ব্যস্ত জীবনেও মানুষকে সময় বের করে বেশকিছু সামাজিক অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করতে হয়। এড়িয়ে যাওয়ার সুযোগ থাকে না। সমাজবদ্ধ মানুষ হিসাবে এটি আমাদের কর্তব্যের মধ্যে পড়ে। সেই কর্তব্যবোধ থেকে সামাজিক অনুষ্ঠানগুলোতে আমরা বিভিন্ন উপহারও দিয়ে থাকি।
এসব উপহারের অধিকাংশই হয়ে থাকে নিত্যব্যবহার্য জিনিস। এ প্রবণতা থেকে আমাদের বের হওয়া প্রয়োজন। সামাজিক অনুষ্ঠানগুলোতে উপহার হিসাবে বই দেওয়ার প্রচলন হওয়া প্রয়োজন। বইয়ের গুরুত্ব শিক্ষিত সব মানুষ একবাক্যে স্বীকার করবেন। বই অবসর সময়ে নির্মল বিনোদনের চমৎকার উৎস।
আমরা পরিবারে শিশুদের এতে উৎসাহিত করলে তাদের মধ্যে বই পড়ার প্রবণতা সৃষ্টি হবে। বাড়বে আগ্রহ। এ আগ্রহ বাড়াতে বাড়িতে ছোট পরিসরে বইয়ের একটা আলমারি রাখা যায়। দেশে বছরে কয়েকটা বইমেলা হয়।
এসব মেলায় পরিবারের সবাই উপস্থিত হয়ে প্রত্যেকের পছন্দমতো একটা করে বই কিনে বাসার আলমারিতে এনে রাখলে কয়েক বছর পরে দেখা যাবে আলমারি পূর্ণ হয়ে গেছে। এসব বই পড়ে অবসর সময়কে প্রাণবন্ত করা যায়। বিস্তৃত করা যায় জ্ঞানের পরিধি।
স্কুল-কলেজে নানা প্রতিযোগিতামূলক অনুষ্ঠান হয়ে থাকে; বিশেষ করে জাতীয় দিবসগুলোয় হয়ে থাকে বার্ষিক ক্রীড়া ও সাংস্কৃতিক প্রতিযোগিতা। এ উপলক্ষ্যে বিজয়ীদের মাঝে পুরস্কারও দিয়ে থাকে কর্তৃপক্ষ। প্রাথমিক বিদ্যালয়ে তো অনুষ্ঠান আয়োজনের জন্য বিশেষ বরাদ্দও থাকে। এ খাত থেকে পুরস্কারের ব্যবস্থা করা যেতে পারে।
পুরস্কার হিসাবে বয়স উপযোগী বই-যেমন শিশুদের জন্য শিশুতোষ বই,কিশোরদের জন্য কিশোর উপযোগী বই, তরুণদের জন্য বঙ্গবন্ধু ও মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক বই উপহার হিসাবে দিলে বইটা পড়ার পাশাপাশি দীর্ঘদিন বাসায় থাকবে। কোনো একসময় বইটার দিকে চোখ পড়লে পুরোনো দিনের স্মৃতি রোমন্থন করা যাবে। একটা ভালোলাগা ভেতরে কাজ করবে। সন্তান বা ভবিষ্যৎ প্রজন্মের কাছে পুরস্কার জেতার কথা বলা যাবে,যা তাদের অনুপ্রাণিত করবে।
বর্তমানে সব প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পাঠাগার রয়েছে, যেখানে বিভিন্ন ধরনের বই সংরক্ষণের জন্য কর্তৃপক্ষ ও শিক্ষকরা কাজ করছেন। শিক্ষার্থীদের পাঠাগার ব্যবহারের জন্য কোনো কর্মঘণ্টা যদিও রুটিনে নেই, কিন্তু শিক্ষকরা মাঝেমাঝে শিশুদের শ্রেণি কার্যক্রমে সপ্তাহে একদিন শিশুদের বই পাঠের আয়োজন করতে পারেন এবং অনেক স্কুল তা করেও থাকে।
এছাড়াও জাতীয় দিবসগুলোতে উপজেলাভিত্তিক মুক্তিযুদ্ধ ও বঙ্গবন্ধু সম্পর্কিত বইপাঠের প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হলে মুক্তিযুদ্ধ ও বঙ্গবন্ধু সম্পর্কে শিক্ষার্থীরা আরও জানতে পারবে এবং তাদের দেশপ্রেম বাড়বে। সবার বই কেনা ও বইপাঠে আগ্রহ বাড়লে তা চারপাশে জ্ঞানের সৌরভ ছড়াবে।
বিভাস গুহ : শিক্ষক ও প্রাবন্ধিক,
১৮ নভেম্বর ২০২২
এজি