ফিলিস্তিন মুক্ত না হওয়া পর্যন্ত পাশে থাকবো: রফিকুল ইসলাম

গাজায় ত্রাণবাহী নৌবহর আটকের প্রতিবাদে আয়োজিত এক বিক্ষোভ সমাবেশ থেকে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মাও.রফিকুল ইসলাম খান বিশ্ব মুসলিমদের ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন।

তিনি দৃঢ়ভাবে বলেছেন যে,‘‘ফিলিস্তিন সম্পূর্ণ মুক্ত ও স্বাধীন না হওয়া পর্যন্ত তাদের লড়াই ও সংগ্রাম অব্যাহত থাকবে, ফিলিস্তিন মুক্ত না হওয়া পর্যন্ত পাশে থাকবো।’’

শুক্রবার জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমের উত্তর গেটে জামায়াতে ইসলামী ঢাকা মহানগর উত্তর-দক্ষিণ আয়োজিত এ বিক্ষোভ সমাবেশে তিনি এসব কথা বলেন। ইসরায়েলি বাহিনী কর্তৃক গাজামুখী প্রায় ৪০টি ত্রাণবাহী জাহাজ আটক এবং সুইডিশ জলবায়ু কর্মী গ্রেটা থানবার্গসহ শত শত কর্মীকে গ্রেপ্তারের প্রতিবাদে এ সমাবেশের আয়োজন করা হয়।

মাওলানা রফিকুল ইসলাম খান বলেন,”নিষ্ঠুর ইসরাইল বাহিনী ফিলিস্তিনের গাজায় একের পর এক গণহত্যা পরিচালনা করছে। এ গণহত্যার লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত হয়েছে নারী এবং শিশুরা, ফিলিস্তিনের সাধারণ জনগণ। কিন্তু আমরা প্রতিবাদ জানাচ্ছি। আমরা বিক্ষোভ মিছিল করছি। সারা দুনিয়া এ হত্যাকাণ্ডের বিরুদ্ধে,এ গণহত্যার বিরুদ্ধে,এ নারী নির্যাতনের বিরুদ্ধে, এ শিশু হত্যাকারীদের বিরুদ্ধে।” তিনি গতকালের ত্রাণবাহী জাহাজে হামলার তীব্র নিন্দা জানিয়ে বলেন,এতে বিশ্বের অধিকাংশ দেশ ফিলিস্তিনের স্বাধীনতার পক্ষে মত দিয়েছে।

তিনি আরও উল্লেখ করেন, ফিলিস্তিন ও গাজাকে আলাদা রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দেয়ার পরও বিশ্বের কিছু শক্তিধর দেশ ছোট্ট ইসরায়েলের পক্ষে অস্ত্র ও সমর্থন দিয়ে এ নৃশংস ঘটনার সঙ্গে সম্পৃক্ত হচ্ছে। তার মতে, “এ অনৈতিক সহায়তা মানবতার বিরুদ্ধে এক ধরনের খেলায় রূপ নিয়েছে।” তিনি বিশ্বাস করেন যে শহীদের রক্তের বিনিময়ে ফিলিস্তিন স্বাধীনতা অর্জন করবে। জামায়াতে ইসলামীর এ নেতা জাতিসংঘ ও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতি আহ্বান জানান—অবিলম্বে ইসরায়েলের হাতকে দমন করতে, দখল হওয়া অঞ্চলগুলো দ্রুত মুক্ত ঘোষণা করতে এবং ত্রাণবাহী জাহাজের কর্মীদের অবিলম্বে মুক্তি দিতে। তিনি বাংলাদেশ সরকারের নিন্দা ও মুক্তির দাবিকেও স্বাগত জানান এবং পুনর্ব্যক্ত করেন যে, ফিলিস্তিন স্বাধীনতা অর্জন না করা পর্যন্ত মুসলমানদের লড়াই, সহানুভূতি ও সংগ্রাম অব্যাহত থাকবে।

বিক্ষোভ সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন ঢাকা মহানগরী উত্তরের আমীর মুহাম্মদ সেলিম উদ্দিন। কেন্দ্রীয় ও ঢাকা মহানগরের অন্যান্য নেতাকর্মীরাও এতে অংশ নেন।

উল্লেখ্য, সম্প্রতি ফিলিস্তিনের গাজা অভিমুখে মানবিক ত্রাণ সহায়তা নিয়ে যাত্রা করা আন্তর্জাতিক নৌ-বহর ‘গ্লোবাল সুমুদ ফ্লোটিলা’কে ইসরায়েলি নৌবাহিনী আটক করেছে। স্পেন থেকে যাত্রা শুরু করে ইতালি ও গ্রিস থেকে আরও নৌযান যোগ হয় এ বহরে, যাতে ৪০টির বেশি বেসামরিক নৌ-যান ছিল। এ নৌ-যানগুলো গাজাবাসীর জন্য খাদ্য, চিকিৎসা সামগ্রী ও অন্যান্য মানবিক সহায়তা বহন করছিল।

গাজা উপত্যকায় ইসরায়েলের নৌ-অবরোধ ভাঙা এবং গাজার ক্ষুধার্ত মানুষের কাছে ত্রাণ পৌঁছে দিতে প্রায় ৪৫টি জাহাজে করে গাজার দিকে রওনা দিয়েছিলেন ৫শ অধিকারকর্মী। নৌ-বহরে বিশ্বের ৩৭টিরও বেশি দেশের ৪শ জনের বেশি অধিকারকর্মী,পার্লামেন্ট সদস্য, চিকিৎসক ও সাংবাদিক ছিলেন,যাদের মধ্যে সুইডিশ জলবায়ু কর্মী গ্রেটা থুনবার্গও ছিলেন।

ইসরায়েলি নৌ-বাহিনী বুধবার ভূমধ্যসাগরের আন্তর্জাতিক জলসীমায়,গাজা উপকূল থেকে প্রায় ১২০-১২৯ কি.মি. দূরে,এ নৌ-বহরকে বাধা দেয়। ইসরায়েলি সেনারা বেশ কয়েকটি জাহাজ থামিয়ে তাতে উঠে পড়ে এবং নৌ-বহরের যাত্রীদের আটক করে।

তুরস্ক এ ঘটনাকে ইসরায়েলের জলদস্যুতা আখ্যা দিয়ে এর নিন্দা জানিয়েছে। বাংলাদেশ সরকারও এ আটকের তীব্র নিন্দা জানিয়ে আন্তর্জাতিক আইনের লঙ্ঘন বলে আখ্যা দিয়েছে এবং অবিলম্বে সকল আটককৃতদের মুক্তির দাবি জানিয়েছে। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ইসরায়েলের এ পদক্ষেপের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ শুরু হয়েছে।

৩ অক্টোবর ২০২৫
এ জি