দুবাইয়ে ‘ফ্রন্ট লাইনার’ খেতাব পেলেন চাঁদপুরের কৃতি সন্তান মোশাররাফ

চাঁদপুর জেলার ফরিদগঞ্জ উপজেলার কৃতি সন্তান মোশাররাফ হোসেন পেলেন দুবাইয়ের ফ্রন্ট লাইনার খেতাব। আমিরাতে করোনার শুরুর দিকে মাঠ পর্যায়ে কাজে নিয়োজিত বিভিন্ন পেশাজীবীদের থেকে বাছাইকৃত যে কয়েকজনের নাম ‘ফ্রন্ট লাইনার’ হিসেবে প্রকাশ করা হয়েছে তাদের মধ্যে অন্যতম বাংলাদেশি এই রেমিট্যান্স যোদ্ধা।

তিনি উপজেলার ষোলদান গ্রামের শহীদ উল্লা বেপারী ও জাহানারা বেগমের তৃতীয় সন্তান।

সংযুক্ত আরব আমিরাত প্রবাসী ছেলে মোশাররাফ হোসেন সম্পর্কে বলতে গিয়ে শনিবার সংবাদমাধ্যমকে শহীদ উল্লা বেপারী বলেন, গ্রামের সবার মুখে মুখে এখন আমার ছেলের কথা। সে বিদেশে অনেক বড় কাজ করেছে। বিশ্বের মাঝে দেশের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল করেছে। এগুলো শুনে গর্বে আমার বুক ভরে যাচ্ছে।

করোনাকালীন সম্মুখযোদ্ধা হিসেবে সাহসী ভূমিকা রাখায় মোশাররাফের ছবি গত ১৫ এপ্রিলের মাঝরাতে বিশ্বের সর্বোচ্চ ভবন বুর্জ খালিফায় প্রদর্শিত হয়।

এবার দেশটির বিভিন্ন গণপরিবহনেও দেখা যাচ্ছে তার ছবি। দুবাই ও আবুধাবি সিটির বিভিন্ন বাস ও টেক্সিতে ‘ফ্রন্ট লাইনার’ খেতাবপ্রাপ্তদের সঙ্গে দেখা মিলছে মোশাররাফের ছবি। যা এখন সংযুক্ত আরব আমিরাতে ‘টক অব দ্য কমিউনিটি’তে পরিণত হয়েছে।

শুধু বাংলাদেশি অধ্যুষিত এলাকাগুলোই নয় বরং তার নাম উচ্চরিত হচ্ছে শহরে-শহরে বিভিন্ন আড্ডা গল্পে। প্রবাসীরা বলছেন, মোশাররাফকে দেয়া এই সম্মান রীতিমত বাংলাদেশিদের জন্য আনন্দের। করোনার সম্মুখযোদ্ধাদের নিয়ে এই প্রচারণা দেশটিতে বসবাসরত নাগরিকদের সুরক্ষিত থাকতেও উৎসাহিত করছে।

১৮ বছর আগে মোশাররাফ হোসেন একজন সাধারণ রেমিট্যান্স যোদ্ধা হিসেবে দুবাই পাড়ি দেন। ২০০৬ সালে দুবাই মিউনিসিপ্যালিটির ‘ইমার্জেন্সি পেস্ট কন্ট্রোল ডিপার্টমেন্ট’ এ কাজ শুরু করেন তিনি। মহামারি করোনাভাইরাসের সংক্রমণ শুরু হলে এই প্রতিষ্ঠান থেকে তাকে আত্মসুরক্ষা ও জীবাণুমুক্তির কাজে ব্যবহার হওয়া রাসায়নিকের মিশ্রণ ও প্রয়োগের ওপর বিশেষ প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। মাস্ক, গ্লাভস, ফেইস শিল্ড, প্রটেক্টিভ স্যুটে সজ্জিত হয়ে লকডাউন চলাচালে বিভিন্নভাবে মাঠ পর্যায়ে জীবাণুমুক্তকরণে কাজ করেন তিনি। এই কাজের স্বীকৃতিস্বরূপ মোশাররাফ পেলেন অনন্য এই খেতাব।

