Tuesday, June 16, 2015 8:13:04 PM
আবদুল গনি:
“দিন বদলের বাংলাদেশ, ফল বৃক্ষে ভরবো দেশ” প্রতিপাদ্য নিয়ে কৃষি বিভাগের উদ্যোগে ১৬ জুন হতে ৩০ জুন পর্যন্ত দেশব্যাপী ফলদ বৃক্ষ রোপণ পক্ষ উদযাপিত হচ্ছে । প্রতি বছরের জুন মাসে এ পক্ষের আয়োজন করা হয়।
সেই আদিম কাল থেকে বৃক্ষ ও বৃক্ষের ফল নানাভাবে মানব সভ্যতার উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে আসছে। বৃক্ষ শুধু খাদ্য উৎপাদনই করে না-মানুষের জীবনের প্রধান বেঁচে থাকার যে উপাদান অক্সিজেন দিয়ে আমাদেরকে বাঁচিয়ে রাখছে। এরচেয়ে আর বেশি অবদান আর কোন কিছু হতে পারে বলে মনে করি না।
এছাড়া ও প্রকৃতির ভারসাম্য রক্ষায়, ঝড়-ঝঞ্জা, ঘূর্ণিঝড়, জলোচ্ছ্বাস, বন্যা, মহামারী, মাটির ক্ষয়রোধ, ঔষধ, গৃহ নির্মাণসামগ্রী, জ্বালানী, ছায়া, মৌসুমি বৃষ্টি প্রভৃতি ক্ষেত্রে মানুষের জন্য গাছ অসামান্য অবদান রেখে আসছে । অর্থনৈতিকভাবে গাছ মানুষকে সহায়তা দিয়ে যাচ্ছে খাদ্য উৎপাদনে প্রাকৃতিক বিষয়গুলোর মধ্যে সবচাইতে গুরুত্বপূর্ণ হলো ফল। যা পুষ্টিকর, সুস্বাদু ও শক্তিবর্ধক।
প্রাকৃতিকভাবে আমাদের দেশের মাটি ও জলবায়ু ফল চাষাবাদের উপযোগী। এ দেশে ১৩০ টির মতো ফল রয়েছে। এসব ফলে ভিটামিন ও খনিজ লবণের প্রাধান্য রয়েছে। যা আমাদের দেহের শক্তি যোগায়। কৃষি বিভাগের তথ্য মতে, ২০১৪ -১৫ অর্থ বছরে ১০১ লাখ মেট্রিক টন দেশীয় ফল উৎপাদনের সম্ভবনা রয়েছে। এসব ফলের প্রায় ৫৪ ভাগ আসে বৈশাখ মাস থেকে শ্রাবণ মাস পর্যন্ত । পুষ্টিবিজ্ঞানীদের মতে, একজন পূর্ণবয়স্ক মানুষের দৈনিক ২০০ গ্রাম ফল খাওয়া প্রয়োজন। অথচ এর বিপরীতে আমরা গ্রহণ করতে পারি গড়ে ৭৭ গ্রাম। যার ফলে দেশের ৮৮% লোক ভিটামিন-এ, ৮৭% ভিটামিন-সি, ৯৬% বাইরোফ্লোভিন এবং ৯৩% লোক ক্যালসিয়ামের অভাবে প্রতিনিয়ত বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হচ্ছে। এছাড়াও দেশের ৭০% লোকই রক্তস্বল্পতায় ভুগছে। এদের প্রধান ভুক্তভোগী হচ্ছে শিশু, মহিলা, বৃদ্ধ ও বৃদ্ধা।
আমাদের উৎপাদিত ফল খেলে ওইসব সমস্যাগুলোকে পরিত্রাণ পাওয়ার সম্ভব। আমাদের দেশের ১ কোটি ৯৪ লাখ বসত বাড়িতে সাড়ে ৪ লাখ হেক্টর জমিকে আরোও পরিকল্পিতভাবে দেশীয় ফলের বাগান তৈরি করে আমাদের পুষ্টির চাহিদা মেটাতে সহায়তা দেবে। আমাদের দেশে সরকারি, বেসরকারি, অফিস-আদালত, স্কুল, কলেজ, মাদ্রাসা, মসজিদ-মন্দির, গীর্জা, এতিমখানা, রাস্তা বা সড়কের দু’পাশে, গোরস্থানের আশপাশে, নদীর তীর ও চরাঞ্চলগুলোতে, বসতবাড়ির ছাদে যা অব্যবহৃত জমি রয়েছে ওই সকল জমিতে দেশীয় ফলের আবাদের আওতায় আনা গেলে দেশের পুষ্টি চাহিদা পূরণে ব্যাপক উন্নতি হবে এবং চাষাবাদে অর্থনৈতিক সমৃদ্ধিও আসবে।
