করছি।’ সকালে আগুন লাগার খবর শুনে কামরাঙ্গীরচর থেকে তিনি আসেন নিউ মার্কেটে। এরপর থেকে বুকে শোকের পাথর বেঁধে দমকলকর্মীদের আগুন নেভানো দেখছেন।

‘ভাইয়ের দোকানে চাকরি করছি। আশা ছিল, আমি নিজেও একটা দোকান দেব। কিন্তু এক আগুন সব শেষ করে দিয়েছে’, বলেন শাওন।

শনিবার (১৫ এপ্রিল) ভোর ৫টা ৪০ মিনিটে ভয়াবহ আগুন লাগে নিউ মার্কেটের পাশের নিউ সুপার মার্কেটে। প্রথমে ফায়ার সার্ভিসের ১০টি ইউনিট আগুন নিয়ন্ত্রণে কাজ শুরু করে। পরবর্তীতে আগুন নিয়ন্ত্রণে একে একে ফায়ার সার্ভিসের ৩০টি ইউনিট যুক্ত হয়।

এছাড়া আগুন নিয়ন্ত্রণে আরও কাজ করছে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী, নৌবাহিনী ও বিমানবাহিনী। ঘটনাস্থলে ফায়ার সার্ভিসকে সহায়তা দিচ্ছে র‍্যাব।

সাড়ে তিন ঘণ্টা পর আগুন নিয়ন্ত্রণে আসে বলে জানান ফায়ার সার্ভিসের মহাপরিচালক (ডিজি) ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. মাইন উদ্দিন। তিনি বলেন, সকাল ৯টা ১০ মিনিটের দিকে আগুন নিয়ন্ত্রণে আসে। তবে পুরোপুরি নেভাতে ফায়ার ফাইটাররা চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন।

টাইমস ডেস্ক/ ১৫ এপ্রিল ২০২৩