Home / জাতীয় / যে মূলমন্ত্রে জননেত্রী হয়ে ওঠেন বঙ্গবন্ধুকন্যা
hasina
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা/ ফাইল ছবি

যে মূলমন্ত্রে জননেত্রী হয়ে ওঠেন বঙ্গবন্ধুকন্যা

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে হত্যার ছয় বছর পর ১৯৮১ সালে দেশে ফিরে আসেন শেখ হাসিনা। দল গুছিয়ে ক্ষমতায় আসতে অপেক্ষা করতে হয় আরও ১৫ বছর। ততদিনে দক্ষ রাজনীতিবিদ হিসেবে নিজেকে গড়ে তুলেছেন তিনি। ১৯৮১ সালে ঐক্যের ডাক দিয়ে দেশে প্রবেশ করেছিলেন বঙ্গবন্ধুকন্যা। এরপর কেটে গেছে ৪০ বছর। কোন মন্ত্রবলে তিনি হয়ে উঠলেন জননেত্রী? ইতিহাসের পাতা বলে, ১৯৮১ সালে দেশের মাটিতে পা রেখে ‘আমি নেতা নই’ তার এই বাক্য উচ্চারণের মাঝেই সকল শক্তি নিহিত, যিনি কিনা এতদিন পরে ২০২১ সালে এসেও বলতে পারেন— ‘আমি শুধু শাসক নই, বাংলাদেশের মানুষের সেবক।’

সাংবাদিক, সুশাল সমাজের প্রতিনিধিরা বলছেন, একজন আদর্শ নেতা অন্যের চাহিদা এবং প্রয়োজন বুঝে নেওয়ার ক্ষমতা রাখেন। যিনি নেতা তিনি নিজেকে নেতা ঘোষণা করতে পারেন না। দেশরত্ন শেখ হাসিনা সেই মন্ত্র ধারণ করতে পেরেছেন।

১৯৮১ সালের ১৭ মে বঙ্গবন্ধুকন্যা বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ছয় বছর পর দেশে ফিরে সাংগঠনিক ঐক্যের ডাক দিয়েছিলেন। বলেছিলেন, ‘আসুন, আবারও আমরা এক হই।’ স্বদেশ প্রত্যাবর্তনের পর শেখ হাসিনা এ দিন সন্ধ্যায় আওয়ামী লীগ আয়োজিত গণসংবর্ধনার সমাবেশে কান্নাজড়িত কণ্ঠে জনগণের কাছে তার পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের হত্যার বিচার দাবি করেন। তিনি বলেন, ‘এই ঢাকা শহরে আমার কেউ নাই।’ বাংলার দুঃখী মানুষের জন্য পিতার জীবনদানের কথা স্মরণ করে তিনি বলেন, ‘এই সংগ্রামে আমিও জীবনদান করতে প্রস্তুত।’

শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমি নেতা নই। বঙ্গবন্ধুর আদর্শ প্রতিষ্ঠার একজন কর্মী। বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলা গড়ার স্বপ্ন বাস্তবায়িত করার জন্য আপনাদের নিয়ে আমি নিরন্তর সংগ্রাম চালিয়ে যাবো।’

৪০ বছর পর ২০২১ সালের ২৯ মে বিশ্বব্যাপী শান্তি রক্ষায় জাতিসংঘের বিভিন্ন মিশনে দায়িত্বরত বাংলাদেশিদের উদ্দেশে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আবারও দৃপ্ত কণ্ঠে বলেন, ‘আমি শুধু প্রধানমন্ত্রী নই, জাতির পিতার মেয়ে। তাই, আমার ওপর আপনাদের অধিকার আছে। তাই যে কোনও প্রশ্ন করতে পারেন।’ ‘জাতিসংঘ শান্তিরক্ষী দিবস’ উপলক্ষে সশস্ত্র বাহিনীর এক অনুষ্ঠানে গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সে যুক্ত হয়ে তিনি এ কথা বলেন।