ভৌগলিক অবস্থাজনিত কারণে আমরা নানাভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছি। বিশেষভাবে নদী ও সাগর উপকূলীয় জেলাগুলোতে পরিবেশ বান্ধব ফলদ গাছ ও অন্যান্য গাছ রোপণ করা যায়। এগুলোর মধ্যে রয়েছে নারকেল, তাল, খেজুর, কাঁঠাল, আম, লিচু, জাম ও বেল প্রভৃতি । এসব গাছ লাগালে শুধু পুষ্টির চাহিদাই মিটবে না বরং ওইসব গাছের ফল বিদেশে রপ্তানি করে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন সম্ভব। সারিবদ্ধভাবে ও পরিকল্পিত উপায়ে এ সব ফলের গাছ রোপণ করলে দৃষ্টিনন্দন পরিবেশ সৃষ্টি হবে এবং আমাদের জীবন সুন্দর ও সাবলীল হবে। পাশাপাশি বিভিন্ন রোগ বালাই থেকে রক্ষা পেয়ে সুষ্ঠ সবল দেহ নিয়ে আমরা বেঁচে থাকতে পারবো।
তাই প্রতি বছরই অত্যন্ত জাঁকঝমকভাবে এ দিবসটি পালিত হয়ে আসছে। দেশের প্রতিটি উপজেলায় এখন সরকারি ও বেসরকারিভাবে নার্সারী রয়েছে। এসব নার্সারী গুলোকে ঋণ দানে সহায়তা করলে অধিক হারে বৃক্ষের চারা উৎপাদন করে সবুজ বৃক্ষে দেশ ছেয়ে যাবে।
অতীতের চেয়ে বর্তমানে মানুষ গাছের প্রতি গুরুত্ব দিচ্ছে এবং পরিচর্যার ক্ষেত্রেও সচেতন রয়েছে। ফলদ বৃক্ষ পক্ষের মাধ্যমে কৃষি বিভাগের আরো উদ্যোগ গ্রহণ আবশ্যক। কেননা প্রচার-প্রচারণার জন্য সাধারণ মানুষের ভেতর বৃক্ষ রোপণের উদ্যোগ সৃষ্টি হয়েছে। জেলা ও উপজেলার আনাচে কানাচে গড়ে উঠা স’মিল গুলোর রসদ জোগানের জন্য ব্যাপক হারে গাছ কর্তন করা হচ্ছে। এক্ষেত্রে অন্তত: ফলদ বৃক্ষ যেন কর্তন না করে এ বিষয়ে সরকারি নীতিমালা প্রয়োজন। একটি দেশের নির্মল পরিবেশ ও প্রাকৃতিক ভারসাম্য রক্ষায় ২৫ % বনভূমি প্রয়োজন। অথচ আমাদের দেশে এর হার মাত্র ১৪% । দ্রুত নগরায়ন, পরিবারে মধ্যে ভাঙ্গন, পারিবারিক কলহ ও উন্নত জীবন সোপানের জন্য নিজদের বাগান বাড়ি পরিষ্কার করে নতুন নতুন ভবন নির্মাণ করা হচ্ছে। যার ফলে প্রয়োজনীয় সংখ্যক গাছ রোপণ করার জায়গাও কমে যাচ্ছে। এক্ষেত্রেও কৃষি বিভাগকে নতুন ভাবে চিন্তাভাবনা করে দিক নির্দেশনা দেওয়া আজ সময়ের দাবিতে পরিণত হয়েছে।
চাঁদপুর টাইমস : প্রতিনিধি/ডিএইচ/২০১৫
চাঁদপুর টাইমস’র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
Chandpur Times | চাঁদপুর টাইমস Top Newspaper in Chandpur