করোনাভাইরাসের এ দুর্যোগকালীন সময়ে অন্তত ১৫-২০ দিনের জন্য ফ্রিতে ফোন কল ও ইন্টারনেট দিতে দেশের মোবাইল অপারেটরগুলোর প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন সুপ্রিমকোর্টের আইনজীবী ব্যারিস্টার সৈয়দ সায়েদুল হক সুমন।
সোমবার ৬ এপ্রিল বিকেলে ফেসবুক লাইভে এসে করোনার এ দুর্যোগে মোবাইল অপারেটরগুলোর ভূমিকা নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেন তিনি। দুর্যোগকালীন এ সময়ে প্রতিষ্ঠানগুলোকে দেশের সাধারণ মানুষের প্রতি আরও সদয় হওয়ার আহ্বান জানান এ আইনজীবী।
ব্যারিস্টার সুমন বলেন, ‘আমি এমন সময় লাইভে এসেছি, যখন সারা বাংলাদেশের অনেকেই মৃত্যুর মুখোমুখি। কিন্তু একটা কথা বলতে চাই, আমরা সবাই চার দেয়ালে বাসার ভেতরে আছি। সরকার থেকে বলা হচ্ছে, বাড়ির ভেতরে থাকেন। সবাই যে যার জায়গা থেকে চেষ্টা করে যাচ্ছেন, মহাজাগতিক দুর্যোগের মোকাবিলায়। কিন্তু এ ক্রাইসিস মুহূর্তে যারা ব্যবসা চিন্তা করেন, যারা লাভের চিন্তা করে তারা আর যাই হোক বাংলাদেশের মানুষের বন্ধু হতে পারে না।’
তিনি বলেন, ‘ব্যবসা করবেন, এমন জায়গায় যদি আপনারা মানুষের বন্ধুই হতে না পারেন। তাহলে আপনারা কেমন ব্যবসা করবেন। কিসের ভিত্তিতে লাভের টাকা নেবেন। ফোন কোম্পানিগুলোর দৃষ্টি আকর্ষণ করছি। দেখেন, গ্রামীণফোন, এয়ারটেল, রবি, আমাদের টেলিটক টেলিটক আছে। এখন কোনো কাজ নেই, কিছু করার নেই। বাচ্চারা ঘ্যান ঘ্যান করলে আমরা ইন্টারনেট ছেড়ে দেই, আমরা একটা কার্টুন দেখাতে চাই। নিজেরা সবসময় অনলাইনে থাকতে চাই। দেশের খবর নিতে চাই।’
তিনি বলেন, ‘অনেকের কাছে টিভি পৌঁছায় না, ফেসবুক বা সোশ্যাল মিডিয়া যেভাবে পৌঁছায়। আমরা এখন পুরাটাই মোবাইলভিত্তিক ইন্টারনেট ব্যবহারকারী হয়ে গেছি। এই সময় কী আপনারা যারা ফোন কোম্পানি আছে, তারা কি একটু ফ্রি করে দিতে পারেন না আমাদেরকে। আপনারা যারা এই সময়ে কল রেট, এমবিটা ফ্রি করে দিতে পারেন না।’
সুমন বলেন, ‘এই ১৫-২০ দিন আপদকালীন এই সময়েও যদি আপনারা মানুষের পাশে না দাঁড়ান। বিশেষ করে গ্রামীণফোনের কথা বলি, আপনাদের কাছে সরকার ১২ হাজার কোটি টাকা পায়। মাত্র এক হাজার কোটি টাকা দিতে কত নাটক করেছেন। এখন কী আপনারা কাজটা করতে পারেন না এই দুঃসময়ে, মানুষের পাশে দাঁড়াতে পারেন না।’
তিনি গ্রামীণের প্রতি প্রশ্ন তুলে বলেন, ‘এই কোম্পানি তো নোবেল পাওয়া গ্রামীণ ব্যাংকেরই সাবসিডিয়ারি। আপনারা কী পারেন না এই কাজটি করতে। আপনারাতো চ্যারিটি টাকা দিয়েই কোম্পানি গঠন করছেন। চ্যারিটি টাকা নিয়ে যারা বড় বড় কোম্পানি করেছেন। তারা কি চ্যারিটির মূল্যায়নটা বোঝেন না? যারা চ্যারিটি চালান তারা কি এটা বোঝেন না?’
