ফিচার

বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ড: মোশতাকের বর্ণনায় ‘নিছক দুর্ঘটনা’

তাঁদের এমনভাবে হত্যা করা হয়েছে যা থেকে স্পষ্ট যে পুরো পরিবারকে নিশ্চিহ্ন করতেই এ হত্যার পরিকল্পনা করা হয়েছিল।

১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট সেনাবাহিনীর বিপথগামী কিছু সদস্য বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যা করার পর একে ‘নিছক দুর্ঘটনা’ বলেই প্রচার করেছিলেন নতুন রাষ্ট্রপতি খন্দকার মোশতাক আহমদ। এ তথ্য দিয়েছেন তখনকার পররাষ্ট্র সচিব ফখরুদ্দিন আহমেদ তাঁর আত্মজীবনীমূলক গ্রন্থ ‘ক্রিটিক্যাল টাইমস : মেমোয়ারস অব অ্যা সাউথ এশিয়ান ডিপ্লোমেট’-এ। তিনি লিখেছেন, ‘একটি মত মোশতাক বর্ণনা করতে অভ্যস্ত ছিলেন।

হত্যাকে দুর্ঘটনা হিসেবে উল্লেখ করে তিনি বিষয়টির যথার্থতা দেওয়ার চেষ্টা করে বলতেন, তারা (বিপথগামী সেনারা) বঙ্গবন্ধুকে তুলে নিতে চেয়েছিল এবং বিচারের মুখোমুখি করার আগে মুক্তিপণ দাবি করতে চেয়েছিল। কিন্তু তারা দাবি করছে, তাঁর (বঙ্গবন্ধুর) দেহরক্ষীদের কাছ থেকে প্রবল সশস্ত্র প্রতিরোধ পেয়ে তারাও পাল্টা গুলি চালাতে বাধ্য হয় এবং এ প্রক্রিয়ায়ই বঙ্গবন্ধু ও তাঁর পরিবারের সদস্যরা নিহত হন।’

ফখরুদ্দিন আহমেদ লিখেছেন, ‘যে আলোকচিত্রী পরে ছবি তুলেছিলেন, তিনি আমাকে বলেছেন—তাঁদের এমনভাবে হত্যা করা হয়েছে যা থেকে স্পষ্ট যে পুরো পরিবারকে নিশ্চিহ্ন করতেই এ হত্যার পরিকল্পনা করা হয়েছিল। ফারুক ও রশীদের প্রত্যক্ষ নিয়ন্ত্রণে থাকা সৈনিকরা অভ্যুত্থান ঘটিয়েছিল। তবে সৈনিকদের একেবারে শেষ মুহৃর্তেই বিষয়টি জানানো হয়েছিল।’

ফখরুদ্দিন আহমেদ লিখেছেন, বিভিন্ন স্থানে হামলার লক্ষ্যে সৈনিকদের নির্দেশ দেওয়ার প্রাক্কালে ফারুক সেনা সমাবেশ করেন। সেখানে তিনি বাংলাদেশে ইসলাম রক্ষার আহ্বান জানান। তিনি বলেন, এখনই যদি তাঁরা হামলা না করেন তাহলে এ দেশে ‘হিন্দুদের শাসন’ আসবে। তিনি ইসলামের নামে সৈনিকদের এ ‘দুর্যোগ’ ঠেকানোর আহ্বান জানান। সৈনিকরা হাত তুলে হামলা চালাতে সম্মতি জানায়।

ফখরুদ্দিন আহমেদ আরো লিখেছেন, ‘কোনো সন্দেহ নেই যে সেনাদের মনোভাব ও মেজাজ সম্পর্কে ভালো গোয়েন্দা কার্যক্রম চালানো হয়েছিল। ১৯৭৪ সালের দুর্ভিক্ষ ও একদলীয় শাসনব্যবস্থা প্রবর্তনের পর ভারতবিরোধী জনমত ছিল স্পষ্ট। ভুট্টোর সফরের পর পাকিস্তানপন্থীরা উদ্বেগজনকভাবে আত্মপ্রকাশ করতে শুরু করে। পাকিস্তানের সামরিক সম্প্রদায় ১৯৭১ সালে তাদের লজ্জাজনক পরাজয়ের প্রতিশোধ নিতে চেয়েছিল।’

পাকিস্তানিদের প্রত্যাবাসন ও সম্পদের হিস্যা দাবি বাদ : সাবেক পররাষ্ট্র সচিব বইয়ে উল্লেখ করেন, বাংলাদেশে আটকে পড়া পাকিস্তানিদের নিজ দেশে প্রত্যাবাসন ও অবিভাজিত সম্পদের ন্যায্য হিস্যার দাবিতে বঙ্গবন্ধু সরকার যে জোরালো অবস্থান নিয়েছিল তা থেকে পুরোপুরি সরে আসে মোশতাক সরকার। রাষ্ট্রপতি মোশতাকের মুখ্য সচিব মাহবুব আলম চাষী পররাষ্ট্র সচিবের সঙ্গে প্রথম বৈঠকেই জানিয়ে দেন, পাকিস্তানিদের প্রত্যাবাসন ও সম্পদের দাবি এখন আর গুরুত্বপূর্ণ ইস্যু নয়।

বাংলাদেশ সুবিধাজনক অবস্থায় আছে উল্লেখ করে ফখরুদ্দিন আহমেদ পাকিস্তানের কাছে ওই দাবিগুলো তোলার অনুরোধ জানালে মাহবুব আলম চাষী পাকিস্তানের সঙ্গে স্বাভাবিক সম্পর্ক সৃষ্টিতে দেরির জন্য উল্টো তাঁকে দোষারোপ করেন। ফখরুদ্দিন আহমেদকে শেখ মুজিব নষ্ট করে ফেলেছেন বলেও মন্তব্য করেছিলেন মোশতাকের ওই মুখ্য সচিব।

নিউজ ডেক্স :আফডেট , ৩ ডিসেম্বর ২০১৬ , শনিবার , ১০ :৫৭ পি.এম

Share