জাতীয়

২৪ টাকার পেঁয়াজ বন্দর পার হলেই ৭৫ টাকা

সেপ্টেম্বরে ভারত থেকে পেঁয়াজ আমদানি করা হয়েছে কেজিপ্রতি ২৪ টাকা দরে। আর হিলি স্থলবন্দরে আমদানি করা পেঁয়াজ পাইকারি বিক্রি হয়েছে ৪৫ থেকে ৫৫ টাকা দরে।

হিলি থেকে ঢাকায় এসে খুচরা বাজারে সেই পেঁয়াজের দাম উঠেছে ৭০ থেকে ৭৫ টাকা কেজি। অর্থাৎ আমদানির পর ভোক্তা পর্যন্ত পৌঁছতে প্রতি কেজি পেঁয়াজের দাম বাড়ছে ৪৫ থেকে ৫০ টাকা পর্যন্ত।

বাংলাদেশ ব্যাংক ও জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের তথ্যানুযায়ী, গত সেপ্টেম্বরে ৫৯ হাজার ৭২২ টন পেঁয়াজ আমদানির জন্য ঋণপত্র (এলসি) খুলেছেন ব্যবসায়ীরা। একই সময় ঋণপত্র নিষ্পত্তি হয়েছে বা আমদানি হয়েছে ১৮ হাজার ৯৭২ টন। আমদানি হওয়া পেঁয়াজের প্রতি কেজির এলসি মূল্য ছিল ২৪ টাকা।

সরকারি বিক্রয় সংস্থা ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) তথ্যানুযায়ী, গতকাল সোমবার রাজধানীর বাজারে প্রতি কেজি আমদানি করা পেঁয়াজের মূল্য ছিল ৬০ থেকে ৭০ টাকা।

ঢাকার খুচরা বাজারগুলোতে খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে, আমদানি করা ভারতীয় পেঁয়াজের দাম কেজিতে ৭০ থেকে ৭৫ টাকা পর্যন্ত উঠেছে। কারওয়ান বাজারে প্রতি কেজি ৬০ থেকে ৬৫ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।

টিসিবির তথ্যানুযায়ী, ঢাকার বাজারে দেশি পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে কেজিপ্রতি ৮০ থেকে ৯০ টাকা দরে। যদিও ঢাকার খুচরা বাজারগুলো ঘুরে দেশি পেঁয়াজ কেজিপ্রতি ৯৫ টাকায়ও বিক্রি হতে দেখা গেছে।

বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব বেগম শামিমা ইয়াসমিনের সভাপতিত্বে গতকাল দ্রব্যমূল্য নিয়ে আন্ত মন্ত্রণালয় বৈঠক হয়েছে। সেখানে পেঁয়াজের আমদানি মূল্যের সঙ্গে বাজার মূল্যের বিপুল ফারাক নিয়ে বিস্তর আলোচনা হয়েছে। পেঁয়াজসহ অন্যান্য নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের বাজার মনিটরিং আরো জোরদার করার সিদ্ধান্ত হয়েছে বলে কালের কণ্ঠকে জানিয়েছেন বৈঠকে উপস্থিত একজন কর্মকর্তা।

গতকালের বৈঠকে উপস্থাপন করা কার্যপত্রে বলা হয়েছে, ‘কিছু কিছু পণ্যের দাম বেপরোয়া গতিতে বেড়ে চলেছে। তার মধ্যে পেঁয়াজ অন্যতম। আন্তর্জাতিক বাজার বিশ্লেষণে দেখা যায়, গত সপ্তাহে আন্তর্জাতিক বাজারে প্রতি কেজি পেঁয়াজের মূল্য ছিল প্রায় ২২ টাকা। আর দেশীয় বাজারে টিসিবির সূত্র মতে পেঁয়াজ কেজিপ্রতি বিক্রি হচ্ছে প্রায় ৫৮-৭০ টাকায়, যা আমদানি মূল্যের চেয়ে অনেক বেশি। ’

ভারত থেকে আমদানি করা পেঁয়াজের বেশির ভাগই আসে হিলি স্থলবন্দর দিয়ে। ওই বন্দরের আমদানি-রপ্তানিকারক গ্রুপের সভাপতি হারুন অর রশীদ গতকাল কালের কণ্ঠকে বলেন, হিলি স্থলবন্দরে ভারত থেকে আমদানি করা প্রতি কেজি পেঁয়াজ সোমবার (গতকাল) পাইকারি বিক্রি হয়েছে ৪৭ থেকে ৪৯ টাকা দরে। গত শনিবার হিলি স্থলবন্দরে পেঁয়াজের পাইকারি দর ছিল ৫৫ টাকা কেজি। গত সপ্তাহে এ বন্দরে ৪০ থেকে ৪২ টাকা কেজি দরে ভারতীয় পেঁয়াজ পাইকারি বিক্রি হয়েছে।

২৪ টাকা দরে আমদানি করা পেঁয়াজ স্থলবন্দরে আসার পর তার পাইকারি মূল্য ৪০ থেকে ৫০ টাকা হওয়ার কারণ জানতে চাইলে হারুন অর রশীদ বলেন, ‘আমরা এলসি খোলার পর পেঁয়াজ আসতে আসতে ভারতের বাজারে দাম বেড়ে যায়। প্রতি টন ৪০০ ডলার দরে এলসি খোলার পর ৪৫০ ডলার মূল্য পরিশোধ করতে হয়েছে। এখন আমরা ৫০০ থেকে ৫৫০ ডলারে এলসি খুলছি। এতে প্রতি কেজির আমদানি মূল্য ৪৫ টাকা পড়ে যাচ্ছে। বাংলাদেশ ব্যাংক ও এনবিআর যদি বলে থাকে যে ২৪ টাকা দরে পেঁয়াজ আমদানি করা হচ্ছে, তাহলে তা ঠিক না।

