শনিবার ০৬ জুন ২০১৫ : ০৩:৪৯ অপরাহ্ন
রাজু আহমেদ :
হোটেলে আপত্তিকর অবস্থায় শতাধিক তরুণ-তরুণী আটক, মাইক্রোবাসে তুলে তরুণীকে ধর্ষণ, বয়ফ্রেন্ডের সাথে দেখা করতে গিয়ে বয়ফ্রেন্ড ও তার বন্ধুদের কর্তৃক রাতভর ধর্ষিতা তরুণী, দেবরের কুপ্রস্তাবে রাজি না হওয়ায় প্রবাসী ভাইয়ের স্ত্রীকে বন্ধুদের নিয়ে পালাক্রমে ধর্ষণ অতপর হত্যা, শিক্ষক কর্তৃক ছাত্রী ধর্ষণ, ভাইয়ের কাছে বোন ধর্ষিতা, বিবাহের প্রলোভন দেখিয়ে মাসের পর মাস তরুণীকে ধর্ষণ, শ্বশুর কর্তৃক পুত্রবধূকে ধর্ষণ, বাবার কু-দৃষ্টিতে থেকে রেহাই মেলেনি মেয়ের-এমন হাজারো লোমহর্ষক সংবাদে নিত্যাকার পত্রিকার পাতাগুলো ভরে যায়।
এসব ঘৃণিত ঘটনার জন্ম দিয়ে মানুষ লজ্জিত না হলেও পত্রিকার বোবা পৃষ্ঠাগুলো এ ধরনের সংবাদ ধারণে ভারাক্রান্ত হয়।
সভ্য দুনিয়ায় বসবাসের দাবিদার মানুষগুলো এমন কতিপয় জঘন্য শব্দ উচ্চারণে লজ্জা অনুভব করলেও সমাজের বিভিন্ন স্থানে অহরহ ঘটে চলেছে এমন সব ভয়াবহ, বর্বরোচিত ঘটনা। কালে-ভদ্রে ধর্ষণে অভিযুক্ত অপরাধী শাস্তির মুখোমুখি হলেও তা যেমন অপরাধের তুলনায় একেবারেই যথেষ্ট নয় তেমনি কোথাও অপরাধী থেকে যাচ্ছে ধরাছোঁয়ার বাইরে।
আইনের ও নিয়মের দোহাই দিয়ে ধর্ষিতাকে কথার জালে আরও হাজারবার মানসিক ধর্ষণ করা হয়। পরিবার কিংবা সামাজের মানুষের দ্বারা বারব ার ধর্ষিতা হয়েও কেউ কেউ লজ্জায় মুখ খুলতে পারে না কেননা বিচিত্র এই সমাজ ধর্ষককে সমাদর করলেও ধর্ষিতাকে পরিবার, সমাজ কিংবা রাষ্ট্রে ঠাঁই দিতে কুণ্ঠিত।
ধর্ষকের শাস্তি নিশ্চিতের দাবি আদায়ের পরিবর্তে কেউ আবার ধর্ষণকর্ম ঘটার কারণ উদঘাটনে ব্যস্ত। ধর্ষণের জন্যে নারীর পোশাক কিংবা অঙ্গভঙ্গি দায়ী নাকি পুরুষের দৃষ্টিভঙ্গি-এ রহস্য উদঘাটন করতেই তাদের সব চেষ্টা-প্রচেষ্টা।
