Home / বিশেষ সংবাদ / ফুল ফুটিয়ে তালিপাম গাছের মরণ
তালিপাম

ফুল ফুটিয়ে তালিপাম গাছের মরণ

তালিপাম (বৈজ্ঞানিক নাম: Corypha taliera) পৃথিবীর বন্য পরিবেশ থেকে বিলুপ্ত উদ্ভিদ। এটি (Arecaceae) গোত্রের সদস্য। আকৃতিগত ভাবে তাল গাছ এর সাথে এর সাদৃশ্য আছে। তালিপাম জীবনে মাত্র একবার ফুল ও ফল দেয়। তারপর এর মৃত্যু ঘটে।

তালিপাম গাছ দেখতে অনেকটা তাল গাছের মতই। ঝড়ে হেলে না পড়ার জন্য গাছের নিচে রড নিয়ে খাঁজা তৈরি করা হয়েছে। আকাশ থেকে বৃষ্টি পড়ছে আর তালিপাম গাছের ফুল থেকে মৌমাছি ও ভ্রমর ছুটাছুটি করছে। বারবার ফুলের পরশ বা ফুল থেকে মধু নেওয়ার চেষ্টা করছে মৌমাছি।

ইন্টারন্যাশনাল ইউনিয়ন ফর কনজারভেশন অব নেচারের তথ্য অনুযায়ী, পৃথিবীর কোথাও আর বুনো পরিবেশে তালিপাম দেখা যায় না। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে থাকা শেষ তালিপাম গাছটিও ফুল দিয়ে মারা যায় ২০১০ সালে। সেই গাছের ফল থেকেই চারা তৈরি করা সম্ভব হয়েছে।

১৮১৯ সালে ভারতের পূর্বাঞ্চলে তালিপাম গাছের সন্ধান পেয়েছিলেন ব্রিটিশ উদ্ভিদবিজ্ঞানী উইলিয়াম রক্সবার্গ। পরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফুলার রোডের পাশে ১৯৫০ সালে আরেকটি গাছ শনাক্ত করেন অধ্যাপক এম সালার খান।

সে সময় পশ্চিমবঙ্গের বীরভূমে আরেকটি গাছ ছিল। সেই গাছে ১৯৭৯ সালে ফুল আসে। শতবর্ষী সেই গাছে হঠাৎ ফুল দেখে স্থানীয়রা চমকে যায়। ‘ভুতের আছর’ ভেবে ফল ধরার আগেই গাছটি কেটে ফেলেন তারা।

ইন্টারন্যাশনাল ইউনিয়ন ফর কনজারভেশন অব নেচার ১৯৯৮ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গাছটিকে বুনো পরিবেশে বিশ্বের একমাত্র তালিপাম গাছ হিসেবে ঘোষণা করে। গাছটি লাগানো হয়েছিল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্মের আগে। ২০০৮ সালে এই গাছে ধরে মরণ ফুল। জীবনচক্র মেনে ফুল থেকে ফল হয়; ২০১০ সালে মারা যায় গাছটি। তবে মৃত্যুর আগে দিয়ে যায় অনেক ফল।

আইইউসিএন তালিপামকে বুনো দশায় সম্পূর্ণ বিলুপ্ত ঘোষণা করেছে। তবে মৃত্যুর আগে অনেক ফল উৎপাদন করায় সেগুলো থেকে পাওয়া যায় প্রায় ৩০০ চারা। ২০১০ সালে বিতরণ করা হয় ১২০টি চারা। এর মধ্যে ১০০ চারা বন বিভাগের মাধ্যমে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে রোপণ করা হয়েছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন স্থানে সাতটি, কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ে সাতটি, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে দুটি, নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ে দুটি,সরকারি কেসি কলেজ ঝিনাইদহে দুইটি, বেইলি রোডের সামাজিক বন বিভাগকে দুটি করে চারা দেওয়া হয়েছে। মিরপুর জাতীয় উদ্ভিদ উদ্যানে তালিপামের চারা লাগানো হয়েছে।

বার্তাকক্ষ, ৩১ জুলাই, ২০২১;