গত ৬ সেপ্টেম্বর নৌবাহিনী ও বিমান বাহিনীর নির্বাচনি পর্ষদের সদস্যদের উদ্দেশে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের মেয়ে, আমি শুধু শাসক নই, বাংলাদেশের মানুষের সেবক। জনগণের সেবা ও কল্যাণ করাটাকেই আমি সবচেয়ে বড় কাজ বলে মনে করি।’

এই যে ‘আমি নেতা নই’, সেটা বলতে পারার পাশাপাশি ধারণ করতে পারার কারণেই শেখ হাসিনা অন্য সবার থেকে আলাদা উল্লেখ করে সাংবাদিক জ্যেষ্ঠ আবেদ খান বলেন, ‘শেখ হাসিনা তার স্বমহিমায় উদ্ভাসিত। ১৯৮১ সালে যখন দেশে ফিরে আসেন, তখন তিনি যে মানসিক বিপর্যস্ততার মধ্যে ছিলেন, সেই সময় নেওয়া শপথ তার চালিকাশক্তি হবে, এটাই স্বাভাবিক। তিনি যে কথাগুলো সেদিন বলেছিলেন, তার মধ্যে অন্যতম হলো— ‘আমি নেতা নই’ বলতে পারা। তাতে তিনি নেতৃত্বের সুদৃঢ়তা অর্জন করেছেন। জননেত্রী শেখ হাসিনার যে কাজ, সেটার বীজ রোপণ করেছিলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। শেখ হাসিনা নিজের দক্ষতা দিয়ে সেই আলোকে এগিয়ে নিয়ে গেছেন এবং তার ফল আমরা পাচ্ছি। তার ক্ষেত্রে এক কথায় বলা যায়— বৃক্ষ তোমার নাম কী, ফলে পরিচয়।’’

‘বাংলাদেশের রাজনীতিতে শেখ হাসিনার আগমন ছিল একটি নতুন যুগের সূচনা’— উল্লেখ করে দৈনিক আমাদের অর্থনীতির সম্পাদক মাসুদা ভাট্টি বলেন, ‘৭৫-পরবর্তীকালে দেশ ও দেশের রাজনীতির যে উল্টোযাত্রা শুরু হয়েছিল, তা থেকে উত্তরণে এবং দেশের সামরিকায়ন প্রক্রিয়া থেকে গণতান্ত্রিক রাজনৈতিকায়নে শেখ হাসিনার ভূমিকাকে আমরা বাংলাদেশকে দ্বিতীবার দেশ স্বাধীনের সঙ্গে তুলনা করতে পারি।’

কেবল বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের কন্যা হিসেবে নয়, তিনি একজন প্রকৃত বিশ্বনেতার মতোই বাংলাদেশকে পুনর্গঠনে নেতৃত্ব দিয়েছেন। তিনি বারবার বলেছেন যে, তিনি নেতা হতে আসেননি। তিনি নিজের ভাগ্য গড়তে আসেননি। এগুলো যে কেবল কথার কথা নয়, তার প্রমাণ পাওয়া যায় তার জীবনাচরণ এবং বিভিন্ন সময়ে প্রকাশ হওয়া তার প্রতি জনগণের ভালোবাসা থেকে। কেবলমাত্র শাসক হলে তিনি গণমানুষের এত ভালোবাসা পেতেন না।

তার সমর্থকগোষ্ঠী তাকে ভালোবেসে যথার্থই দেশরত্ন খেতাব দিয়েছে। তিনি সত্যিই দেশরত্ন। কারণ, বাংলাদেশ তার মতো রত্নকে না পেলে হয়তো নতুন করে পরাধীন হতো। শেখ হাসিনা শুধু চিন্তাই করেন তা নয়, চিন্তাকে বাস্তবে রূপ দেন। আজকের বাংলাদেশের দিকে তাকালে সেটাই প্রত্যক্ষ করা যায় সর্বত্র।