ধর্ষণের প্রাথমিক কারণ অনুসন্ধান গুরুত্বপূর্ণ। তবে মূল কারণগুলো স্পষ্টভাবে চিহ্নিত হওয়া সর্বাগ্রে প্রয়োজন। নারীর পোশাক কিংবা পুরুষের দৃষ্টিভঙ্গির চেয়েও ধর্ষণ সংগঠিত হওয়ার অন্তরালে যে ভয়াবহ অবক্ষয় লুকিয়ে রয়েছে তা উদঘাটনের মানসিকতা অনেকের মধ্যেই অনুপস্থিত।
ধর্ষণের মতো একটি জঘন্য ও মানবতাবিরোধী অপরাধ ঘটিয়ে যখন কোনো কোনো অপরাধী বিভিন্ন ধরনের ব্যানারের আশ্রয় পায় তখন মানবতা ডুকরে কাঁদে। ক’বছর পূর্বে ভারতের দিল্লীতে চলন্ত বাসে ‘নির্ভয়া’ কান্ড ঘটার পর ধর্ষকের শাস্তির জন্য শুধু দিল্লী নয় বরং গোটা ভারত কেঁপে উঠেছিল।
বিশ্ব মিডিয়া চড়াও করে সে খবর দিনের পর দিন প্রকাশ করেছে। এরপরেও ভারতে ধর্ষণের ঘটনা কমেনি বরং ধারাবাহিকভাবে ধর্ষণের অনেকগুলো ঘটনা ঘটে চলেছে। ভারতের এদেশস্থ সমালোচকরা তখন আড়চোখে মিটি মিটি হেসে ভারতকে ধর্ষকদের দেশ বলে তিরস্কার করেছে।
যারা বাংলাদেশের নারীদের নিরাপত্তা পরিস্থিতি নিয়ে গর্ব করতাম তাদের মুখে কুলুপ আঁটার সময় বোধহয় উপস্থিত। ঢাকার মতো জনাকীর্ণ শহরে প্রকাশ্যে রাস্তা থেকে মাইক্রোবাসে তুলে তরুণীকে ধর্ষণের মতো ঘটনা ঘটবে এমনটা কল্পনাতেও ছিল না অথচ? ভারতের নির্ভয়া কান্ড আর ঢাকার আদিবাসী তরুণীকে ধর্ষণের ঘটনায় পার্থক্য কোথায়?
দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে যে সংখ্যক ধর্ষণ এবং সংশ্লিষ্ট সংবাদ প্রতিদিন পত্রিকার পৃষ্ঠায় স্থান পায় তা সুস্থ মানুষকে আতঁকে দিতে যথেষ্ট।
ধর্ষকরা যেহেতু পুরুষ গোত্রীয় তাই একজন পুরুষ হিসেবে এসব সংবাদ পাঠ করে লজ্জায় মাথা নিচু হয়ে আসে। ধর্ষণের ক্রমাগত আধিক্য দেখে একবন্ধু ঠাট্টা করে বলেছিল, এখন দেশে ‘ধর্ষণ প্রতিদিন’ নামের পত্রিকা খুবই দরকার!
ওকে ধমক দিয়ে থামিয়ে দিলেও বাস্তবতা অস্বীকার করার উপায় আছে? শুধু ধর্ষণের সংবাদেই যে দেশের পত্রিকার এক বা আধা পৃষ্ঠা ভরে যায় তা কি শঙ্কার জন্য যথেষ্ট নয়?