হিলি স্থলবন্দর থেকে ঢাকাসহ সারা দেশের খুচরা বাজারে পৌঁছতেই পেঁয়াজের দাম ৭০-৭৫ টাকা হওয়ার কারণ জানতে চাইলে হারুন অর রশীদ বলেন, ঢাকায় আমদানি করা পেঁয়াজ ৭০-৭৫ টাকায় বিক্রি হলে তা এক ধরনের ডাকাতি। আমদানিকারক থেকে ভোক্তা পর্যন্ত পৌঁছতে প্রতি কেজি পেঁয়াজের দাম ২৫-৩০ টাকা বেড়ে যাচ্ছে। এটি কোনোমতেই মেনে নেওয়া যায় না।

উদাহরণ দিয়ে হারুন অর রশীদ বলেন, হিলি স্থলবন্দরে আমদানিকারকরা প্রতি কেজি মোটা চাল পাইকারি বিক্রি করছেন ৩৭ টাকা দরে। ওই চাল ঢাকার খুচরা বাজারে বিক্রি হচ্ছে সর্বোচ্চ ৪৫ টাকায়। এ ক্ষেত্রে প্রতি কেজিতে চালের দাম বাড়ছে আট টাকা। তাহলে হিলি বন্দর থেকে খুচরা বাজার পর্যন্ত প্রতি কেজি পেঁয়াজের দাম এত বাড়ার তো কোনো কারণ নেই। পাইকারি ব্যবসায়ী থেকে খুচরা ব্যবসায়ী প্রত্যেকে প্রতি কেজি পেঁয়াজে প্রায় ৮-১০ টাকা করে মুনাফা করার কারণেই দাম এত বাড়ছে।

বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্যানুযায়ী, বন্যার কারণে এবার ভারত ও বাংলাদেশে পেঁয়াজ চাষে বিলম্ব হয়েছে। ফলে অন্য বছর এই সময় বাজারে দেশি ও ভারতীয় নতুন পেঁয়াজ পাওয়া গেলেও এবার এখনো তা সম্ভব হচ্ছে না। তবে ভারতের বেঙ্গালুরুতে নতুন পেঁয়াজ ইতিমধ্যে ওঠা শুরু হয়েছে। সে পেঁয়াজ বাংলাদেশেও ঢুকছে। ফলে শিগগির পেঁয়াজের দর কমবে বলে আশা করছেন বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে হারুন অর রশীদ বলেন, বেঙ্গালুরু থেকে নতুন পেঁয়াজ বাংলাদেশে আসতে শুরু করেছে। আগের চেয়ে গত কয়েক দিনে ভারত থেকে অনেক বেশি পেঁয়াজের ট্রাক ঢুকছে হিলি স্থলবন্দরে। ফলে স্থলবন্দরে শনিবার যেখানে পেঁয়াজের পাইকারি দর ৫৫ টাকা ছিল, সোমবার তা কমে ৪৭ থেকে ৪৯ টাকায় নেমেছে। আশা করছি, শিগগিরই পেঁয়াজের দর আরো কমবে।

বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের বৈঠকে পেঁয়াজ ছাড়াও রসুন, ভোজ্য তেল ও লবণের বাজার দর নিয়ে আলোচনা শেষে বাজার নিয়ন্ত্রণ কার্যক্রম জোরদার করার সিদ্ধান্ত হয়েছে।

বাজারে খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে, রসুনের বাজার দরও আমদানি মূল্যের তুলনায় অনেক বেশি। বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্যানুযায়ী, সেপ্টেম্বরে এক হাজার ৯২২ টন রসুন আমদানির ঋণপত্র খোলা হয়েছে। এই সময় ঋণপত্র নিষ্পত্তি হয়েছে বা রসুন আমদানি হয়েছে চার হাজার ৭১৪ টন। আমদানি হওয়া রসুনের এলসি মূল্য ৫৮ টাকা। টিসিবির গতকালের তথ্যানুযায়ী, ঢাকার বাজারে আমদানি করা রসুনের কেজি ৮০ থেকে ১০০ টাকা।

গতকালের বৈঠকে উপস্থিত কর্মকর্তাদের দেওয়া তথ্যানুযায়ী, দেশের বাজারে সয়াবিন তেলের সরবরাহ স্বাভাবিক থাকলেও পণ্যটির বাজার দর আন্তর্জাতিক দরের তুলনায় অনেক বেশি। টিসিবির তথ্যানুযায়ী, সোমবার প্রতি কেজি খোলা সয়াবিনের দর ছিল ৮৬ থেকে ৮৮ টাকা, আর বোতলজাত সয়াবিনের দর ১০৪ থেকে ১০৯ টাকা। আন্তর্জাতিক বাজার দরের সঙ্গে দেশের বাজারে সয়াবিন তেলের দরের ফারাক নির্ণয় করে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে প্রতিবেদন জমা দিতে ট্যারিফ কমিশনকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। শাকসবজি ও মসলার পাইকারি বাজার মনিটরিং করে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরকে।

নিউজ ডেস্ক
: আপডেট, বাংলাদেশ ৬:০৩ এএম, ৩১ অক্টোবর, ২০১৭ মঙ্গলবার
ডিএইচ

Share