গত রবিবার মোশাররাফ হোসেন নিজের অভিজ্ঞতা বর্ণনা করতে গিয়ে বলেন, প্রশাসন যেভাবে আমাকে সম্মানিত করেছে, এটি আমি জানতামই না। কারণ আমরা কাজ করেছি ২০২০ সালের মার্চ থেকে মে মাস পর্যন্ত। ওই সময় কিছু পাবার আশায় কাজ করিনি। যা করেছি তা ছিল দায়িত্ব ও চাকরির দায়বদ্ধতা। আমাদের চাওয়া ছিল শুধু কাজের মাধ্যমে যেন নাগরিকরা সুরক্ষিত থাকেন।

নিজের অভিজ্ঞতার বর্ণনা করতে গিয়ে মোশাররাফ বলেন, করোনাকালীন পরিস্থিতি ছিল আমাদের জন্য একেবারেই নতুন। তখন জানতাম না, সুরক্ষার জন্য কি ধরনের কাজ করা দরকার। কিন্তু মাঠে নেমে অনেক অভিজ্ঞতা হয়েছে। যখন যেখানে গিয়েছি শুধু সাদা পোশাক ও সুরক্ষা সরঞ্জাম দেখেই মানুষ সাড়া দিয়েছে, সম্মান করেছে। তবে কিছু ব্যতিক্রম অভিজ্ঞাতও ছিল। লকডাউন চলাকালে নিজের চোখের সামনে আক্রান্ত ব্যক্তিদের গাড়িতে তোলা আর অন্যদের অসহায় চোখগুলো এখনো সামনে ভেসে আসে।

তিনি আরও বলেন, করোনাকালীন সময় বিভিন্ন বিভাগে যারা কাজ করেছে তাদের বিস্তারিত আমাদের হেড অফিস সংগ্রহ করেছে। পরে বিভিন্ন সময় অফিস থেকে আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়। হয়ত কর্তব্যরত অবস্থায় সময় ও পরিস্থিতি বিবেচনায় তাদের মনে দাগ কেটেছে। কিন্তু কোনোদিন ভাবিনি বুর্জ খলিফার মত বিশ্বের উঁচু ভবনে ভিন্ন ভিন্ন সেক্টরের স্থানীয় সাতজন নাগরিকের সঙ্গে আমার ছবি প্রদর্শন করা হবে বা গণপরিবাহনে ছবি প্রদর্শন করা হবে। বাংলাদেশি হিসেবে সত্যিই আমি খুব আনন্দিত।

উল্লেখ্য, আমিরাতে করোনাকালীন ‘ফ্রন্ট লাইনার’ স্বীকৃতি পাওয়া অন্যরা হলেন- দুবাইয়ের এয়ার উইং অ্যাম্বুলেন্স ইউনিটের প্রথম আমিরাতি নারী অ্যাডভান্সড প্যারামেডিক হামদা আল হাম্মাদি, আজমান মেডিকেল কলেজ ও শারজাহ হেলথ সেন্টারের স্বেচ্ছাসেবক ইসরা আল আগা, এমিরেটস রেড ক্রিসেন্ট টেকনিক্যাল সাপোর্ট ইউনিটের প্রধান আমর বাদর আল বুসায়েদি, চিকিৎসক ডেভিড সাইমন, নার্স জয়নাব আহমদ ফাহিম, আবুধাবি ক্যাপিটাল পুলিশের উপপ্রধান মোহাম্মদ আল খুরি ও আবুধাবি পুলিশের মেডিকেল সার্ভিসেস ডিপার্টমেন্টের প্রধান থুরাইয়া আলী আল হাশমি।

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, ১০ মে ২০২১

Share