ধর্ষণ মূলত পুরুষ কর্তৃক নারীকে পাশবিক নির্যাতন।
সাধারণভাবে নারীর অনিচ্ছায় তার সাথে যৌন সম্পর্ক স্থাপনকেই ধর্ষণ হিসেবে সংজ্ঞায়িত করা হয়। বিবাহ বহির্ভূত নারী-পুরুষের শারীরিক সম্পর্ক স্থাপনকে ধর্ষণ হিসেবে সংজ্ঞায়িত করা হয় না। তবে উভয়ের সম্মতিতে নারী-পুরুষের শারীরিক সম্পর্ক স্থাপনের পরেও যদি নারী বিগড়ে গিয়ে পুরুষের বিরুদ্ধে পাশবিক নির্যাতনের অভিযোগ তোলে তবে তাও ধর্ষণ হিসেবে সাব্যস্ত হয়।
কেবল বিবাহ পরবর্তী বৈধ শারীরিক সম্পর্ক ছাড়া অন্য যে কোনো ধরনের শারীরিক সম্পর্ক স্থাপন (হোক স্বেচ্ছায় বা অনিচ্ছায়) পরোক্ষ ও প্রত্যক্ষভাবে ধর্ষণ।
জৈবিক চাহিদা পূরণের জন্যে নারী-পুরুষের মধ্যে সম্পর্ক পূর্বেও ছিল, বর্তমানেও আছে এবং ভবিষ্যতেও রবে। সুদুঢ় অতীতে জৈবিক চাহিদা পূরণ পদ্ধতি বিশৃঙ্খল অবস্থায় থাকলেও কালের বিবর্তনে তা সুশৃঙ্খলতায় রূপ নিয়ে বিবাহ বন্ধনের মাধ্যমে স্থায়ী পবিবার প্রথায় পরিণত হয়েছে।
বিশ্বে যতগুলো জাতিগোষ্ঠী বসবাসরত তাদের মধ্যে মাত্র কয়েকটি ব্যতীত সকল জাতিই তাদের জৈবিক চাহিদা পূরণের বৈধতা লাভের জন্য নারী-পুরুষে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হয়। বর্তমান সময়ে আমাদের সমাজে যৌনাচার যে পথে ধাবিত হচ্ছে তা অতীতের যৌনাচারের সাথে বিভিন্নভাবে মিলে যাচ্ছে।
অথচ অতীতের বিশৃঙ্খল যৌনাচারের দীর্ঘপথ পাড়ি দিয়ে সমাজবদ্ধ নারী-পুরুষ শৃঙ্খলায়িতভাবে জৈবিক চাহিদা পূরণের রুচিশীল অবস্থানে পৌঁছেছিল।
বর্তমান সময়ে সংগঠিত বহুল আলোচিত ধর্ষণ কিংবা বিবাহ বহির্ভূত নারী-পুরুষের অনৈতিক সম্পর্কের ধরণ অতীতের কোনো স্তরের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ তা বুঝতে হলে ফিরে তাকাতে হবে আদি জৈবিক চাহিদা পূরণের ধরনে। অবাধ যৌনাচার থেকে ধারাবাহিক বর্ণনার মাধ্যমে শৃঙ্খলায়িত জৈবিক চাহিদা মেটানোর ধারণা পেতে আমেরিকান নৃবিজ্ঞানের জনক লুইস মর্গানের ‘প্রাচীন সমাজ’ নামক গ্রন্থে বর্ণিত নৃতাত্ত্বিক তত্ত্বটি সর্বাধিক গ্রহণযোগ্য ।
লুইস হেনরি মর্গানের ধারণানুযায়ী, পৃথিবীতে মানুষ আগমনের প্রারম্ভে অবাধ যৌনাচার বিদ্যমান ছিল। তখন যৌন জীবনের ওপর কোনো সামাজিক নিয়ন্ত্রণ ছিল না। তাই সামাজিক প্রতিষ্ঠান হিসেবে বিবাহের কোন অস্তিত্ব ছিল না। এটাই ছিল যৌন জীবনের প্রথম স্তর এবং সামাজিক বিবর্তনের প্রথম স্তরের প্রথম পর্যায় অর্থ্যাৎ বন্যদশার নিম্ন পর্যায়। এরপরের স্তরের এসে ধারণা পাওয়া যায় কনস্যাঙ্গুইন পরিবারের। যেখানে ভাই-বোনের মধ্যে বিবাহের মাধ্যমে জৈবিক চাহিদা পূরণের ব্যবস্থা ছিল।
অবাধ যৌন জীবনের ওপর কনস্যাঙ্গুইন ব্যবস্থা কিছুটা নিয়ন্ত্রণ আরোপে সামর্থ্য হয়। এ ব্যবস্থা ছিল আদি বা প্রথম পরিবার এবং যৌন জীবনের দ্বিতীয় স্তর। পলিনেশীয়দের মধ্যে এ ধরনের পরিবারের অস্তিত্ব পাওয়া গিয়েছিল।