এ আইনজীবী বলেন, ‘যাদের ফোন কোম্পানি আছে, আমি তাদের অনুরোধ করব, সরকারকে অনুরোধ করব ট্যাক্স কমিয়ে দিতে। আমাদের তো আনন্দ করা ও বেঁচে থাকার আর কোনো সিস্টেম নেই। বিদেশে যখন এক বেডরুমে একজন থাকেন, আমাদের সেখানে তিনজনকে একটি বেডরুম শেয়ার করতে করে থাকতে হয়। আমরা সারাক্ষণ মৃত্যুর ভয়ে নিয়ে বেঁচে আছি। মোবাইলেও রিচার্জ করা যাচ্ছে না সব দোকানপাট বন্ধ। বিকাশের দোকান খুললে আপনারা পুলিশ দিয়ে পেটাচ্ছেন। এই মুহূর্তে মানুষ ফোনে টাকা ঢুকাবে কী করে?’
তিনি বলেন, ‘টাকা থাকলেও এই মুহূর্তে একজন ভদ্রলোক বা ভদ্রমহিলা টাকা ঢুকাতে পারছে না। এই সময়টা অন্তত আল্লাহর ওয়াস্তে আমাদের মাফ করবেন। আপনারা তো আমাদের থেকে অনেক ভালো জানেন, ব্যবসা কীভাবে করা লাগে। ম্যাসেজ দিয়ে আপনারা তো কত দিক থেকে টাকা কেটে নেন।
এটার সব বিচার তো আপনাদের বিরুদ্ধে আমরা দিতে পারছি না। পৃথিবীতে আপনাদের চেয়ে ভালো ব্যবসা তো আর কেউ জানে না।’
সুমন বলেন, ‘ব্যবসা করবেন অন্তত আপদকালীন সময়ে, ব্যবসা কম করেন। আপদকালীন সময় অন্তত কল রেটটা ফ্রি করে দেন। লম্বা কথার জন্য ফ্রি করা দরকার নেই। কমপক্ষে এক দুই মিনিট হলেও তো ফ্রি করে দিতে পারেন। আমার বিশ্বাস সরকারকে বললে এই মুহূর্তে সহযোগিতা করবেন।’
গ্রামীণফোনকে উদ্দেশ্য করে ব্যারিস্টার সুমন বলেন, ‘বিটিআরসির ১২ হাজার পাওনা টাকা নিয়ে যে নাটক করেছেন, সরকারকে টাকা না দেয়ার জন্য। ১১ হাজার কোটি টাকা এখনও তো দেন নাই। অন্তত কিছু সময় মানুষের কাজে আসেন। যেকোনো সময়ে মানুষ আপনাদের এই কোম্পানির পক্ষে দাঁড়াবে। নইলে কোম্পানির ব্যাপারে বাঙালি ও বাংলাদেশের মানুষের ধারণা ভালো না। এরকম কোম্পানি হতে যাবেন না।’
তিনি বলেন, ‘আমি আমার ভিডিও থেকে বিদায় নেয়ার আগে আবারও বলছি, সরকারের মন্ত্রণালয়ে যারা আছেন তাদেরকেও বলছি এবং ফোন কোম্পানিগুলোকেও বলছি, আপনাদের বদনাম করার উদ্দেশে এখানে আসিনি। লাইভে আসছি শুধু একটি কথা বলতে, এই করোনার মুহূর্তে দেশের মানুষের দুর্যোগের মোমেন্টে। সারা পৃথিবীর সরকার যখন এরকম সাবসিডিয়ারি দিচ্ছে আমরা তো এমনিতে ঘনবসতিপূর্ণ আমাদের মরার সম্ভাবনাও বেশি। অন্তত মোবাইলটা দিয়ে খোঁজ খবর নেয়ার সুযোগ টা করে দেন। এতো বে-রহম আমাদের ওপর কইরেন না।’