গাজায় এক বছর ধরে চলা যুদ্ধে নিহত ফিলিস্তিনির সংখ্যা ৪৩ হাজার ছাড়িয়েছে। নিহতদের অর্ধেকেরও বেশি নারী ও শিশু। সোমবার ২৮ অক্টোবর গাজার হামাস নিয়ন্ত্রিত স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, গত দু’ দিনে গাজার হাসপাতালে আসা ৯৬ জনের মৃত্যু হয়েছে।
তবে ইসরায়েলি সেনারা গাজার উত্তরাঞ্চলে অভিযান অব্যাহত রেখেছে। চলমান যুদ্ধে এক সপ্তাহের মধ্যে একটি হাসপাতালেও অভিযান চালিয়েছে সেনারা।
ইসরায়েলি সেনাবাহিনী জানিয়েছে,শুক্রবার বেইত লাহিয়ার কামাল আদওয়ান হাসপাতালে অভিযান চালিয়ে ১শ সন্দেহভাজন হামাস সদস্যকে আটক করেছেন তারা।
এদিকে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা অভিযোগ করেছে,হাসপাতালের ৪৪ জন পুরুষ কর্মীকে আটক করেছে ইসরায়েল। ফিলিস্তিনি মেডিকেল কর্মকর্তারা জানিয়েছেন,অভিযানে প্রায় ২শ’ রোগীর চিকিৎসা দেয়া হাসপাতালটি ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এক বছর ধরে চলা যুদ্ধে ইসরায়েল গাজার বেশ কয়েকটি হাসপাতালে অভিযান চালিয়ে বলেছে যে হামাস এবং অন্যান্য সশস্ত্র গোষ্ঠী সামরিক উদ্দেশ্যে এগুলো ব্যবহার করে।
ফিলিস্তিনি চিকিৎসা কর্মকর্তারা এসব অভিযোগ অস্বীকার করে সামরিক বাহিনীর বিরুদ্ধে অভিযোগ করেছেন যে,ইসরায়েলি বাহিনী বেসামরিক নাগরিকদের বেপরোয়াভাবে বিপদে ফেলেছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ইসরায়েলি সামরিক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, কামাল আদওয়ান হাসপাতালের আশপাশে প্রচণ্ড লড়াই চলছিল,যদিও হাসপাতালের ভেতরে ছিল না এবং হাসপাতালের ভেতরে অস্ত্র পাওয়া গেছে।
ওই কর্মকর্তা বলেন,“কয়েকজন হামাস সদস্য চিকিৎসকের ছদ্মবেশে থাকায় স্বাস্থ্যকর্মীকে আটক ও তল্লাশি করা হয়েছে।”
ওই কর্মকর্তার মতে, সামরিক বাহিনী অভিযানের আগের সপ্তাহগুলোতে ৮৮ জন রোগী ও চিকিৎসা কর্মীকে অন্য হাসপাতালে স্থানান্তরিত করতে আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোকে সহায়তা করেছে। চিকিৎসা সুবিধা চালু রাখতে অভিযানের সময়ই সেনারা আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর কাছ থেকে ৩০ হাজার লিটার জ্বালানি ও চিকিৎসা সামগ্রী নিয়ে এসেছে।
ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী ফিলিস্তিনিদের উত্তর গাজা খালি করার আহ্বান জানিয়েছে। তারা তিন সপ্তাহেরও বেশি সময় ধরে বড় ধরনের আক্রমণ চালাচ্ছে ওই এলাকাটিতে। গাজার উত্তরাঞ্চলীয় শহর জাবালিয়ায় অভিযান আরও কয়েক সপ্তাহ চলবে বলে জানিয়েছেন ওই কর্মকর্তা।
চলতি মাসের শুরুর দিকে জাতিসংঘ জানিয়ে, গাজার উত্তরাঞ্চলে এখনও অন্তত চার লাখ মানুষ অবস্থান করছে এবং গত এক মাসে উত্তরাঞ্চলে মানবিক ত্রাণ পৌঁছানোর পরিমাণ কমে যাওয়ায় খাদ্য সংকটে পড়েছে।
গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকে এ পর্যন্ত অন্তত ৪৩ হাজার ২০ জন নিহত ও ১ লাখ ১ হাজার ১শ ১০ জন আহত হয়েছেন। হতাহতদেরকে যোদ্ধা ও বেসামরিক নাগরিক হিসেবে পৃথকভাবে উল্লেখ করা হয়নি।
২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর ইসরায়েলের অভ্যন্তরে হামাস নেতৃত্বাধীন যোদ্ধাদের অভিযানে ১ হাজার ২শ মানুষের মৃত্যু হয় এবং ২শ ৫০ জনকে অপহরণ করে গাজায় নিয়ে যায়। এরপরই ইসরায়েল ও হামাসের মধ্যে যুদ্ধ শুরু হয়।
৩০ অক্টোবর ২০২৪
এজি