এরপর সন্ধান পাওয়া যায় পুনালুয়ান পরিবারের। যেখানে আপন জ্ঞাতি সম্পর্কের ক’জন বোনের সাথে একদল পুরুষের অথবা আপন জ্ঞাতি সম্পর্কের কয়েকজন ভাইয়ের সাথে একদল মহিলার যৌথ বিবাহের ভিত্তিতে পরিবার গঠিত হত।
স্বাভাবিকভাবেই এ প্রথায় স্বামীরা পরস্পর ভাই হলে স্ত্রীরা পরস্পর বোন নয় কিংবা উল্টো। ভাইবোনের মধ্যে জৈবিক সম্পর্ক নিষিদ্ধকরণের জন্য পুনালুয়ান পরিবারের আবির্ভাব ঘটে। পুনালুয়ান প্রথা ছিল যৌথ বিবাহ পদ্ধতি যা হাওয়াইয়ান রক্ত সম্পর্কে এ ধরনের পরিবারের অস্তিত্ব ছিল বলে ধারণা করা হয়। এটা পরিবার প্রথার বন্য দশার উচ্চ পর্যায়, তবে বর্বরদশার নিম্ন পর্যায়।
এরপর সন্ধান পাওয়া যায় সিনডিয়াসমিয়ান পরিবারের। যেখানে একজন পুরুষ ও একজন মহিলার মধ্যে অস্থায়ী যুগল বন্ধনে এ পরিবার গঠিত হত তবে এ পরিবারের স্থায়ীত্ব স্বামী-স্ত্রীর খেয়ালখুশিতে নির্ভর করত। সাধারণত একটি সন্তান জন্মের পর এ পরিবার বিলুপ্ত হয়ে যেত।
এটা হচ্ছে তৃতীয় স্তরের পরিবার এবং চতুর্থ পর্যায়ের যৌনজীবন।
উল্লেখ্য, সিনডিয়াসমিয়ান পরিবার যেহেতু এক স্বামী এবং এক স্ত্রীর পরিবার সেহেতু এটিই আধুনিক একক পরিবারের সূচনার ইঙ্গিত দেয়। আমেরিকার আদিবাসীদের মধ্যে এ ধরণের পরিবারের সন্ধান পাওয়া যায় যা বর্বর দশার নিম্ন পর্যায় ছিল। এরপর গঠিত হয় পিতৃপ্রধান পরিবার। যে ব্যবস্থায় একজন পুরুষের সাথে একাধিক স্ত্রীর বিবাহের ভিত্তিতে পরিবার গঠিত হত এবং পরিবারের ক্ষমতা স্বামী, পিতা বা বয়স্ক পুরুষের হাতে ন্যস্ত থাকত। এটাই হচ্ছে চতুর্থ স্তরের পরিবার এবং পঞ্চম স্তরের যৌন জীবন। রোমান সাম্রাজ্যে সর্বপ্রথম পিতৃপ্রধান পরিবারের সন্ধান পাওয়া যায় যা বর্বর দশার উচ্চ পর্যায়। এরপর মনোগামিয়ান বা একজন পুরুষের সাথে একজন নারীর বিবাহ সূত্রে পরিবার গঠিত হওয়ার রীতি। এ পরিবার ব্যবস্থা যথেষ্ঠ স্থায়ী।
মনোগামিয়ান পরিবারই আধুনিক পরিবারের সর্বজনীন রূপ। বর্বর দশার উচ্চ পর্যায় থেকে এ পরিবারের অস্তিত্ব লক্ষ্য করা যায় এবং কালের দীর্ঘ পথপরিক্রমায় আজও পরিবার প্রথায় এ ব্যবস্থা সর্বাধিক পরিলক্ষিত ।
আধুনিক পরিবার গঠনের উদ্দেশ্য যেভাবেই ব্যাখ্যা করা হোক না কেনো, জৈবিক চাহিদা মেটানোকে সর্বাধিক গুরুত্ব দিতে হবে।
কালের পরিক্রমায় পদ্ধতিগত বিভিন্ন পরিবর্তন এলেও যৌনচারের মূল ধারায় আঘাত না লেগে বরং দিনে দিনে সুশৃঙ্খল পদ্ধতির মাধ্যমে সংহতি এসেছে। যা সমাজকে বিশৃঙ্খলা থেকে রক্ষা করে নারী-পুরুষ পরস্পরের প্রতি পরস্পরকে শ্রদ্ধাশীল করেছে। জীবনে দিয়েছে গতি। সভ্যতার স্বর্ণ শিখরে উঠেছে মানুষের স্থান।
জৈবিক চাহিদা মেটানোর স্থায়ী ব্যবস্থা থেকে হঠাৎ করে এমন পদস্খলন কেন?
