ফরিদগঞ্জ স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে যুবতীকে যৌন হয়রানির অভিযোগ

চাঁদপুরের ফরিদগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে সেবা নিতে গিয়ে যৌন হয়রানির স্বীকার হলেন ২০ বছরের এক যুবতী। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের অবহেলায় আর অব্যবস্থাপনার জন্য এমন ন্যাক্কারজনক ঘটনা ঘটেছে বলে মনে করছেন সেবা নিতে আসা রোগী ও স্থানীয়রা।

জানা যায়, গত ১৯ মে বুধবার দিবাগত রাতে শারীরিক অসুস্থতা দেখিয়ে ভর্তি হন ২০ বছরের ঐ যুবতী।

প্রত্যক্ষদর্শী আয়েশা আক্তার ও ফয়সাল বলেন, যৌন হয়রানির স্বীকার মেয়েটির সাথে তাদের কথা হয়েছে। তারা বলেন- রাত ১২টার দিকে মেয়েটি হাসপাতালে গেলে ঐ যুবকটি তাকে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেয়। মেয়েটি ভেবেছে সে হাসপাতালেরই লোক। লোকটি মেয়ের সাথে এমন ব্যবহার করেছে যা দেখে সবার মনে হয়েছে তার স্বামী অথবা আত্মীয়-স্বজন।

যুবকটি রাত গভীর হলে রুমের লাইট এবং দরজা বন্ধ করে দেন। সে সময় তারাসহ মহিলা ওয়ার্ডে মাত্র ৩ জন রোগী ছিলো। আনুমানিক রাত ৪টার দিকে অচেতন থাকা অবস্থায় যুবতীকে যৌন হয়রানি করে। মেয়েটির চেতনা ফিরে আসার পর তার ডাক চিৎকারে অন্যরা যখন ঘুম থেকে জেগে যায় তখন যুবকটি পালিয়ে যায়। যুবতীটি তখন ফরিদগঞ্জ থানায় ফোন দিয়ে বিষয়টি পুলিশ দেয়। ধারণা করা হচ্ছে মেয়েটিকে চেতনানাশক ট্যাবলেট খাওয়ানো হয়েছে।

অনেকের ধারণা হাসপাতালের নার্স অথবা ওয়ার্ডবয়ের সহযোগিতায় এমন কাজ হতে পারে। গভীর রাতে মহিলা ওয়ার্ডে পুরুষ লোক থাকার বিধিনিষেধ থাকলেও কর্তব্যরত নার্স অথবা ওয়ার্ডবয়ের অবহেলায় যুবকটি সেখানে রাত কাটায়। সে রাতে দায়িত্বরত ওয়ার্ডবয় ছিলেন মনসুর আহম্মেদ এবং নার্স ছিলেন উম্মে আতিয়া।

হাসপাতালে গিয়ে এ দুজনকে পাওয়া যায়নি। মোবাইল ফোনে নার্স উম্মে আতিয়া ঘটনার কথা স্বীকার করে বলেন, পুরুষটি মেয়েটির সাথে এমন আচরণ করেছে তাতে সন্দেহকরার কোন কারণ ছিলো না।’

স্থানীয়রা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ‘স্বাস্থ্য সেবা নিতে এসে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ধর্ষণ কিংবা যৌন হয়রানির স্বীকার হতে হয়, এর চেয়ে লজ্জার বিষয় আর কী হতে পারে? এখানে কোনো সিকিউরিটি নেই। দীর্ঘদিন ধরে অব্যবস্থাপনায় চলছে ফরিদগঞ্জ হাসপাতাল।

এ বিষয়ে আবাসিক মেডিকেল অফিসার মো.কামরুল হাসান বলেন, ‘ভিডিও ফুটেজ দেখে চিকিৎসা সেবা নিতে আসা রোগীকে যৌন হয়রানিকরা যুবকে চিহ্নিত করা হয়েছে। যৌন হয়রানির স্বীকার যুবতীর কোনো অভিযোগ না থাকায় অভিযোগকারীর বিরুদ্ধে আমরা কোনো ব্যবস্থা নিতে পারিনি।

ফরিদগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ মোহাম্মদ শহীদ হোসেন বলেন, ‘ওই রাতে মেডিকেল থেকে যৌন হয়রানির কথা বলে মেয়েটি আমাদের ফোন করে বিষটি জানায়। খবর পেয়ে আমাদের ফোর্স মেডিকেলে গিয়ে খোঁজ খবর নেয়ে। কিন্তু কোনো পক্ষ থেকে লিখিত অভিযোগ না থাকায় আমরা কোন ধরনের ব্যবস্থা নিতে পারিনি। অভিযোগ পেলে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।

এ বিষয়ে উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা মো. আশরাফ আহম্মেদ চৌধুরী বলেন, ‘এ ধরনের ঘটনা হাসপাতালে ঘটেনি। তবে এ ঘটনাটি শুনেছি। পরদিন মেয়েটি চলে যেতে চাইলে আমরা মেয়েটিকে যেতে দেইনি। পরবর্তীতে মেয়েটি যেহেতু অভিযোগ দেয়নি, তাই তাকে চলে যেতে দেই।’

পুলিশ ভিডিও ফুটেজটি দেখেছে লোকটিও চিহ্নিত ।’ অপর এক প্রশ্নের জবাবে বলেন, ‘হ্যাঁ, আমরা দায় এড়াতে পারি না। তবে পুরুষ আত্মীয় স্বজন যদি জোর করে থাকতে চায়, আমরা কী করবো?’

এদিকে তিনি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের বাস ভবনে থাকার কথা থাকলেও তিনি চাঁদপুরে থাকেন।

সিভিল সার্জন সাখাওয়াত জানান, ‘বিষয়টি আমি জানি না। জেনে তারপর বলতে পারবো।’

অপর এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন,‘টিএসও মাঝে মাঝে চাঁদপুর থাকেন সেটা আমি জানি। রুমটি সংস্কার করে সেখানে থাকার ব্যবস্থা করছি।’

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, যৌন হয়রানির স্বীকার যুবতি সামাজিক লোক লজ্জার ভয়ে নিজেকে আড়াল করে রাখে।

প্রতিবেদকঃ শিমুল হাছান,২২ মে ২০২১

Share