এসময়ে আলোচিত এক আলেম মাওলানা আবদুল হাই মুহাম্মদ সাইফুল্লাহ। পল্লবীর মসজিদুল জুমা কমপ্লেক্সের খতিব। জুমার বয়ানে তিনি কথা বলেন সমসমায়িক বিষয় নিয়ে।
সম্প্রতি তিনি এক বয়ানে বর্তমান মাহফিলগুলোতে এক বক্তা অপর বক্তার সমালোচনা প্রসঙ্গে কথা বলেন। এতে তিনি বলেন, আমার ওস্তাদ ড. আব্দুল্লাহ মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর, উনার কতগুলো কথা ছিলো, এমন ভাবে বলতেন, চোখ দিয়ে পানি পড়তো। স্যারকে দেখতাম হাতে সব সময় রুমাল, চোখগুলো মুছতেন আর কথা বলতেন। বলতেন সাইফুল্লাহ কত জানাযায় তো আমাকে নিয়ে গেলো। কত জানাযায় গেলাম।
আমি তো এখানকার মসজিদের খতিব। আমাকে জানাযায় নিয়ে যায়, আমিও কবর দেই, দাফন করি। আর আমিও হাদিসটা জানি, হাদিস কম জানি না। হযরত ওসমান (রা.) কবরের পাশে গেলে কান্না করতেন।
আমিতো হাদিস জানি, পড়েছি কিন্তু আমার তো ওসমান (রা.) এর মতো অনুভূতি হয় না। কারণ কী? কারণ কবর আমি ভাবছি অন্যদের জন্য। আমার জন্যও যে কবর হবে, আমাকেও যে সেখানে যেতে হবে এই অনুভূতি আমার মধ্যে নাই। আমি হুজুর, আমি হাদিস জানি, ওয়াজ করি, কবরের ওয়াজ অন্যদের জন্য। কিন্তু ওসমান (রা.) নিজের কথা ভেবে নিছেন। রাসুল (সা.) এর কাছে সাহাবায়ে কেরাম বসে আছেন। আসার পরে ডাক দিয়েছেন আবদুর রহমান ওঠো, তুমি কান্না করছো কেন? আল্লার নবী (সা.) একটু আগে ওয়াজ করে গেছেন। কিয়ামতের ভয়াবহতা নিয়ে। ওই দিনে আমলনামা যদি ডান হাতে না যায় তার জন্য বির্পযয় হবে। উনি একবারও ভাবেন নাই, যে আমার সাথে তো ৫০/৬০জন লোক আসছে ওদের কী হবে। ওরা পাবে কিনা। কার আমলনামা কী হবে।
আমার অমুক দোস্তের অবস্থা কী, তমুক বন্ধুর অবস্থা তো খারাপ। আবদুর রহমান এতো বড় সাহাবী তিনি নিজের জীবনের কথা ভাবতে শুরু করেছেন। আমরা যা শুনি, সব অন্যের জন্য ভাবি। যে হ্যা..অমুকরা তমুকরা, জালেমরা অমুক যাবে, তমুকরা মুশরিক হয়ে যাবে। কিন্তু এই ওয়াজ যে আমার জীবনে সবার আগে। এই জন্য স্যার এটাকে বলতেন অন্তরের ক্যানসার। ঈমানদারদের অন্তরের ক্যানসার যে নিজেকে নিয়ে আমাদের ভাবার কোন সময় নাই। আমরা খালি দুনিয়ার অন্যদের নিয়ে ভাবছি। অন্যদের নিয়ে বক্তব্য দিচ্ছি, গালাগালি করছি, ছোট করা, ক্রিটিসাইজ করা, কেমনে কারে খোচা দিয়া যত দূরে ঠেলা যাবে, তাদের অপমান করা যাবে এটাই এখন আমাদের সকলের তবিয়ত হয়ে গেছে। আমিতো আমার ভাষায় একটা কথা বলি, অনেক জায়গায় কথাটা বলি যে আপনারা হুজুরদের জন্য দোয়া করেন। আগে হুজুরদের থেকে দোয়া নিতেন, এখন হুজুরদের থেকে দোয়া নেয়ার আর কোন পরিবেশ নাই। এখন হুজুরদের জন্য একটু দোয়া করেন। হে আল্লাহ তুমি হুজুরদের হেদায়েত করে দাও।
সাহাবীদের জীবনে কোনদিন এমন একটা ঘটনা পাবো? যে তারা এরকম কথা বলেছেন? হেদায়েতের ধরণ ও বক্তব্য এমন ছিলো? তবে হ্যাঁ, যেগুলো আছে যেগুলো দাজ্জাল, দাজ্জাল মার্কা আচরণ করে, যারা মানুষের মাঝে ভুল ম্যাসেজ দিচ্ছে, রাসুলের (সা.) হাদিস বিকৃত করছে, সুন্নাতকে ভুল ভাবে উপস্থাপন করছে। তাদেরকে পরিচয় করতে হবে জাতিকে হেফাজত করার স্বার্থে। তাদেরকে ব্যক্তিগত ভাবে দাওয়াত দিলে না শুনলে জাতিকে সর্তক করতে হবে। এটা গীবত হবে না। কিন্তু কোন কথা নাই বার্তা নাই। আলেমদের রেশারেশি, ছোট ছোট দলবাজি, ছোট ছোট পক্ষ বিপক্ষ নিয়ে ইর্ষান্বিত হয়ে এক আলেম আরেক আলেমের বিপক্ষে কথা বলছে। এক আলেম আরেক আলেমের বিরুদ্বে ফতোয়া দিচ্ছে।
ভিডিওতে দেখুন-
বার্তা কক্ষ, ২৬ জানুয়ারি ২০২০