ঘুমিয়ে থাকা পশু জেগে ওঠে আমাদের লাখ লাখ বছর পিছনে ঠেলে দিচ্ছে অথচ আমাদের বিবেক চুপ।
নারীরা কেন বলবে, তারা আজ রাস্তায় হিংস্র কুকুর দেখলে ভয় পায় না কিন্তু পুরুষ দেখলে ভয় পায়। অবৈধ যৌন সম্পর্ক স্থাপনে (ধর্ষণ কিংবা স্বেচ্ছায়) একপক্ষকে দায়ী করা সম্ভব নয়। শুধু ধর্ষণের জন্য পুরুষকে হয়ত ৮০-৯০ভাগ কিংবা ক্ষেত্র বিশেষ শতভাগ দায়ী করা গেলেও যে অনৈতিক সম্পর্ক স্বেচ্ছায় ঘটে তার জন্য উভয়েই সমভাবে দায়ী।
হোটেল কিংবা নির্জনে যে তরুণ-তরুনীরা শারীরিক সম্পর্কে লিপ্ত তা লোকচক্ষুর সীমায় আসার আগ পর্যন্ত অপরাধ হিসেবে পরিগণিত হয় না। অথচ সেগুলো যদি কঠোরভাবে নিষিদ্ধ হত তবে ধর্ষণের সংখ্যা অবশ্যই কমে আসত।
জৈবিক চাহিদা মেটানোর আকাংখা দুর্বার। যে পুরুষরা ধর্ষণের মত অপরাধে জড়ায় তারা হয় পূর্বে স্বেচ্ছায় নারী শরীরের স্পর্শ পেয়েছে কিংবা অন্য কোনোভাবে। যখনি এ আকাংখা মেটানো অভিপ্রায় বাধগ্রস্থ হয় তখন তারা হায়েনায় পরিণত হয়।
কাজেই ধর্ষণ বেড়ে যাওয়ার জন্য একদিকে যেমন বিচারহীনতার সংস্কৃতি দায়ী তেমনি সমভাবে দায়ী স্বেচ্ছায় নারী-পুরুষের সম্পর্ক স্থাপন পদ্ধতিতে নৈতিক শিথিলতা।
সভ্যতার আলো, শিক্ষার প্রভাব ও ধর্মীয় বিশ্বাস-মূল্যবোধের কারণে মানুষের মধ্যে জৈবিক কামনা মেটানোর পদ্ধতিতে নীতিবোধ তৈরি হয়েছিল যা মানবিক গুণাবলী বিকাশে পূর্ণতার স্তরের। হঠাৎ এ পদস্খলন সমাজকে নতুনভাবে অস্থির ও ভাবনায় ফেলেছে।
উন্মুক্ত আকাশ সংস্কৃতির চর্চা, পারিবারিক বন্ধনে দূরত্ব সৃষ্টি, আধুনিক প্রযুক্তির অপব্যবহার, সুষ্ঠু চিত্তোবিনোদন ও খেলাধূলার পরিসর কমে যাওয়ায় মানুষের মধ্যে উচ্ছৃঙ্খল যৌন তাড়নার সৃষ্টি হয়েছে। তা না হলে আদিম যুগেও যা কল্পনাতীত ছিল সেই পশুসুলভ আচরণ অর্থ্যাৎ কন্যার প্রতি পিতার কুদৃষ্টি কীভাবে সৃষ্টি হয়?
