কার কী শাস্তিকানাঘুষা শোনা যাচ্ছিল, অভিযুক্ত ফুটবলারদের হয়তো শাস্তি হবে না। তবে শেষ পর্যন্ত ফুটবলাররা বাফুফের শাস্তি থেকে রেহাই পেলেন না।
সাত ফুটবলারের চারজনকে পেতে হয়েছে শাস্তি। সর্বশেষ জাতীয় দলের অধিনায়ক মামুনুল ইসলাম ও উইঙ্গার জাহিদ হোসেন জাতীয় দলে নিষিদ্ধ এক বছর। মিডফিল্ডার সোহেল রানা ও স্টপার ইয়াছিন খান জাতীয় দলে নিষিদ্ধ হয়েছেন ছয় মাসের জন্য। গোলরক্ষক সোহেল, ডিফেন্ডার আতিকুর রহমান মিশু ও ইয়ামিন মুন্নাকে সতর্ক করে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। ফুটবলারদের আপিল করার সুযোগ নেই। কাল জাতীয় দল কমিটির সভায় গৃহীত এই সিদ্ধান্ত তাৎক্ষণিকভাবেই কার্যকর করা হয়েছে।
শৃঙ্খলা ভঙ্গ, মদ্যপান, অসদাচরণ, বাফুফের আচরণবিধি লঙ্ঘন, জাতীয় দলের প্রতি নিবেদনের অভাব—মোটা দাগে এগুলোই শাস্তি পাওয়া ফুটবলারদের বিরুদ্ধে অভিযোগ। সাফ ফুটবলের ব্যর্থতার কারণ খুঁজতে গিয়ে তদন্ত কমিটি কেঁচোর বদলে রীতিমতো সাপের সন্ধান পায়! তারই ভিত্তিতে সাত ফুটবলারের আত্মপক্ষ সমর্থনের পর অবশেষে এল চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত।
তবে একটা প্রশ্ন আসতেই পারে, বাংলাদেশের ফুটবলাররা জাতীয় দলে খেলার ব্যাপারে অতটা উৎসাহী নন বা সেরাটা ঢেলে দেন না বলে অভিযোগ আছে, কাজেই তাঁদের জাতীয় দল থেকে বহিষ্কার করলেও ওই খেলোয়াড়দের জন্য এটা আদতে কোনো শাস্তি হয়? কাঁড়ি কাঁড়ি টাকা গুনে ঘরোয়া ফুটবলে তো তাঁরা ঠিকই খেলবেন। বাফুফের জাতীয় দল কমিটির প্রধান কাজী নাবিল আহমেদ এর একটা ব্যাখ্যা দিয়েছেন, ‘ওরা জাতীয় দলে খেলতে গিয়েই শৃঙ্খলা ভেঙেছে। এ কারণেই শুধু জাতীয় দলের জন্যই শাস্তি দেওয়া, ঘরোয়া ফুটবলে অন্যায় করলে তখন হয়তো ঘরোয়াতেও নিষিদ্ধ হতো। তবে এটা তো সত্য, ওদের মানসম্মানে এখন টান পড়বে ঠিকই।’
শৃঙ্খলা ভঙ্গ ও মদ্যপান করেও অবশ্য এক ডিফেন্ডারসহ আরও এক-দুজন ফুটবলারকে রহস্যজনকভাবে ছেড়ে দিয়েছে তদন্ত কমিটি। বাফুফের এক সদস্যের সঙ্গে আত্মীয়তার সূত্রে ওই ডিফেন্ডার পার পেয়ে যাওয়ায় অবাক তাঁর সতীর্থরাও। তদন্তটা তাই প্রশ্নের ঊর্ধ্বে থাকেনি। কাজী নাবিল এ ব্যাপারে বলেছেন, ‘আমরা যে অভিযোগ পেয়েছি, সেটার ভিত্তিতেই সিদ্ধান্ত নিয়েছি।’ খালাস পাওয়াদের ব্যাপারে তাঁর কথা, ‘ওদের বিরুদ্ধে জোরালো কোনো অভিযোগ নেই।’
মদ্যপান করে হাতেনাতে ধরা পড়া শুধু জাহিদই শৃঙ্খলা ভাঙার অভিযোগ স্বীকার করেছিলেন। তাঁর শাস্তিটা তাই অবধারিতই মনে হচ্ছিল। তবে মামুনুল তাঁর বিরুদ্ধে শাস্তির সিদ্ধান্তকে প্রত্যাখ্যানই করছেন, ‘জাহিদ আর আমার অপরাধ এক নয়। তাহলে আমি ওর মতো শাস্তি পাব কেন? এটা অন্যায় বিচার। আমি বলির পাঁঠা হয়েছি।’
মামুনুলের বিরুদ্ধে বাফুফের আচরণবিধির ২, ৬ ও ৭ নম্বর ধারা ভঙ্গের অভিযোগ আনা হয়েছে। এই ধারাগুলোয় আছে—গালমন্দ, অনুমতি ছাড়া গণমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলা, বাফুফের গোপনীয়তা ফাঁস করা ও শৃঙ্খলা ভঙ্গ। অধিনায়ক হিসেবে মামুনুলের ব্যর্থতার কথাও এসেছে। ২০১৩ সালের শুরু থেকে তিনি জাতীয় দলের অধিনায়ক ছিলেন এবং সাম্প্রতিক বছরে হয়ে ওঠেন দেশের সেরা খেলোয়াড়ও। সেটা মনে করিয়ে দিয়ে মামুনুল বলছেন, ‘এখনো দাবি করব, আমি কোনো অন্যায় করিনি। ১০ বছর ধরে জাতীয় দলে পারফর্ম করেছি। সেটারই উপহার পেলাম! দেশকে কিছু দেওয়ার এই কি প্রতিদান!’
কাজী নাবিল নাকচই করে দিলেন মামুনুলের দাবি। তাঁর কথা, সবকিছু খুব ভালোভাবে পর্যালোচনা করে নির্মোহভাবে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। মামুনুল শাস্তির সিদ্ধান্তকে অন্যায় বলেছেন, এ ব্যাপারে নাবিলের বক্তব্য, ‘কেউ এই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে কথা বললে আরও বড় শাস্তি দেওয়া হবে।’
তবে জাহিদ শাস্তিটা মেনেই নিয়েছেন, ‘বাফুফের দেওয়া শাস্তি আমি মাথা পেতে নিয়ে নিজেকে পরিশুদ্ধ করে ফিরে আসব দলে।’ বাকি দুজনের সঙ্গে অনেকবার ফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করেও তাঁদের পাওয়া যায়নি।
সূত্র : প্রথম আলো
নিউজ ডেস্ক || আপডেট: ০১:৪৪ অপরাহ্ন, ০৩ মার্চ ২০১৬, বৃহস্পতিবার
এমআরআর
Chandpur Times | চাঁদপুর টাইমস Top Newspaper in Chandpur