এককালের খরস্রোতা ডাকাতিয়া নদী এখন মৃত প্রায়। নির্বোধ মানুষের অবৈধ দখল আর দূষণে ক্রমেই ছোট হচ্ছে ডাকাতিয়া নদী।
নদী রক্ষায় জনপ্রতিনিধি ও সংশ্লিষ্টরা মাঝে মধ্যে আশারবাণী শোনালেও কার্যত কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছে না। এমনকি স্বয়ং ফরিদগঞ্জ পৌরসভা বাজারের ময়লা ফেলে ভরাট করছে ডাকাতিয়া নদী।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, ফরিদগঞ্জ পৌর বাজারের সমস্ত বর্জ্য কেরোয়া ব্রিজ সংলগ্ন ডাকাতিয়া নদীতে ফেলা হচ্ছে। নদীর ওই স্থানটির দিকে তাকালে নদীকে বড়ই অসহায় মনে হয়। ময়লা-আবর্জনা ও পাড়ের অবৈধ স্থাপনা নদীকে গলাটিপে মেরে ফেলতে চাইছে। এভাবে চলতে থাকলে অচিরেই নদীর অস্তিত্ব বিলিন হয়ে যাবে বলে মনে করেন সচেতন জনগণ।
স্থানীয়রা জানায়, ফরিদগঞ্জ পৌর সভার জন্মলগ্ন থেকেই কোরোয়া ব্রিজের দু’পাড়ে বর্জ্য ফেলছে বাজার ইজারাদাররা। নদীর দক্ষিণ পাড়ে ব্রিজ সংলগ্ন ২৫-৩০ ফুট জায়গা এরইমধ্যে ভরাট হয়ে গেছে ওই বর্জ্য।ে এ ক্ষেত্রে পৌর কর্তৃপক্ষ নিরব ভূমিকা পালন করেছে। এ অবস্থায় যেমন নদী দখল ও দূষিত হচ্ছে, তেমনি দূষিত হচ্ছে পরিবেশও। কেরোয়া ব্রিজ সংলগ্ন এলাকার বাতাস সবর্দাই দুর্গন্ধযুক্ত থাকে। পথচারীদের নাকে কাপড় দিয়ে এ পথ পাড়ি দিতে হয়। গণমাধ্যমে একাধিক সচিত্র প্রতিবেদন প্রকাশিত হলেও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের টনক নড়েনি।
সূত্র জানায়, মৎস্য ও জলজ প্রাণির জীবন ধারণের জন্য পানিতে দ্রবীভূত অক্সিজেন প্রতি লিটারে ৫ মিলিগ্রাম বা এর ওপরে থাকা প্রয়োজন।
ফরিদগঞ্জের বালিথুবা ইউনিয়নের টুগবী এলাকায় ডাকাতিয়ার পানির দূষণমাত্রা পরীক্ষা ও পর্যবেক্ষণ করে জানা যায়, এখানে পানিতে পিএইচ এর পরিমাণ ৭.২ এবং অক্সিজেনের পরিমাণ ৬.৫। বিশেষজ্ঞদের অভিমত, ফরিদগঞ্জ বাজার সংলগ্ন নদীতে পরিমাপ করলে এর ভিন্ন চিত্র পাওয়া যেতো।
এ বিষয়ে উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা মো.আব্দুল আহাদ লাজু বলেন, ফরিদগঞ্জ পৌর সদরের অপরিশোধিত ও কসাইখানার বর্জ্য ডাকাতিয়া নদীতে ফেলা হচ্ছে। বাজার ও কসাইখানার বর্জ্য নদীতে পড়ছে। এসব বর্জ্যই নদীতে অক্সিজেন কমে যাওয়ার জন্য অনেকাংশে দায়ী।
তিনি আরো বলেন, এ বজ্যের কারণেই পানি দূষিত হয়। আর নদীর মাছ নানা রোগে আক্রান্ত হয়। জনসংখ্যার আধিক্য, অবকাঠামোগত উন্নয়ন, অপরিকল্পিত বর্জ্য, ব্যবস্থাপনা, পরিবেশ বিষয়ে অসচেতনতা, অপর্যাপ্ত পানি প্রবাহসহ জলবায়ু পরিবর্তনজনিত কারণে ডাকাতিয়া নদীর পানি দূষণের পর্যায়ে পৌঁছেছে।
ফরিদগঞ্জ পৌর সভার মেয়র মো. মাহফুজুল হক চাঁদপুর টাইমসকে বলেন, ‘কেরোয়া ব্রিজের পাশে ডাকাতিয়া নদীতে ময়লা না ফেলার জন্য নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। এখানে ‘ময়লা-আবর্জনা ফেলা নিষেধ’ লেখা সম্বলিত সাইনবোর্ড ঝুলিয়ে দেওয়ার জন্যও পৌর সচিবকে নির্দেশনা দিয়েছি। এরপরও ওখানে কেউ যদি বর্জ্য ফেলে তার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
সকলের সহযোগিতা নিয়ে ডাকাতিয়া নদী রক্ষায় সকল ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে বলে জানান তিনি।
এসর্ম্পকে ফরিদগঞ্জ উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) মো. ইমারন হোসেন চাঁদপুর টাইমসকে বলেন, ‘ডাকাতিয়া নদী ভরাট ও দূষণ বন্ধে অভিযান পরিচালনা করা হবে। সে ক্ষেত্রে সকলের আন্তরিক সহযোগীতা প্রয়োজন।
ফরিদগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এ.এইচ.এম মাহাফুজুর রহমান চাঁদপুর টাইমসকে বলেন, ‘কেরোয়া ব্রিজ সংলগ্ন নদীতে ময়লা-আর্বজনা ফেলে ভরাট ও দূষনের বিরুদ্ধে শীঘ্রই ব্যবস্থার নেয়া হবে।’
প্রতিবেদক- আতাউর রহমান সোহাগ