মা তার মেয়েকে কিংবা ভাই/বোন তার অন্য বোনকে কীভাবে যৌনকর্মে বাধ্য করতে পারে? জন্মগতভাবে মানুষ নিষিদ্ধ বস্তুর প্রতি আকর্ষিত। এ আকর্ষণ প্রয়োগের মাধ্যমেই মানুষের মধ্য থেকে মানুষ ও মানুষরূপী পশুর পার্থক্য করা সম্ভব।
সমাজে যে হারে মানুষরূপী পশুর সংখ্যা বেড়ে চলছে তাতে মানুষ কতদিন মানুষ থাকবে তা নিয়েও জেগেছে শঙ্কা। অবাধ যৌনাচারই যদি কল্যাণকর হতো তবে আমাদের পূর্বসূরীরা কেনো অনেক ত্যাগের মাধ্যমে একটি শৃঙ্খলায়িত বিবাহ পদ্ধতি তথা পারিবারিক ব্যবস্থার প্রবর্তন করলেন? লিভটুগেদারের মতো গর্হিত অপরাধকেও বৈধতা দিতে কেউ কেউ আন্দোলন করছেন। দু’জন নারী-পুরুষ কয়েকদিন একসাথে কাটানোর পর যখন বিবাহের প্রতিশ্রুতি রক্ষা পাচ্ছে না তখন ধর্ষণের মামলা রুজু করা হচ্ছে।
কেউ ধর্ষকের পক্ষে আবার ধর্ষিতার পক্ষেও আন্দোলন করছে। সচেতন মহল সৃষ্ট সামাজিক আইন এবং ধর্মীয় রীতি কখনো মানবকল্যাণের পরিপন্থী নয়। সুতরাং নৈতিকতা বহির্ভূত শারীরিক সম্পর্ক স্থাপন ও এর অনুষঙ্গ যতদিন বন্ধ করা না যাবে ততদিন ধর্ষণসহ নারী নির্যাতন বন্ধ হবে না। এজন্য সর্বপ্রথম প্রয়োজন ধর্মীয় অনুশাসনের প্রতি গভীর শ্রদ্ধাবোধ। সুষ্ঠু সংস্কৃতি চর্চার মাধমে নৈতিকতা বোধ গঠন করতে হবে। অপরাধীকে অবশ্যই যথাযথ শাস্তি প্রদান করতে হবে।
ধর্ষণের অভিযোগে অভিযুক্ত ধর্ষকদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি প্রদান করলে শত শত ধর্ষণের কবল থেকে সমাজ রক্ষা পাবে। আমরা শৃঙ্খলায়িত জীবনের স্বপ্ন দেখি, যেখানে পারিবারিক বন্ধন সুদৃঢ় থাকবে এবং সমাজবদ্ধ নারী-পুরুষ একে অপরের প্রতি আস্থা-বিশ্বাস স্থাপনের মাধ্যমে সহাবস্থানের ভরসা পাবে।
বিবাহ প্রথা ও পারিবারিক বন্ধনের মাধ্যমে জৈবিক চাহিদা মেটানোর পদ্ধতির সুদিন চলছিল, যা সমাজের জন্য অবশ্যই কল্যাণকর। এখন যদি আবারও কোনো মহল সমাজকে দুর্দিনের দিকে ছুঁড়ে ফেলতে চায় তবে ঐক্যবদ্ধ প্রচেষ্টায় তাদের দমন করতে হবে এবং সমাজিক শৃঙ্খলা অটুট রাখতে হবে। পাশ্চাত্যে নয় বরং আমাদের দৃষ্টিভঙ্গি প্রসারিত হোক প্রগতিকেন্দ্রিক সভ্যতার আলোতে।
লেখক পরিচিতি : রাজু আহমেদ। কলামিস্ট। facebook.com/raju69mathbaria/
চাঁদপুর টাইমস : এমআরআর/২০১৫
চাঁদপুর টাইমস’র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।